হাসিনা ফেরানোর প্রক্রিয়া কতদূর?
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩:৩০:৫৫ অপরাহ্ন
চাওয়া হচ্ছে জাতিসংঘের সহযোগিতা
জালালাবাদ রিপোর্ট : ক্ষমতাচ্যুত পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতেই মামলাগুলোর বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কৌঁসুলিরা। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু গণআন্দোলনের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগে সভাপতিকে গত ৬ মাসেও দেশে ফেরানো সম্ভব হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে ভারতের কাছে এ ব্যাপারে রিকোয়েস্ট করা হয়েছে। ভারত কোনো রিপ্লাই দেয়নি।
ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, তারপরও শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা থেমে নেই। নানাভাবেই চেষ্টা অব্যাহত আছে। যদি উনাকে আনা যায়, ভালো। আর যদি না আনা যায়, তাহলে আইনে যে প্রক্রিয়া আছে ‘ইন অ্যাবসেন্সিয়া ট্রায়াল’, সেটি অনুসরণ করে আমরা অগ্রসর হবো।
জাতিসংঘের সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে :
গতবছর জুলাই-অগাস্টে বিক্ষোভ দমনে শেখ হাসিনা সরকার ও আওয়ামী লীগের নেতারা যেভাবে বলপ্রয়োগ করেছে, সেখানে “গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের” প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল। দমন-পীড়নের ওইসব ঘটনা মানবতাবিরোধী অপরাধে”র কাতারে পড়তে পারে বলেও জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তখনকার ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে দলটি যেসব সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছে, সেগুলো কাজে লাগাতে চায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যেই আমরা যোগাযোগ শুরু করেছি। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাদের কাছ থেকে গণহত্যাসহ যাবতীয় মানবতাবিরোধী অপরাধের তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা হবে। শেখ হাসিনাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্তদের বিচার করার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের তথ্য-প্রমাণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন এই আইনজীবী।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের মতো একটা সংস্থা বলছে যে, এটা ওয়াইড স্প্রেড সিস্টেমেটিক ওয়েতে কিলিং হয়েছে এবং সেটা হাসিনার নির্দেশে হয়েছে। কী কী অস্ত্র ব্যবহার করে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে, সেটাও বলা হয়েছে। এটা একটা শক্ত প্রমাণ, যা অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। উল্লেখ্য যে, জুলাই-অগাস্টে বিক্ষোভ দমন ও হত্যার ঘটনা তদন্ত শেষে গত ১২ই ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর)।
সেখানে বলা হয়েছে, ‘এটা বিশ্বাস করার ভিত্তি আছে যে, ১৫ জুলাই থেকে পাঁচই অগাস্ট পর্যন্ত সাবেক সরকার এবং এর নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কাঠামো, আওয়ামী লীগের সহিংস গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে একত্রিত হয়ে মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে পদ্ধতিগতভাবে জড়িয়ে পড়েছিলো।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশের প্রায় ১৪০০ জনের মতো মানুষ নিহত হন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগের মৃত্যু হয়েছে রাইফেল ও শটগানের গুলিতে। এক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সমন্বয়কাজে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান নেতৃত্ব দেন বলে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এপ্রিলে শুরু বিচার :
বাংলাদেশে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচারের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া আগামী এপ্রিল মাসে শুরু হতে পারে। মঙ্গলবার বিবিসিকে এ কথা জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলার তদন্তকাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে বলেও জানান এই আইনজীবী।
তিনি বলেন, আমরা আশা করি, আগামী (মার্চ) মাসের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হওয়া মামলার তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা সম্ভব হবে। যদি মার্চ মাসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট আমরা পেয়ে যায়, তাহলে এপ্রিল মাস থেকে বিচার প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক পর্বটা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।