কোম্পানীগঞ্জে পাথরের গাড়িতে পুলিশের চাঁদাবাজি
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৬:৫৭:৩৮ অপরাহ্ন
কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি:
সিলেট জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে শাহ আরেফিন টিলার পাথর পরিবহন বন্ধ করতে ২০ পুলিশ সদস্যকে নিয়োজিত করেছেন সিলেটের ডিআইজি। তাদেরকে দিয়ে পাথর পরিবহন বন্ধ করার পরিবর্তে গাড়ি প্রতি ৫’শ টাকা করে চাঁদা নিয়ে বৈধতা দিচ্ছেন কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি। ডিআইজির আদেশ অমান্য করে কিভাবে ওসি টাকা নিচ্ছেন তা জানেন না সিলেট জেলা পুলিশ। রোববার রাতেও ডিউটিতে ছিলেন এসআই খোকন। তার সাথে থাকা দায়িত্বরত কনস্টেবলদের দিয়ে গাড়ি থেকে ৫’শ টাকা করে নিতে দেখা গেছে। এদিকে, রোববার দিনের ডিউটিতে থাকা কনেস্টেবল মামুনকে একটি ছবিতে নিজ হাতে গাড়ি থেকে টাকা নিতে দেখা যায়। গত প্রায় ১ মাসেরও বেশি সময় থেকে এভাবে রাস্তায় গাড়ি থেকে চাঁদাবাজি চলছে।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর শাহ আরেফিন টিলা থেকে পাথর উত্তোলন চলছে। লিস্টার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করে পরিবহন করতে হয় বড় বড় ট্রাক্টর দিয়ে। পাথর পরিবহনের বৈধতা হিসেবে এসব ট্রাক্টরকে পথে পথে দিতে হয় বেশ কিছু চাঁদা। পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় কয়েকটি ঘাটেও দিতে হয় এই চাঁদা। পুলিশের নিজ হাতে গাড়ি থেকে ৫’শ টাকা করে চাঁদা নেওয়া দেখে উৎসাহিত হয় অন্য চাঁদাবাজরা। তাদের মতো অন্যরাও ২’শ থেকে ৩’শ পর্যন্ত চাঁদা নিয়ে থাকে। শাহ আরেফিন থেকে ভোলাগঞ্জ পর্যন্ত ৭টি জায়গায় দিতে হয় পাথরবাহী ট্রাক্টর থেকে চাঁদা। এছাড়াও প্রতিটি পাথরের গর্ত থেকে ৫’শ টাকা করে চাঁদা দিতে হয় বিজিবিকেও। দিন-রাত প্রকাশ্যে এতসব চাঁদাবাজি হলেও নিরবতা পালন করছে উপজেলা প্রশাসন ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
শাহ আরেফিন টিলা থেকে পাথর নিয়ে বের হওয়ার সময় নোয়াগাঁও মোড়ে প্রতিটি ট্রাক্টর থেকে পুলিশ নিজ হাতে ৫’শ টাকা করে চাঁদা নিয়ে থাকে। বাবুলনগর মোড় ও জালিয়ারপাড়ে ডিউটিরত পুলিশ সদস্যরা সেই দিকের পাথর বুঝাই ট্রাক্টর থেকে ৫’শ টাকা করে নেন। এছাড়া নোয়াগাঁও মাদ্রাসার পশ্চিমে স্থানীয়দের দিতে হয় ২’শ টাকা, উজান পাড়ি দিতে হয় ২’শ টাকা, রুস্তুমপুর গ্রামে দিতে হয় ৩’শ টাকা ও চিকাডহর গ্রামে দিতে হয় ২’শ টাকা। এতসব চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন এ যেন চাঁদাবাজির অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে কোম্পানীগঞ্জ।
রোববার (৯ ফেব্রুয়ারী) নোয়াগাঁও মোড়ে ডিউটিরত এক পুলিশ সদস্যের সাথে কথা হলে তিনি বলেন পাথর বুঝাই ট্রাক্টর কিভাবে যাচ্ছে তা ওসিকে জিজ্ঞেস করেন। ওসির নির্দেশে আমরা এখানে ডিউটি করছি। কিসের জন্য টাকা নিচ্ছেন জানতে চাইলে ঐ পুলিশ সদস্য বলেন, সব কিছু ওসিকে জিজ্ঞেস করেন, আমরা শুধু আদেশ পালন করছি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শাহ আরেফিন টিলা থেকে পাথর নিয়ে আসা ট্রাক্টর থেকে ৭টি পয়েন্টে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। চাঁদা না দিলে ড্রাইভারকে মারধর গাড়ি আটকিয়ে রাখা, গাড়িতে থাকা বেলচা নিয়ে যাওয়া হয়। এভাবে প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১২’শ গাড়ি থেকে দিনে ও রাতে প্রায় ২০ লক্ষ টাকার চাঁদাবাজি হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু পুলিশের হাতেই উঠে ৭-১০ লক্ষ টাকা।
বিজিবির নোয়াকুট বিওপির ক্যাম্প কমান্ডার শাহ আরেফিনের গর্ত থেকে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, আমাদের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ টাকা উত্তোলন করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উজায়ের আল মাহমুদ আদনান চাঁদাবাজির কথা অস্বীকার করে জানান, কোথাও চাঁদাবাজি হচ্ছে এটা আমার জানা নেই। আমার নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ চাঁদাবাজি করলে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুন্নাহার বলেন, বিভিন্ন পয়েন্টে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে এটা আপনাদের কাছ থেকে শুনেছি। যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) রফিকুল ইসলাম বলেন, কোম্পানীগঞ্জে পাথর পরিবহনে চাঁদাবাজির বিষয়টি আমার জানা নেই, তবে আমরা খোঁজ নিচ্ছি। অভিযোগ পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।