ট্রাম্প-জেলেনস্কি তীব্র বাগবিতন্ডা ন্যাটোর বড় সংকটের ইংগিত
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ মার্চ ২০২৫, ১০:১৯:৩২ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সাথে হোয়াইট হাউজে ওভাল অফিসের বৈঠকে সংবাদ মাধ্যমের সামনেই বাগবিত-ায় জড়িয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এর জের ধরে জেলেনস্কিকে হোয়াইট হাউজ থেকে চলে যেতে বলা হয় এবং পূর্ব নির্ধারিত যৌথ সংবাদ সম্মেলন বাতিল করা হয়।
ট্রাম্প কথা কাটাকাটির সময় জেলেনস্কিকে কৃতজ্ঞ হওয়ার জন্য বলেন এবং একইসঙ্গে তিনি ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন’ বলে অভিযোগ করেন। তবে জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে কোনো আপস করবেন না।
ওদিকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে কথা বলেছেন বলে তার একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন। তিনি ইউক্রেনের প্রতি তার নিঃশর্ত সমর্থনের কথা জানিয়েছেন।
উত্তপ্ত ১০ মিনিটে ভেঙ্গে গেলো আলোচনা :
জেলেনস্কির এবারের ওয়াশিংটন সফরে ইউক্রেনের বিরল খনিজ সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি চুক্তি হওয়ার কথা ছিল।কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওভাল অফিসের বৈঠকটি বাগযুদ্ধে পরিণত হয়, যার একদিকে ছিলেন জেলেনস্কি আর অন্যদিকে ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জেডি ভ্যান্স। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের আশা ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে ইতিবাচক আলোচনা করে হোয়াইট হাউজ ছাড়বেন। এর মধ্যে খনিজ চুক্তিতে সই করবেন যা তার দেশের ভবিষ্যতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রকে একটি অংশীদারিত্ব দেবে এবং তিনি তার দেশের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাইবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট বছরের পর বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের জন্য আরও বেশি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য তাকে চাপ দেয়ার পর বিশ্ব গণমাধ্যমের সামনেই নজিরবিহীন এক পরিস্থিতিতে পড়লেন জেলেনস্কি।
ভøাদিমির পুতিনের সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হওয়ার পর শক্তিশালী সহযোগীর চাপ সত্ত্বেও পিছিয়ে গেলেন জেলেনস্কি। ফলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এলো যে বৈঠকে তিনি ‘অসম্মানজনক’ আচরণ করেছেন।
এই ঘটনার পর ট্রাম্প ও তার যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আগেই তাকে হোয়াইট হাউজ ছাড়তে বলা হয়। শেষ পর্যন্ত খনিজ চুক্তিও আর হলো না।ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া ট্রুথে লিখেছেন, যখন শান্তির জন্য প্রস্তুত হবেন, তখন ফিরে আসবেন। জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্র ও ওভাল অফিসকে অপমান করেছেন বলেও লিখেছেন ট্রাম্প।জেলেনস্কিও এই ঘটনা নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটি প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানান সেখানে।
পরে ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকার তিনি বলেন, প্রকাশ্যে যে বাদানুবাদ হলো সেটা ঠিক ছিল না, তবে ট্রাম্প ও তার সম্পর্কের পুনরুদ্ধার সম্ভব। কারণ এই সম্পর্ক শুধু দুই জন প্রেসিডেন্টের মধ্যকার সম্পর্কের চেয়েও বেশিকিছু। আমাদের দুই দেশের জনগণের মধ্যকার সম্পর্কের বিষয়ও আছে এখানে।
ফক্স নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈঠকের পরই দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৈঠকে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের জেরে জেলেনস্কিকে আলোচনার মাঝপথেই ইউক্রেইনের প্রতিনিধিদের বেরিয়ে যেতে বলা হয় ওভাল অফিস থেকে।
এদিকে, ওভাল অফিসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগবিত-ার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাশিয়া। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বৈঠকে ট্রাম্প ‘বদমাশ’ জেলেনস্কিকে যথেষ্ট সংযম দেখিয়েছেন।
তবে জেলেনস্কি ও ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন এবং ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনি কস্তা যৌথভাবে জেলেনস্কির উদ্দেশে বলেন, আপনার মর্যাদা ইউক্রেনের জনগণের সাহসিকতাকে সম্মানিত করেছে।তারা আরো লেখেন, শক্ত থাকুন, সাহসী হোন, নির্ভীক হোন। আপনি কখনোই একা নন। আমরা ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তির জন্য আপনার সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব।
ন্যাটোর জন্য বড় সংকটের ইঙ্গিত :
ট্রাম্পের পূর্বসূরি বাইডেনের পৃষ্ঠপোষকতায় তিন বছরে গড়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন জোট এখন টুকরা হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে সম্পর্কের প্রকাশ্য ভাঙন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যদেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সমস্যা বাধার ইঙ্গিতও বটে।
ইউক্রেন ছাড়াও ইউরোপীয় দেশগুলোর নিরাপত্তায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি নিয়েও এখন আরও অনেক সংশয় ও প্রশ্ন দেখা দেবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় যে প্রশ্ন সেটি হলো, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি তাঁর একসময়ের পূর্বসূরি হ্যারি ট্রুম্যানের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবেন? ১৯৪৯ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান ঘোষণা দেন, ন্যাটো জোটের কোনো দেশের ওপর হামলা যুক্তরাষ্ট্র নিজের ওপর হামলা বলেই মনে করবে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির পুতিনের সঙ্গে জোরালো সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠায় দৃশ্যত ট্রাম্পের যে তীব্র আগ্রহ, তার ভিত্তিতেই এসব উদ্বেগ জন্ম নিচ্ছে। ট্রাম্প ও জেলেনস্কির বাগ্বিত-ায় ইউক্রেনের নিরাপত্তার বিষয়টি নগণ্য হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে ইউরোপীয়রাও নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে হয়ে পড়ছেন উদ্বিগ্ন।