হবিগঞ্জে শুঁটকি উৎপাদনে ধস
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ মার্চ ২০২৫, ৯:৪৪:৫৬ অপরাহ্ন
সংবাদদাতা: হবিগঞ্জে হাওরের পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে পুরোদমে শুরু হয়েছে শুঁটকি উৎপাদন। কিন্তু বর্তমানে হাওরে মাছ কমে যাওয়ায় শুঁটকি উৎপাদনে ধস নেমেছে। মৎস্য বিভাগ বলছে, শুঁটকি তৈরির জন্য যে কাঁচামাল দরকার তা পর্যাপ্ত পরিমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। আগে হাওরে ১৫০ প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। এখন সেখানে মাত্র ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। মাছ কমে যাওয়া এবং দাম বেড়ে যাওয়ায় এই পেশা থেকে অনেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
হবিগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ওয়াহিদুর রহমান মজুমদার বলেন, দিনে দিনে হবিগঞ্জে শুঁটকি উৎপাদন কমে যাচ্ছে। অনেকে এই পেশায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। আমরা মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য হাওরে বিভিন্ন ধরনের অভিযান করছি, বিশেষ করে পোনা মাছ সংরক্ষণের জন্য। যদি পোনা মাছ সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় তাহলে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া চায়না দুয়ারি ও কারেন্ট জালের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত।
জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলার আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং, লাখাই ও নবীগঞ্জ উপজেলার ৫ শতাধিক মানুষ শুঁটকি পেশার সঙ্গে জড়িত। গত অর্থবছরে জেলার সদর উপজেলায় ২৪০, বানিয়াচংয়ে ৫৭৫, নবীগঞ্জে ২৭, চুনারুঘাটে ২১২, লাখাইয়ে ২৩১ এবং আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় ৩৪২ মেট্রিকটন শুঁটকি উৎপাদন হয়েছে যা বিগত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ কম।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হবিগঞ্জে উৎপাদিত শুঁটকিতে কোনো ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না। তাই এর স্বাদ ও কদর সবসময় আলাদা। কিন্তু এ বছর শুঁটকি উৎপাদনকারীদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে। উৎপাদনকারীরা বলছেন, বাজার থেকে উচ্চমূল্যে পাইকারি দামে শোল, বাইম, পুঁটি, টেংরা ইত্যাদি মাছ কিনে এনে শুঁটকি তৈরি করা হয়। তবে হাওরে এবং নদ-নদীতে পানি কমে যাওয়ায় চাহিদামতো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। আবার চাহিদাসম্পন্ন মাছের দাম অনেক বেশি।
তারা আরও বলছেন, আগে শহরের উমেদনগরে মাসে ৮টি পাইকারি শুঁটকির হাট বসলেও এখন বসছে মাত্র ৪টি। অন্যদিকে শ্রমিকরা বলছেন, সকাল ৬টা থেকে কাজ শুরু করে দৈনিক ৫ ঘণ্টা করে মাসে ১০ হাজার টাকা মজুরি পান তারা, যা পর্যাপ্ত নয়।
এদিকে সরেজমিন পাইকারি বাজারে দেখা যায়, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রেতারা এসেছেন হবিগঞ্জের সুস্বাদু শুঁটকি মাছ কিনতে। সিরাজগঞ্জ থেকে পাইকারি শুঁটকি কিনতে আসা ব্যবসায়ী ফরিদুর রহমান বলেন, আগে প্রতি মাসে ৭-৮ বার হবিগঞ্জে শুঁটকি হাট করতে আসতাম। এখন মাসে ২-৩ বার আসি। কারণ চাহিদামতো শুঁটকি পাওয়া যায় না। আবার দামও আগের তুলনায় অনেক বেশি। এ ছাড়া পরিবহন খরচও বেড়ে গেছে। তাই সব মিলে এই ব্যবসায় অনেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।
উমেদনগর হাটে শুঁটকির আড়তদার কামরুল ইসলাম বলেন, আগে এই হাটে হরেক রকমের শুঁটকি বিক্রি হতো। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রেতারা এসে নিয়ে যেত। আমাদের এখানে উৎপাদিত শুঁটকি সুস্বাদু ও মজাদার বলে কদর আলাদা।