ইউএসএআইডির ওয়েবসাইট বন্ধ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৯:১৪:৩৪ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আলোচনার শীর্ষে রয়েছে মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি (ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট)। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেট আর্কাইভের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার ভোর ৩টার কিছুক্ষণ পরে সংস্থাটির ওয়েবসাইট ডাউন হয়ে যায়। বিভিন্ন ব্রাউজারে “এই সাইটে পৌঁছানো যাবে না” বার্তা প্রদর্শিত হচ্ছে। এমনকি ইউএসএআইডির অফিসিয়াল এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টও মুছে ফেলা হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে মার্কিন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক রোববার এক্স-এ ইউএসএআইডিকে “একটি অপরাধমূলক সংস্থা” বলে মন্তব্য করেন এবং বলেন, “এটি বন্ধের সময় হয়ে এসেছে।” অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সির (ডিওজিই) কর্মীরা শনিবার ইউএসএআইডির গোপন নথিপত্রে প্রবেশের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এর পরপরই ট্রাম্প প্রশাসন সংস্থাটির দুই নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে।
বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নকারী ইউএসএআইডি ২০২৩ সালে বিভিন্ন কর্মসূচিতে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছিল। তবে বর্তমানে সংস্থাটির সম্পর্কে অনলাইনে খুবই সামান্য তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। স্টেট ডিপার্টমেন্টের একটি ওয়েবপৃষ্ঠায় সীমিত তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে, যা সর্বশেষ ২৭ জানুয়ারি আর্কাইভ করা হয়।
ইন্টারনেট আর্কাইভের তথ্যমতে, ইউএসএআইডির ওয়েবসাইটের তথ্যের পরিমাণ নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে। যেখানে আগে সংস্থাটির মানবিক সহায়তা, বিশ্ব স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সংঘাত প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিশদ প্রতিবেদন ছিল, এখন সেখানে মাত্র কয়েকটি আইটেম দেখা যাচ্ছে।
স্টেট ডিপার্টমেন্ট এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “মার্কিন বৈদেশিক সহায়তার পুনর্মূল্যায়ন ও পুনর্গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির নির্বাহী আদেশ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।” উল্লেখ্য, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই এই নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন, যার মাধ্যমে বিদেশি সহায়তা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। তিনি দাবি করেছিলেন, এসব সহায়তা “বিশ্ব শান্তিকে অস্থিতিশীল করতে কাজ করে।”
এই পদক্ষেপের ফলে ইউএসএআইডির ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। মানবিক সহায়তাকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে যে, ইউএসএআইডিকে স্টেট ডিপার্টমেন্টের অধীনে একীভূত করা হতে পারে অথবা এটি সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত করা হতে পারে।
রিফিউজিস ইন্টারন্যাশনালের সভাপতি জেরেমি কোনিন্ডিক এই উদ্যোগকে “ইউএসএআইডিকে সম্পূর্ণরূপে ভেঙে ফেলার প্রচেষ্টা” বলে মন্তব্য করেছেন। ওবামা প্রশাসনে দুর্যোগ ত্রাণ কার্যক্রম এবং বাইডেন প্রশাসনে ইউএসএআইডির কোভিড ও এমপক্স মোকাবিলা কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেওয়া কোনিন্ডিক বলেন, “সংস্থাটি বিলুপ্ত করার চেষ্টা চলছে। কোনো পরিকল্পনা বা যৌক্তিক ব্যাখ্যা ছাড়াই সবকিছু সরিয়ে ফেলা হচ্ছে, যেন জনগণের সামনে কোনো ব্যাখ্যা দিতে না হয়।”
ইউএসএআইডির বিশ্ব স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক সহকারী প্রশাসক ড. অতুল গাওয়ান্দে ব্লুস্কাইতে লিখেছেন, “সংস্থাটি বেআইনি শাটডাউন, তথ্য মুছে ফেলা এবং কার্যক্রম স্থগিতের শিকার হয়েছে। এটি শুধু ইউএসএআইডির জীবন রক্ষাকারী কার্যক্রম বন্ধ করছে না, বরং অন্যান্য সংস্থাগুলোকেও বিলুপ্ত করার পথ তৈরি করছে।”
ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা এই উদ্যোগের কঠোর সমালোচনা করেছেন। সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা চাক শুমার ব্লুস্কাইতে লিখেছেন, “ইউএসএআইডিকে বিলুপ্ত করা বেআইনি এবং আমাদের জাতীয় স্বার্থবিরোধী।” ইউএসএআইডির কাঠামোগত পরিবর্তন বা বিলুপ্তি আইনি সীমাবদ্ধতার মধ্যে রয়েছে। সংস্থাটি ১৯৬১ সালে প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডির নির্বাহী আদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং ১৯৯৮ সালে কংগ্রেস একে একটি স্বাধীন সংস্থা হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়।
কোনিন্ডিক বলেন, “একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ইউএসএআইডিকে বিলুপ্ত করা সম্ভব নয়। যদি একে স্টেট ডিপার্টমেন্টের অধীনে আনা হয়, তাহলে কংগ্রেসের অনুমোদন লাগবে।” অতীতে ইউএসএআইডি সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম ও সিনেটর মিচ ম্যাককনেলের মতো প্রভাবশালী রিপাবলিকান নেতাদের সমর্থন পেয়েছে। তাই সংস্থাটির ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও বিতর্ক চলমান রয়েছে।