জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ : তরুণদের রাজনৈতিক যাত্রায় ছাত্র-জনতার ঢল
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ মার্চ ২০২৫, ১২:১০:০৩ অপরাহ্ন
নাহিদের নেতৃত্বে ১৫১ সদস্যের কমিটি || পরিবারতন্ত্র কবরস্থ করার প্রত্যয়
জালালাবাদ রিপোর্ট: সব জল্পনা-কল্পনা শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করলো নতুন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের’ প্রতিশ্রুতি ও তরুণদের স্বপ্ন-আকাঙ্খা পূরণের ঘোষণা দিয়ে যাত্রা শুরু করলো দলটি।শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন এ দলের নাম ঘোষণা করা হয়। শহীদ মো. ইসমাইল হাসান রাব্বির বোন মিম আক্তার দলটির নাম ঘোষণা করেন।
তিনি আহ্বায়ক হিসেবে নাহিদ ইসলাম এবং সদস্য সচিব হিসেবে আখতার হোসেনের নাম ঘোষণা করেন। আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের নাম ঘোষণার পর দলের আংশিক অর্গ্যানোগ্রাম পড়ে শোনান আখতার হোসেন। কমিটিতে মোট ১৫১টি পদ রয়েছে।এছাড়া দলটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হলেন সামান্তা শারমিন ও আরিফুল ইসলাম আদীব। ১নং যুগ্ম আহ্বায়কের পদ দেওয়া হয়েছে নুসরাত তাবাসসুমকে ও সদস্য সচিবের পদ দেওয়া হয়েছে আখতার হোসেনকে।
সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিবের পদ পেয়েছেন তাসনিম জারা ও নাহিদা সারওয়ার নিবা এবং ১নং যুগ্ম সদস্য সচিব আরিফ সোহেল। পাশাপাশি হাসনাত আবদুল্লাহকে দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক ও সারজিস আলমকে উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক, নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীকে মুখ্য সমন্বয়ক এবং আব্দুল হান্নান মাসউদকে যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন।আহবায়কের দায়িত্ব পাওয়া নাহিদ ইসলাম ছাত্র-জনতার জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। অভ্যুত্থান-পরবর্তী দেশের অন্তর্বর্তী সরকারেও ছাত্রদের মূল প্রতিনিধি ছিলেন তিনি। তার ধীরস্থির ও দৃঢ় নেতৃত্ব প্রশংসিতও হয়েছে। এবার সেই নাহিদ আরেকটি ইতিহাসের সামনে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশে ভারত ও পাকিস্তানপন্থী রাজনীতির ঠাঁই হবে হবে না। আমরা বাংলাদেশকে সামনে রেখে, বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থকে সামনে রেখে রাষ্ট্রকে বির্নিমাণ করব।
নাহিদ ইসলাম জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতা, শহীদ পরিবারের সদস্য ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের সংগ্রামী সালাম ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য শুরু করেন। নাহিদ ইসলাম জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ‘তুমি কে, আমি কে, বিকল্প, বিকল্প’ স্লোগানটি তুলে ধরে বলেন, বিকল্পের জায়গা থেকে এই নতুন দলের আত্মপ্রকাশ।
রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে শুক্রবার বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান শুরু হয়। শুরুতে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করা হয়। এরপর পবিত্র গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল থেকে পাঠ করা হয়। ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের পর জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।
বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের বক্তব্য দেওয়া শুরু হয়। এর আগে স্লোগানে স্লোগানে মিছিল নিয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে জড়ো হন বিপুলসংখ্যক ছাত্র-জনতা। তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশকে ঘিরে পতাকা হাতে মিছিল নিয়ে তাঁরা উচ্ছ্বাস করেছেন।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমাবেশ স্থল বিভিন্ন স্লোগানে মুখর হতে থাকে। বাস থেকে নেমে কর্মী সমর্থকরা জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে সমাবেশস্থলে জড়ো হন।এ সময় তাদের ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেবো রক্ত’, ‘ক্ষমতা না জনতা, জনতা জনতা’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।এদের অনেকেই গণমাধ্যমে বলেন, আমরা তরুণদের দিকে তাকিয়ে আছি। নতুন বাংলাদেশে তাঁরাই আমাদের পথ দেখাবেন।
পরিবারতন্ত্র কবরস্থ করার প্রত্যয় :
জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে বাংলাদেশ থেকে পরিবারতন্ত্র কবরস্থ করার প্রত্যয় জানিয়েছেন হাসনাত আবদুল্লাহ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত নতুন এই দলের মুখ্য সংগঠকের (দক্ষিণাঞ্চল) দায়িত্ব পেয়েছেন।হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমরা নিশ্চিত করতে চাই, এ দেশ থেকে পরিবারতন্ত্র কবরস্থ হয়েছে। এ দেশে কামারের ছেলে প্রধানমন্ত্রী হবে, এ দেশে কুমারের ছেলে প্রধানমন্ত্রী হবে। এ দেশে যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব উঠে আসবে।
বিদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে উল্লেখ করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, কিন্তু প্রেসক্রিপশন চলবে না। তিনি বলেন, এই গণভবনে কে যাবে, সেটি নির্ধারিত হবে এই বাংলাদেশ থেকে, ভারত থেকে সেটি নির্ধারিত হবে না। সংসদে কে যাবে, সেটি নির্ধারণ করবে বাংলাদেশের খেটে খাওয়া মানুষ। ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগানের মধ্য দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন হাসনাত আবদুল্লাহ।
অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দলের নেতারা :
জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে যোগ দেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তার মধ্যে ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদল, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে একটি দল, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির আহমেদ আলী কাসেমী, বিকল্পধারার নেতা মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমেদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইসলামী ঐক্য জোটের সহসভাপতি জসিম উদ্দিন, বিএলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ খেলাফত মসলিসের মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদের প্রমুখ।
নতুন দলকে স্বাগত জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, বিগত ৫৩ বছরে তরুণদের কাঙ্খিত বাংলাদেশ গঠন সম্ভব হয়নি। আমরা আশা করবো তাদের এই দলের মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও সাম্যের বাংলাদেশ তৈরি করতে সক্ষম হবে। দলটির সঙ্গে যে কোনো বিষয়ে আলাপ আলোচনার সুযোগ খোলা থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।