আ’লীগ সংশ্লিষ্টদের স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুর
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৯:৪১:১৩ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামীলীগ সংশ্লিষ্টদের বাসভবন ও স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনার বক্তৃতা প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা এসব ঘটনা ঘটিয়েছে।
বুধবার সন্ধ্যার পর ঢাকায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বাসভবন ‘সুধাসদনে’ হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিতে বুলডোজার ব্যবহার করা হয়। তবে সরকার বলছে শেখ হাসিনার ‘সহিংস আচরণের প্রতিক্রিয়া’ ও উসকানিমূলক বক্তব্যে ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ৩২ নম্বরে ভাঙচুর।
বিশেষ করে রাজধানীর ধানম-ি-৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাড়ি ভাঙচুর করে ধ্বংসস্তূপে রূপান্তরিত করা হয়েছে। ওই ধ্বংসস্তূপ থেকে লোহার রডগুলো খুলে নেওয়া হচ্ছে।বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে এ দৃশ্য দেখা যায়। দেখা গেছে, এসকেভেটর দিয়ে দুটি ভবনের অনেক অংশ ভেঙে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই ভাঙা অংশের কনক্রিটে থাকা লোহার রড খুলে নিয়ে যাচ্ছেন লোকজন। ওই রড বের করার জন্য ইট-সিমেন্টের খ-াংশও ভেঙে ফেলছেন কেউ কেউ।
এমন এক সময়ে ছাত্র-জনতা বাড়িটি গুঁড়িয়ে দিলো, যখন জুলাই অভ্যুত্থানে হাসিনার দেশ থেকে পলায়নের ৬ মাস পূর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ঘোষণা দেয়, রাতে ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন হাসিনা। এরপরই ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ¯্রােতের মতো বেরিয়ে আসে রাস্তায়। বুলডোজারসহ রওয়ানা দেয় ধানমন্ডীর ৩২ নম্বরে।
হাসিনার ভাষণের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সংগঠনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, হাসিনাকে বক্তব্য প্রকাশের সুযোগ দেয়াকে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদ-বিরোধী জনগণের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ হিসেবে দেখি।
ঘটনার প্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা ধারণা করছি, এগুলো গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য, আগামী দিনে গণতন্ত্রের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে সেজন্য কেউ কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করতে পারেন। বিশেষ করে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ আছে তা জানার চেষ্টা করব।
অন্যদিকে জামায়াতের মুখপাত্র মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা মনে করি রাজনৈতিক বক্তব্য রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করা দরকার। কারণ একটা শক্তি বা একটা মবকে আরেকটা শক্তি দিয়ে মোকাবিলা করতে গেলে সেখানে অনাকাঙ্খিত ঘটনার সৃষ্টি হয়। অতীতে তা-ই দেখা গেছে। রাজনৈতিক সমাধান ছাড়া এই উত্তেজনা প্রশমিত হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তবে আগেরদিন বুধবার জামায়াতের আমীর ডা: শফিকুর রহমান দুটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দেন। প্রথমটিতে তিনি লিখেন, কোন উস্কানিতে পা না দিয়ে ধৈর্য ধরুন এবং প্রিয় দেশকে ভালোবাসার নমুনা প্রদর্শন করুন। এরপর দ্বিতীয়টিতে তিনি লিখেন, সার্বিক পরিস্থিতির জন্য পলাতক ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার উস্কানিই মূলত দায়ী।
সরকারের বিবৃতি :
এদিকে, এসব ঘটনাকে সরকার শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যে ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে উল্লেখ করেছে। রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ ঘটনাকে অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্খিত উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পলাতক অবস্থায় ভারতে বসে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে জনমনে গভীর ক্রোধের সৃষ্টি হয়েছে, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে সরকারের এই বিবৃতি গণমাধ্যমে দেওয়া হয়। সরকার আশা করে, ভারত যেন তার ভূখ-কে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে এমন কাজে ব্যবহৃত হতে না দেয় এবং শেখ হাসিনাকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না দেয়। অন্তর্বর্তী সরকার ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি চায় না।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ৬ মাসে ৩২ নম্বর বাড়িটিতে কোনো ধরনের আক্রমণ ও ধ্বংসযজ্ঞ হয়নি। বুধবার রাতে এটি ঘটেছে পলাতক শেখ হাসিনার বক্তব্য ঘিরে, যার দুটো অংশ আছে। একটা অংশ হলো, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যাঁরা আত্মদান করেছেন, শেখ হাসিনা তাঁদের অপমান করেছেন, অবমাননা করেছেন। শহীদের মৃত্যুসম্পর্কিত অবান্তর, আজগুবি ও বিদ্বেষমূলক কথা বলে পলাতক শেখ হাসিনা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে অবজ্ঞা করেছেন ও অশ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
দ্বিতীয়ত, শেখ হাসিনা দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও অমানবিক প্রক্রিয়ায় নিপীড়ন চালিয়ে ক্ষমতায় থাকাকালীন যে সুরে কথা বলতেন, গণ-অভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়ার পরও তিনি একই হুমকি-ধমকির সুরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে, গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া প্রত্যেক মানুষের বিরুদ্ধে কথা বলে চলেছেন, হুমকি দিচ্ছেন। শেখ হাসিনা দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির হুমকি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মানুষের মনে জুলাই গণহত্যা নিয়ে যে ক্ষত রয়েছে, সেই ক্ষততে শেখ হাসিনা একের পর এক আঘাত করে চলেছেন। তাঁর এই সহিংস আচরণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। অন্তর্বর্তী সরকার দেশ ও জনগণের জানমালের রক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্ক আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বাত্মকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার যথাযথ চেষ্টা করছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধে একজন ওয়ারেন্টভুক্ত (গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত) আসামি শেখ হাসিনা বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়ানো সম্ভব বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই হত্যাকা-ে যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁদের বিচারকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। এই বিচার নিশ্চিত করে গণহত্যাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। উসকানিমূলক কর্মকা-ে যাঁরা জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে কী কী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা সরকার খতিয়ে দেখবে।