কমিশনের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান ২৫ ক্যাডারের
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৮:১৯:২১ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশকে অস্পষ্ট ও জনবিরোধী উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ। শনিবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ক্যাডার যার মন্ত্রণালয় তার এবং ডিএস পুলে কোটা বাতিল করে সকল ক্যাডারের সমতার দাবি জানিয়ে বলা হয়েছে কমিশনের কিছু প্রস্তাব সংবিধান ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সাথে সাংঘর্ষিক। তাছাড়া, রিপোর্টের কিছু প্রস্তাব একে অপরের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে এসকল অন্যায় আদেশ প্রত্যাহার করা না হলে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদভুক্ত সকল ক্যাডার কর্মকর্তারা কর্মবিরতিসহ ধারাবাহিক কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবে।
প্রশাসন ক্যাডার কর্তৃক পক্ষপাতিত্বপূর্ণ ও বৈষম্যমূলকভাবে সাময়িক বরখাস্তের প্রতিবাদে এবং জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক মো. শওকত হোসেন মোল্যা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গণপূর্ত ক্যাডারের মো. জামিলুর রহমান, স্বাস্থ্য ক্যাডারের ডা. মোহাম্মদ নেয়ামত হোসেন, শিক্ষা ক্যাডারের ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান, প্রাণিসম্পদ ক্যাডারের ড. মুহাম্মদ আহসান হাবীব, কৃষি ক্যাডারের মো. মমিনুল হক ও ফাতেহা নূরসহ বিভিন্ন ক্যাডারের সদস্যবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের উপস্থাপিত রিপোর্টে ২৫ ক্যাডারের দাবির প্রতিফলন ঘটেনি। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের রিপোর্টে সকল ক্যাডারের নামের সাথে ক্যাডার শব্দটির পরিবর্তে সার্ভিস শব্দটি ব্যবহার করা হলেও এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস শব্দটি ব্যবহার করে প্রশাসন ক্যাডারকে আরো বেশি ক্ষমতাধর করার চেষ্টা করা হয়েছে। সকল ক্যাডারেই এডমিনিস্ট্রেটিভ পদ রয়েছে। সুতরাং কোনো ক্যাডারের নামের সাথে ‘এডমিনিস্ট্রেটিভ’ শব্দ রাখা অযৌক্তিক, অপ্রয়োজনীয়, বিভ্রান্তিকর ও আপত্তিকর। বিপত্তি এড়াতে বিসিএস এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এর পরিবর্তে বিসিএস ভূমি সার্ভিস নামকরণ করতে হবে। জনসেবা নিশ্চিত করতে ‘ক্যাডার যার মন্ত্রণালয় তার’ প্রস্তাব সারাদেশের মানুষের দাবিতে পরিণত হয়েছে, অথচ কমিশনের রিপোর্টে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কাদের মাধ্যমে পরিচালিত হবে – তা উল্লেখ করা হয়নি।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতিটি সেক্টরের নীতি নির্ধারণ ও পরিকল্পনা-প্রণয়ন করেন উপসচিব থেকে তদুর্ধ্ব কর্মকর্তারা। আমাদের দেশের সকল সেক্টরে অনভিজ্ঞ, অদক্ষ ও অপেশাদারদের হাতে থাকায় দেশের প্রতিটি সেক্টরে অনগ্ররসরতা সুস্পষ্ট। এ কারণে আমরা উপসচিব পদে কোটা বাতিল করে সকল ক্যাডারের মধ্যে পরীক্ষার মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে শতভাগ নিয়োগের দাবি করা হয়েছে, যেন অভিজ্ঞদের দ্বারা জনসেবা নিশ্চিত করা যায়। কিন্তু জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ এবং বাকী ২৫ ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ দিয়ে হাস্যকর ও অযৌক্তিক প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে। উপসচিব পদে কোনো কোটা মেনে নেয়া হবে না। কমিশনের এ প্রস্তাব সংশোধন করে শতভাগ সকল ক্যাডারের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। ২০২৪ সালে আমাদের বীর ছাত্ররা চাকরিতে প্রবেশকালের যে ৫৬ শতাংশ ‘কোটা বৈষম্য’ দূর করতে তাদের বুকের রক্ত ঝরালো, তারাই যখন চাকরিতে প্রবেশের পর বৈষম্যমূলক কোটার সম্মুখীন হবে তখন তাদের এই আত্মত্যাগ বৃথা যাবে।
সম্মেলনে বলা হয়, সম্প্রতি প্রশাসন ক্যাডার এসোসিয়েশন ঢাকাতে সমাবেশের আয়োজন করে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনকে আলটিমেটাম দেয় এবং সে সময়ে ও পরবর্তী তারা অন্য ক্যাডারের সদস্যদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধরনের কটুক্তি করেন। এর পূর্বে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ঘেরাও করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। তার প্রেক্ষিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিষদের অন্তর্ভুক্ত ২৫টি ক্যাডারের সদস্যদের সাথে প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য শুরু হয়। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের অন্তর্ভুক্ত বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় মত প্রকাশের জন্য ঢালাওভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হচ্ছে। কোন কারণ দর্শানোর নোটিশ ব্যতিরেকে সামান্য অজুহাতে এ ধরনের প্রজ্ঞাপন জারি অত্যন্ত অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা মৌলিক অধিকার ও চাকুরিবিধির পরিপন্থী। যাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তারা স্ব-স্ব ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষ ও মেধাবী কর্মকর্তা। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে এভাবে বরখাস্ত করায় পরিষদ সদস্যরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
অন্যদিকে, প্রশাসন ক্যাডারের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ থাকলেও, সে বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। উপদেষ্টাগণ তাদেরকে আশ্বস্ত করলেও এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে এখনো সাময়িক বরখাস্ত চলমান রয়েছে। এমতাবস্থায়, আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে এসকল অন্যায় বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করা না হলে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদভুক্ত সকল ক্যাডার কর্মকর্তাগণ কর্মবিরতিসহ ধারাবাহিক কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবে।