রাজনগরে ডেইরী খামার শিল্পে নিরব বিপ্লব
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৭:১০:৪৯ অপরাহ্ন
বছরে আয় প্রায় ২৩ কোটি টাকা
শংকর দুলাল দেব, রাজনগর: মৌলভীবাজারের রাজনগরে গবাদিপশুর খামার শিল্পে নিরব বিপ্লব সাধিত হয়েছে। এতে দরিদ্র পরিবারের বেকার যুব সমাজ এখন স্বাবলম্বী। কোন রকম সরকারী সহযোগিতা ছাড়াই সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এ খামারগুলোতে একদিকে নিজেদের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা সৃষ্টি হয়েছে অন্যদিকে রাজনগরে বেকার যুব সমাজের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে উদ্দীপনা। উপজেলার ৯১টি দুগ্ধ খামারের অন্যান্য আয় বাদে শুধু দুধ বিক্রি করে বছরে খামারীরা খরচ বাদে আয় করেন প্রায় ২২ কোটি ৭৯ লাখ ২৭ হাজার ৭০০ টাকা। রাজনগরের সম্ভাবনাময় এ শিল্পে সরকারের প্রাণিসম্পদ বিভাগের বিরুদ্ধে রয়েছে অসহযোগিতার বিস্তর অভিযোগ।
উপজেলার বিভিন্ন খামার পরিদর্শনে জানা যায়, রাজনগরে বেকার যুব সমাজ গবাদিপশুর খামার প্রতিষ্ঠা করে আজ স্বাবলম্বী। কোন রকম সরকারী সহযোগিতা ছাড়াই সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এ খামারগুলোতে নিজেদের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে একজন সফল নারী উদ্যোক্তাও রয়েছেন। উদ্যোক্তাদের সফলতা দেখে বেকার যুব সমাজের মধ্যে উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সম্ভাবনাময় এ শিল্পে অসহযোগিতার জন্য রাজনগর প্রাণিসম্পদ বিভাগের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।
রাজনগরে মোট ৯১টি ডেইরী খামার রয়েছে। এ শিল্পের সাফল্য দেখে আরো কিছু নতুন উদ্যোক্তা খামার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছেন। রাজনগরের এসব খামারের মধ্যে দেশি ও হাইব্রিড গরুর সংখ্যা মোট ১৬শ ৩৮টি। প্রতিটি গরু থেকে দৈনিক প্রায় ৮লিটার দুধ পাওয়া যায়। প্রতি লিটার দুধের পাইকারী বিক্রয় মূল্য ৮০ টাকা। ৯১টি খামারের ১৬শ ৩৮টি গরু থেকে দৈনিক ১৩ হাজার ১০৪ লিটার দুধ পাওয়া যায়। যার বাজার মূল্য ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩২০ টাকা। উপজেলার সম্ভাবনাময় এ শিল্প থেকে প্রতিমাসে ৩ কোটি ১৪ লাখ ৪৯ হাজার ৬০০ টাকা এবং বছরে ৩৭ কোটি ৭৩ লাখ ৯৫ হাজার ২০০ টাকা আয় হয়। অন্যদিকে ৯১টি খামারের ১৬শ ৩৮টি গরুর বার্ষিক ব্যয় হয় (প্রতিটির দৈনিক ২৫০টাকা হারে) ১৪ কোটি ৯৪ লাখ ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা। সবগুলো খামারের সমুহ খরচ বাদে বার্ষিক আয় দাঁড়ায় ২২ কোটি ৭৯ লাখ ২৭ হাজার ৭০০ টাকা। এসব খামারে উপজেলার ১২৫টি দরিদ্র পরিবারের ১২৫জন শ্রমিকের স্থায়ী কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রতি শ্রমিককে কর্মভেদে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা বেতন দেয়া হচ্ছে বলে জানাযায়।
এ ব্যাপারে রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ গ্রামের একমাত্র সফল নারী উদ্যোক্তা এখলিমা আক্তার (৩৮) জানান, তিনি একটি কলেজে বাংলার প্রভাষক ছিলেন। নিজের অর্থনৈতিক উন্নতি এবং সমাজে পিছিয়ে পড়া নারীদের উৎসাহিত করতে তিনি চাকুরী ছেড়ে ২০১৭ সালে নিজ উদ্যোগে ৩টি গাভী দিয়ে ডেইরী খামার প্রকল্প শুরু করেন। বর্তমানে তার খামারে বাছুরসহ ১৫টি হাইব্রিড গরু রয়েছে। এই খামারের আয় দিয়ে তিনি ২৫ লাখ টাকার জমি ক্রয় করেন এবং ২লাখ টাকার জমি লিজ নেন। তার খামারে রয়েছে বায়োগ্যাস প্লান্ট্ যা থেকে তার মাসে ৪ হাজার টাকার জ¦ালানী সাশ্রয় হয়। প্রতিদিন তিনি দুধ বিক্রি করে ৮ হাজার টাকা আয় করছেন। কিন্ত উপজেলায় একমাত্র নারী উদ্যোক্তা হবার পরও রাজনগর পশুসম্পদ বিভাগ থেকে কোন সহযোগিতা পাচ্ছেন না।
উপজেলার রাজনগর সদরের রায়হান ডেইরী ফার্মের স্বত্তাধিকারী নুরুল ইসলাম বাবর জানান, ২০১৭ সাল ডেইরী ফার্মের কাজ শুরু করেন। বর্তমানে তার ফার্মে ১২টি হাইব্রিড গরু রয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ১৮ লাখ টাকা। দৈনিক খরচ বাদে তার আয় হয় প্রায় ৫ হাজার টাকা। তবে তিনি গমের ভুষি, চালের খুদি, খৈল এবং ঔষধের মূল্য বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, রাজনগর পশুপালন বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় সাহায্য পাওয়া যায় না।
এ ব্যাপারে রাজনগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ একেএম মোক্তাদির বিল্লাহ জানান, জনবল সংকটের কারণে অনেক সময় ইচ্ছা থাকা সত্বেও যথাযথ সেবা দেয়া যাচ্ছেনা। রয়েছে ঔষধের স্বল্পতা। তিনি জানান, রাজনগর অফিসে বিভিন্ন পদবীর ১১ জন স্টাফের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৫ জন। ভ্যাটেনারী সার্জন, ভিএফএ, উপজেলা লাইফ ষ্ট্রোক সহকারী, কৃত্রিম প্রজনন সহকারী সহ মোট ৬টি পদ দীর্ঘ দিন যাবত খালি রয়েছে। এর মধ্যেও সাধ্য অনুযায়ী সেবা দেয়ার চেষ্টা অব্যাহত আছে। তিনি খামারীদের ঢালাও অভিযোগ সঠিক নয় বলে জানান।