অন্তর্বর্তী সরকারের ৬ মাস : উত্তপ্ত রাজপথ, দাবির পাহাড়
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:০০:০০ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পরপরই গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস শপথ নেন। গতকাল তাঁর সরকারের ৬ মাস পূর্ণ হয়। সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই এই ছয় মাসে একের পর এক দাবি উঠতে থাকে। আওয়ামী শাসনামলের সাড়ে ১৫ বছরে জমে থাকা সব দাবি যেন একসঙ্গে ফুঁসে উঠতে থাকে। বিভিন্ন দাবি নিয়ে সমাবেশ, অবরোধ, বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও মিছিলে উত্তপ্ত হয়ে উঠে রাজপথ। এক পর্যায়ে দেখা যায়, দাবীর যেন পাহাড় জমে গেছে।
দফায় দফায় দাবি নিয়ে রাজপথে উত্তাপ ছড়িয়েছেন পুলিশ, আনসার, প্রশাসন ও সচিবালয়ের কর্মকর্তারা থেকে শুরু করে গৃহকর্মীরাও। যদিও সেসব দাবির মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজে পেয়েছেন বিভিন্ন দলের রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা।
একপর্যায়ে সরকারি চাকরিতে বয়স বাড়ানোর দাবিতে মাঠে নামে শিক্ষার্থীরা। আবার এইচএসসি পরীক্ষা না নেওয়ার দাবি এবং পরে অটোপাসের বিপক্ষে আন্দোলনসহ নানা দাবিতে মাঠে জড়ো হন ছাত্রছাত্রীরা। মন্দির ভাঙচুরের বিচার ও নিরাপত্তার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এছাড়া আওয়ামী শাসনামলে চাকরিচুত্যদের স্বপদে বহাল এবং ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের দাবি ছিল উল্লেখযোগ্য। এর জেরে অবশ্য সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িত থাকার দায়ে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার।
বিগত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ থেকে শুরু করে রাজপথে দাবির রেখা অঙ্কিত হয় রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ পর্যন্ত। সব মিলিয়ে গত ৬ মাসে ঢাকা হয়ে ওঠে দাবির শহর আর শাহবাগ যেন পরিণত হয় ‘দাবিবাগে’-এমন কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে দেখা গেছে। হাসিনা সরকার পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাস কেটে গেলেও দাবির এ শহর মুক্ত হতে পারেনি অবরোধ, মানববন্ধন ও সমাবেশের মতো কর্মসূচি থেকে।
পুলিশের ১১ দফা :
শেখ হাসিনা পালানোর পরপরই গা ঢাকা দেন তাঁর সরকারের মন্ত্রী-এমপিসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এরপরই থানা ছাড়েন সব পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা। শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালিয়ে হত্যাসহ গত সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুন-অত্যাচার ও নিপীড়নের শিকার হওয়া মানুষের ক্ষোভ গিয়ে পড়ে পুলিশের ওপর। ফলে আতঙ্কিত প্রায় সব পুলিশ সদস্য অবস্থান নেন পুলিশ লাইনসগুলোতে। এরপর পুলিশ সদস্যরাও ১১ দফা দাবি তোলেন।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিক্ষোভ :
হাসিনা ভারতে পালানোর তিন দিনের মাথায়, অর্থাৎ গত ৮ আগস্ট রাতে শপথ নেন অন্তর্বতী সরকারের ১৩ উপদেষ্টা। তার আগেই রাজপথে দাবি নিয়ে আসেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এসব ঘটনায় জড়িতদের বিচার এবং তাদের নিরাপত্তার দাবির পাশাপাশি সংসদে সংখ্যালঘুদের জন্য ১০ শতাংশ আসন বরাদ্দেরও দাবি জানানো হয়। যদিও অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ রাজনৈতিক বেশ কয়েকটি দলের প্রথম সারির নেতারা মন্দির পরিদর্শন করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি :
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরপরই রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবি ওঠে। সেই দাবি দিনে দিনে ঘণীভূত হয়ে গত ২২ অক্টোবর রূপ নেয় গণবিক্ষোভে। এদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় বঙ্গভবনের সামনে থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগের আলটিমেটাম দেয় ছাত্র-জনতা। এদিন জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি সমাবেশ করে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলন থেকে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের আলটিমেটাম দেওয়া হয়।
বিচারপতিদের পদত্যাগ দাবি :
সরকার তখনও গঠন হয়নি, রাষ্ট্রের প্রহরায় সেনাবাহিনীর পাশাপাশি তখন শিক্ষার্থীরা। এমন এক সময় দাবি ওঠে, তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিদের পদত্যাগের। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ ৭ আগস্ট এ দাবি তোলেন। তিনি তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে লেখেন, ‘বিচার বিভাগের ফ্যাসিবাদ বিলোপ করতে হবে।
আসিফ মাহমুদ ৮ আগস্ট সকালের মধ্যে বিচারপতিদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগ প্রত্যাশা করেছিলেন। যদিও ১০ আগস্ট প্রধান বিচারপতি হঠাৎ ফুল কোর্ট সভা ডাকলে তোপের মুখে পড়েন। পরে সুপ্রিম কোর্টে আন্দোলন শুরু হলে ওবায়দুল হাসানসহ পদত্যাগ করেন ৬ বিচারপতি।
আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবি :
দেশ থমথমে, জনমনে আতঙ্ক। আওয়ামী সরকারের পতন হলেও বিগত ১৫ বছর সাত মাসের অপশাসনে দলটির ওপর মানুষের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ থেকে যায়। একপর্যায়ে দলটির নিবন্ধন বাতিলের দাবি উঠে। বিভিন্ন পর্যায়ের অ্যাক্টিভিস্ট, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে জোরালোভাবে এ দাবি জানানো হয়। আওয়ামীপন্থি বিচারকদের পদত্যাগের দাবিতে হাইকোর্ট ঘেরাও :
সুপ্রিম কোর্টের বেশ কয়েকজন বিচারপতিকে ‘আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট বিচারক’ উল্লেখ করে তাদের পদত্যাগের দাবিতে গত বছরের ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম দুই সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম। পরে এ ঘটনায় ১২ জন বিচারককে চায়ের দাওয়াত দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। এরপর ১৫ বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা হয়। একপর্যায়ে বিচারপতিদের অভিসংশনে জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হয়।
আনসারদের চাকরি জাতীয়করণের দাবি :
গত বছরের ১১ আগস্ট চাকরি স্থায়ী করার দাবিতে আন্দোলনে নামেন আনসার সদস্যরা। সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে তাদের এ আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনের ধারাবাহিকতা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হয়ে একসময় সচিবালয়ের সামনে চলে আসে। ২৫ আগস্ট সেখানে অবস্থান নেন বহু আনসার সদস্য। সরকারের পক্ষ থেকে দাবিগুলো বিবেচনা করা হবে বলে জানালেও কতিপয় আনসারের পোশাক পরা ব্যক্তি সচিবালয় অবরোধ করেন। এরপর সাধারণ শিক্ষার্থীরা ধাওয়া দিলে এবং সেনাবাহিনী অবস্থান নিলে তারা সচিবালয় এলাকা ছাড়েন।
সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি চেয়ে আলটিমেটাম :
সচিবালয়ের বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পদোন্নতি না দিলে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির আলটিমেটাম দেন। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ কোনো সচিবকে সচিবালয়ে ঢুকতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে চেকপোস্ট স্থাপন করা হবে। তাদের দাবি, দেশের সব বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি ও এসপিকে বরখাস্ত করতে হবে। যারা ‘সিভিল-ক্যুর চেষ্টা করেছে’ তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করে আইনের আওতায় আনতে হবে। এ ছাড়া আলী ইমাম মজুমদারকে উপদেষ্টা হিসেবে মানেন না বলেও জানান বঞ্চিত এই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
ডিসি নিয়োগের দুই প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি :
গত সেপ্টেম্বরের শুরুতে ৫৯ জেলায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ঘেরাও করেন বঞ্চিত কয়েকশ কর্মকর্তা। ডিসি নিয়োগ দিয়ে জারি করা দুটি প্রজ্ঞাপন পুরোপুরি বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে বিক্ষোভ ও হট্টগোল করে নিজেদের বঞ্চিত দাবি করেন কর্মকর্তারা। তারা জনপ্রশাসন সচিবের কাছে দাবি করেন, নতুন ডিসিরা যাতে সংশ্লিষ্ট জেলায় না যান।
এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন :
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দাবি করে এইচএসসির অবশিষ্ট পরীক্ষা বাতিলের জন্য আন্দোলনে নামেন পরীক্ষার্থীরা। ১৮ আগস্ট রাজধানীর সায়েন্সল্যাব মোড় থেকে এ আন্দোলন শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত সচিবালয়ের ভেতরে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এইচএসসি ও সমমানের বাকি থাকা পরীক্ষাগুলো বাতিল করে সরকার।
এইচএসসিতে অনুত্তীর্ণদের পাসের দাবি :
এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল পুনরায় প্রকাশের দাবি তোলেন অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা। এ সংক্রান্ত ত্রুটি সংশোধনের দাবিতে ২৩ অক্টোবর সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন তারা। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তাদের বিক্ষোভ থেকে ৫৩ জনকে নেওয়া হয় পুলিশি হেফাজতে। এর আগে ১৫ অক্টোবর এইচএসসি ও সমমানের ফলাফল প্রকাশের পর তারা বৈষম্যের শিকার বলে অভিযোগ তোলেন। পরে তারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। একপর্যায়ে আন্দোলনের নামে সচিবালয়ে ঢুকে পড়লে সেনাবাহিনীর সহায়তায় পুলিশ অনেককে গ্রেপ্তার করে। এদের মধ্যে ২৬ জন ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানা যায়।
দাবি নিয়ে রাজপথে গৃহকর্মীরাও :
গৃহকর্মী নির্যাতন বন্ধ, তাদের প্রাপ্য সম্মান দিয়ে শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্তি ও ‘শ্রমিক’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে আন্দোলনে নামেন গৃহকর্মীরা। সরকারের কাছে তারা এ দাবি জানান। শাহবাগ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তারা একাধিক সমাবেশও করেন। এছাড়া ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশে (কেআইবি) অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশের সহযোগিতায় এবং দুঃস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের (ডিএসকে) বাস্তবায়নে ঢাকার ২০০ গৃহকর্মীকে নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানেও একই দাবি জানানো হয়।
পোশাক শ্রমিকদের ১৮ দফা দাবি :
গত ৫ আগস্টের পর সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরের বেশিরভাগ পোশাক কারখানা খোলার পর বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শ্রমিকরা। এতে রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস খাতে বাড়তে থাকে অস্থিরতা। অশান্ত হয়ে পড়ে শিল্পাঞ্চল। বন্ধ হয়ে যায় অনেক কারখানা। সরকারের মধ্যস্থতায় প্রায় মাসব্যাপী আন্দোলনের পর মজুরি বৃদ্ধি এবং বছর শেষে ১০ শতাংশ হারে ‘ইনক্রিমেন্ট’ দেওয়াসহ ১৮টি দাবি মেনে নেয় মালিকপক্ষ। এরপর কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে এ খাতে। যদিও সেই আন্দোলন থামেনি। থেমে থেমে চলছে, উঠছে নানা দাবি।
অটোরিকশা ও পায়েচালিত রিকশাচালকদের পল্টাপাল্টি দাবি :
গত ২৬ আগস্ট সকাল থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে আন্দোলনে নামেন পায়েচলিত রিকশাচালকরা। সরকারের কাছে তাদের দাবি ছিল, আগে প্রধান সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলত না, ফলে তারা পর্যাপ্ত ভাড়া পেতেন। অথচ সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলায় তারা ভাড়া পান না। ব্যাটারি চালিতরিকশা নিষিদ্ধের দাবি জানান এই রিকশাচালকরা। বৃহত্তর ঢাকা সিটি করপোরেশন রিকশা মালিক ঐক্যজোটের আয়োজনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। এতে সাত দফা দাবি জানানো হয়। দাবি মানতে সরকারকে ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন তারা।
ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবি :
আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধের দাবি জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গত ২২ অক্টোবর বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক সমাবেশে এ দাবি জানান তারা। এরপর ২৩ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখা-২-এর দেওয়া প্রজ্ঞাপনে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করা হয়।
চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ করার দাবি :
সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছে চাকরিপ্রত্যাশীরা। শেখ হাসিনা সরকারের আমল থেকে এ দাবি নিয়ে বেশ কয়েকবার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরের দিকে আন্দোলনকারীরা শাহবাগে অবস্থানের পর রাজধানীর রমনা এলাকায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। যদিও পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। গঠিত হয় এ বিষয়ক কমিশন। তারা সরকারকে দেয় পরামর্শ। পরে ২৪ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের সভায় বয়সসীমা নির্ধারণ অধ্যাদেশের খসড়ায় নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়স ৩০ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩২ বছর নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সেখানে বলা হয়, বিসিএস পরীক্ষা দেওয়া যাবে সর্বোচ্চ তিনবার। যদিও পরে তা পরিবর্তন করে নির্ধারণ করা হয় ৪ বার।
নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভিসি নিয়োগের দাবি :
দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দাবি ওঠে, তাদের নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকে উপাচার্য (ভিসি) নিয়োগ দিতে হবে। ২৮ আগস্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষককে উপাচার্য হিসেবে চান শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেলে তার সঙ্গে কাজ করবেন না বলেও ঘোষণা দেন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
চাকরিচ্যুত ও পদত্যাগে বাধ্য হওয়া ব্যাংককর্মীদের দাবি :
বিভিন্ন সময়ে চাকরিচ্যুত ও পদত্যাগে বাধ্য হওয়া ব্যাংককর্মীরা চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। গত ১৯ আগস্ট তারা চাকরি ফিরে পেতে মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে মানববন্ধন করেন। যদিও এ বিষয়ে চাকরি ফিরিয়ে দিতে ব্যাংকারদের পক্ষে হাইকোর্টে রুল জারি রয়েছে।
সড়ক অবরোধে পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা :
২০২১ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত সব ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের কারিগরি অধিদপ্তর এবং সব প্রতিষ্ঠান থেকে দ্রুত স্থানান্তর করাসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনে নামেন সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। সরকারের কাছে তাদের দাবিগুলোর মধ্যে ছিল—ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চার বছর মেয়াদি নিশ্চিত করা এবং প্রতি সেমিস্টার (পর্ব) পূর্ণ মেয়াদের (ছয় মাস) করা।
২৪ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহের দাবি যানবাহনের শ্রমিকদের :
২৪ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহের দাবিতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলনে নামেন যানবাহনের শ্রমিকরা। ৩ অক্টোবর নরসিংদীর রেন্ট-এ কার ব্যবসায়ী, মাইক্রোবাসচালক ও সিএনজিচালিত যানবাহনের চালকরা ঢাকা-সিলেট মহসড়কের শাহেপ্রতাপ মোড় অবরোধ করে। ফলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় সড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরিদের দাবি :
চাকরি জাতীয়করণসহ তিন দফা দাবিতে গত ২৪ আগস্ট আন্দোলনে নামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত দপ্তরিরা। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে এ আন্দোলন শুরু হলেও পরে সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নেয় তারা। আনসার আন্দোলনে ছাত্রদের সঙ্গে সংঘর্সের আগেই স্থান ত্যাগ করে তারা। এরপর তাদের আর দেখা যায়নি।
ভাতা বাড়ানোর দাবিতে ট্রেইনি চিকিৎসকদের :
পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকদের ভাতা ৩০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে অবস্থান নেয় ট্রেইনি চিকিৎসকরা। একই দাবিতে গত ২২ ডিসেম্বরও তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছিলেন। ভাতা বাড়াতে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন ট্রেইনি চিকিৎসকরা। দাবি না মানলে দেশের প্রায় ১৩ হাজার পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসক একযোগে কর্মবিরতিতে যাবেন বলে ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন না হওয়ায় ২২ ডিসেম্বর ট্রেইনি চিকিৎসকরা আন্দোলন শুরু করেন। তাদেরই একটি অংশ শাহবাগ অবরোধ করে। পরে ৩০ ডিসেম্বর পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের ভাতা বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। তাদের ভাতা ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে ৩৫ হাজার টাকা করা হয়।
ঢাকায় বিভিন্ন কলেজে আন্দোলন :
ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পালটাধাওয়ার ঘটনার রেশ না কাটতেই মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজকে ঘিরে রণক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া এলাকায়। এ সময় একদিন আগে বুটেক্সের আজিজ হল ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের লতিফ হলের শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়, ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।
স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের :
রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত সরকারি তিতুমীর কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরসহ সাত দফা দাবি নিয়ে কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। গত ৩০ জানুয়ারি সকাল থেকে শিক্ষার্থীদের এ কর্মসূচির কারণে কলেজের সামনের সড়কের দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পাঁচ দাবি সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের :
পাঁচ দাবিতে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। গত ২৬ জানুয়ারি সন্ধ্যা দিকে কয়েকশ শিক্ষার্থী সড়ক অবরোধ করেন। এতে সায়েন্সল্যাব, নীলক্ষেত মোড় ও এলিফ্যান্ট রোডসহ আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষকদের জাতীয়করণের দাবি :
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণসহ ছয় দফা দাবি জানান শিক্ষকরা। গত ১৯ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা ঐক্যজোট আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটি কর্তৃক আয়োজিত এক সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়। এরপর ২৮ জানুয়ারি দুপুর ২টার মধ্যে দাবি বাস্তবায়নের ঘোষণার আল্টিমেটাম দেয় সংগঠনটি।