সিলেটে মেট্রোপলিটন সিটির আলাদা কারাগারের যাত্রা শুরু
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৯:৪২:২৯ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : দেশে প্রথম বারের মতো মহানগর এলাকার বন্দিদের জন্য আলাদা কারাগারের ব্যবস্থা করেছে সরকার। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে নগরীর বন্দরবাজার সংলগ্ন পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারকে দেশের প্রথম সিলেট মেট্রোপলিটন সিটি এলাকার বন্দিদের জন্য পৃথক কারাগার চালু করা হয়। ১ম দিনেই মেট্রোপলিটন থানার মামলার ২৫৩ জন বন্দিকে এই কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শত কোটি টাকা ব্যয়ে শহরতলীর বাদাঘাটে অত্যাধুনিক কারাগার নির্মাণের পর নগরীর বন্দরবাজার সংলগ্ন এলাকায় সিলেটের পুরনো কেন্দ্রীয় কারগাারটি ছিল অবহেলা-অনাদরে। স্বল্প সংখ্যক লঘু অপরাধীদের রাখা হতো সেখানে। কারাগারের প্রায় সাড়ে ২৪ একর জায়গায় কখনো জাদুঘর, আবার কখনো সবুজ উদ্যান আবার কখনো বহুতল পার্কিং ও অত্যাধুনিক বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
তবে শেষ পর্যন্ত ২৩৬ বছরের পুরনো কারাগারটি রোববার থেকে নবযাত্রা শুরু করেছে। শুধুমাত্র মেট্রোপলিটন (শহর) এলাকার বন্দিদের রাখা শুরু হয়েছে এই কারাগারে। আর গ্রামের বন্দিরা থাকবেন বাদাঘাটস্থ ‘সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে’। বন্দিদের আলাদা রাখলে শহরের অপরাধের ধরণ প্রত্যন্ত অঞ্চলে কম ছড়াবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কারাগার সূত্র জানায়, বাংলাদেশের প্রাচীন কারাগারগুলোর মধ্যে সিলেট কারাগার অন্যতম। ১৭৮৯ সালে আসামের কালেক্টরেট জন উইলিয়াম প্রায় এক লাখ রুপি ব্যয়ে সিলেট নগরীর প্রাণকেন্দ্র ধোপাদীঘিরপাড়ে ১২১০ জন বন্দি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন কারাগারটি নির্মাণ করেন। প্রশাসনিক প্রয়োজন ও বন্দী আধিক্যের কারণে ১৯৯৭ সালে এটিকে জেলা থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে উন্নীত করা হয়।
২০১৯ সালে বাদাঘাট এলাকায় অত্যাধুনিক কারাগারে বন্দি স্থানান্তরের পর শহরের অভ্যন্তরে পুরনো কারাগারের মূল্যবান ভূমির উপর চোখ পড়ে অনেকের। বিভিন্ন সময় ‘সবুজ উদ্যান’, ‘বঙ্গবন্ধু পার্ক’, ‘বঙ্গবন্ধু যাদুঘর’ ও অত্যাধুনিক বহুতল পার্কিং ও বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ তাদের জায়গা অন্য কোন কাজে ব্যবহারে ছাড় না দেওয়ায় সেসব উদ্যোগ ভেস্তে যায়।
তবে বাদাঘাটস্থ সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি স্থানান্তরের পর অনেকটা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে ‘সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২’। আদালত থেকে লঘু অপরাধীদের এনে রাখা হতো এই কারাগারে। ১২শ’ ধারণ ক্ষমতার কারাগারে থাকতেন ৫০-১০০ জন বন্দি।
কারাগার সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মেট্রোপলিটন এলাকার বন্দিদের জন্য সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ চালু হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেই প্রক্রিয়া থমকে যায়। ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর গত ১৮ ডিসেম্বর ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ৪ ফেব্রুয়ারি কারা অধিদপ্তর থেকে এ ব্যাপারে ফের নির্দেশনা আসলে ১৬ ফেব্রুয়ারি সিলেট বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক মো. ছগির মিয়া স্বাক্ষরিত এক পত্রে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এ মেট্রোপলিটনের বন্দিদের স্থানান্তরের জন্য সিনিয়র জেল সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
রোববার সন্ধ্যায় সিলেট বিভাগের কারা উপ-মহা পরিদর্শক মো. ছগির মিয়া দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথম মহানগর এলাকার বন্দির জন্য সিলেটে পৃথক কারাগারের যাত্রা শুরু করেছে। রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২’তে মহানগর এলাকার ২৫৩ জন বন্দিকে স্থানান্তর করা হয়েছে। এর মাধ্যমে পৃথক কারাগারের যাত্রা শুরু হলো। পর্যায়ক্রমে সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকার সকল থানার মামলার সকল আসামীদের এই কারাগারে স্থানান্তর করা হবে।