ওসমানীনগরে অযত্নে বেড়ে উঠা ফুল ‘ক্লিওমেলা সেরুলাটা’
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৬:২৩:৩৫ অপরাহ্ন
ওসমানীনগর প্রতিনিধি:
ওসমানীনগরের বিভিন্ন ইউনিয়নের হাওর খাল বিল নালার পাড়ে শুকনো মৌসুমে অযত্নে বেড়ে উঠা বেগুনি সাজে সেজেছে সুদূর দক্ষিণ-পশ্চিম আমেরিকার প্রাগৈতিহাসিক কালের বন্য এলাকার ফুল ‘ক্লিওমেলা সেরুলাটা’। এলাকার মাঠ পেরিয়ে হাওর নদী খাল কিংবা জলাশয়ের তীরে বোরো জাতীয় ধানী জমির আইলে অথবা কোথাও কোথাও কৃষি খামারের মধ্যে বেগুনি রঙে রঙ্গিন হয়ে ফুটে আছে সাজানো এ ফুলের বাগান। মাঝে মধ্যে দু’একটি সাদা ফুলও দেখতে পাওয়া যায়। দূর থেকে দেখে মনে হবে যেন কোন খামারি নিজ হাতে রোপণ করে অতি যত্নে সাজিয়েছেন বাহারি ফুলের বাগানটি। ফুলের নান্দনিক দৃশ্য দেশে মুগ্ধ হন পাশ দিয়ে চলে যাওয়া পথচারি ও মাঠে কাজ করতে যাওয়া কৃষকসহ লোকজন।
উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে ক্লিওমেলা সেরুলাটা দক্ষিণ-পশ্চিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে খাদ্য, ওষুধ এবং রঞ্জক হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং এটি এখনও ব্যবহৃত খুব কম বন্য খাবারের মধ্যে একটি খাবার। খাদ্য হিসাবে এর বীজ কাচা বা রান্না করে খাওয়া যেতে পারে, বা শুকনো এবং মাশ হিসাবে ব্যবহার করার জন্য খাবারের মধ্যে গ্রাস করা যেতে পারে। এটি ক্লিওমেলা গুণের একটি বার্ষিক উদ্ভিদ। বিভিন্ন প্রজাতির পোকামাকড়, মৌমাছি এর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে কাছাকাছি উদ্ভিদের পরাগায়নে সাহায্য করে থাকে। দক্ষিণ কানাডা পশ্চিম ও মধ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ উদ্ভিদটি প্রায়শই খাবারের জন্য, রঙের জন্য রঞ্জক তৈরিতে এবং ঔষধের ব্যবহার হয়ে থাকে। বৈজ্ঞানিকভাবে এটি ক্লিমাসি পরিবারের অর্ন্তভূক্ত সি. সেরুলাপা প্রজাতির উদ্ভিদ।
ক্লিওমেলা সেরুলাটা একটি বার্ষিক উদ্ভিদ যা ১০-১৫০ সেমি (৪-৫৯ ইঞ্চি) লম্বা হয়, যার পাতাগুলি সর্পিলভাবে সাজানো থাকে। পাতাগুলি ত্রিপত্রবিশিষ্ট, ছোট দাঁতযুক্ত এবং তিনটি সরু পাতা থাকে, যার প্রতিটি ১-৭ সেমি (০.৫-৩ ইঞ্চি) লম্বা হয়। ফুলগুলি লালচে-বেগুনি, গোলাপী বা সাদা রঙের। ৩-৬ সেমি (১-২.৫ ইঞ্চি) লম্বা একটি ক্যাপসুল ফলের মধ্যে বেশ কয়েকটি বীজ থাকে।
বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া মাঠে ঘাটে নদী খাল বিলের পুকুরের পাড়ে অনাদরে বেড়ে উঠা এই উদ্ভিদের পাতা ফুল ও বীজ কোন কাজে লাগে না। শীতকালে এর ফুল ফোটে থাকে। ফুলের গাছ হিসেবে অফিস, বাসা বাড়ি আঙিনায় এটি রোপণ করলে সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজে লাগানো যেতো। আর এর বীজ সংরক্ষণ করে পশু পাখির খাদ্যসহ মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করলে এ উদ্ভিদটি কিছুটা উপকারে লাগতো ।
এম.সি কলেজ সিলেট এর উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ডক্টর নেছাওর মিয়া বলেন, এ উদ্ভিদটি দক্ষিণ আমেরিকা তথা আর্জেন্টিনায় জন্মানো একটি উদ্ভিদ। এটি বাংলাদেশের হাওর অঞ্চলের স্যাঁতস্যাঁতে জায়গাতে কিছুদিনের জন্য দেখা যায়। এটির বৈজ্ঞানিক জেনাসের নাম ক্লিওম, পরিবার হচ্ছে ক্লিওমেসি। একে সাধারণত স্পাইডার প্লান্ট নামেও ডাকা হয়।