ইসিতে আর থাকছে না এনআইডি সেবা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ মার্চ ২০২৫, ৭:২৭:১৪ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: নির্বাচন কমিশনের অংশ হিসেবে আর থাকছে না জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ। তৈরি করা হচ্ছে সিভিল রেজিস্ট্রেশন নামে আলাদা কমিশন। স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত এই প্রতিষ্ঠানের অধীনে চলবে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম। ইসির একাধিক কর্মকর্তা মঙ্গলবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ইসি সূত্র জানায়, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন ২০২৩ বাতিলের জন্য রহিতকরণ অধ্যাদেশ হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের আলোকে জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি নিয়ে স্বাধীন কমিশন গঠন করছে অন্তর্র্বতী সরকার। ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ হতে বিদ্যমান সিভিল রেজিস্ট্রেশন কমিশন (সিভিআরএস) এর মোড়ক পরিবর্তন করে কমিশনের ব্যানারে অধ্যাদেশ করার প্রস্তাব করেছে। সিভিল রেজিস্ট্রেশন কমিশন (সিভিআরএস) খসড়া অধ্যাদেশ-২০২৫ ঢাকা মেইলের প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে।
ওই খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর খসড়া প্রণয়ন সময়োপযোগী। তবে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন না রাখিয়া সম্পূর্ণ স্বাধীন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালনা করা সমীচীন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্মনিবন্ধন সনদ, জন্মনিবন্ধন সনদের ভিত্তিতে এনআইডি এবং এনআইডির থিত্তিতে পাসপোর্ট প্রাপ্তির প্রক্রিয়ায় অনাবশ্যক জটিলতা এবং জনদুর্ভোগ পরিহার করা আবশ্যক। এই উদ্দেশ্যে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সহিত আলোচনাপূর্বক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ পরিমার্জন করিয়া উপদেষ্টা পরিষদ-বৈঠকে উপস্থাপন করিতে পারে।
এদিকে ইসিতে এনআইডি সেবা না থাকার বিষয় নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আবেগঘন বার্তা দিয়েছেন এক কর্মকর্তা। সব কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, ‘আপনারা দুঃখ পেলেও সত্য, আপনাদের কাছে অপ্রিয় হলেও সত্য, আপনারা শুনে হতাশ হলেও এটা সত্য যে, আমাদের সবার কোলে পিঠে করে মানুষ করা এনআইডি আমাদের আর নেই।’
জানা যায়, জন্ম নিবন্ধন, এনআইডি ও পাসপোর্ট সেবা নিয়ে দুর্ভোগ-জটিলতা নিরসনে স্বতন্ত্র কমিশন প্রতিষ্ঠায় ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন (কমিশন), ২০২৫’ নামে এই অধ্যাদেশ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে স্থানীয় সরকার, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের মতামতও গ্রহণ করছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের এ বৈঠকে ইসি সচিবালয়ের প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া আইনের খসড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক মতামত প্রদান সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির প্রথম সভা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, এনআইডির কাঠামোগত অবস্থানটা আরো ব্যপ্ত করার জন্যে একটু বাড়ানোর জন্য কি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, এটার ব্যাপারে কেবিনেট ডিভিশন একটা উদ্যোগ নিয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এটা নিয়ে আলোচনা চলছে। এর বাইরে কিছু বলার অবকাশ নেই।
জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে আইন করা হয়েছিল, ক্ষমতার পালাবদলে আবার তা বাতিল চেয়ে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। তাদের দাবি অনুযায়ী আইনটি বাতিল হলে এনআইডি সেবা বরাবরের মতই নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকবে। এ প্রস্তাব অনুমোদনের পর সরকারকে এখন অধ্যাদেশ জারি করে আইনটি বাতিল ও আগের আইন বহাল করতে হবে।
এই ধারাবাহিকতায় সবশেষ গত ১৬ জানুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন বলেছিলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নিজেদের কাছে রাখতে নির্বাচন কমিশনের পাঠানো প্রস্তাব অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। এটা সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এরইমধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনও ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংস্থা’ নামে একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন সংবিধিবদ্ধ সংস্থা গঠন করার বিষয়ে সুপারিশ করেছে সরকারের কাছে।
অবশ্য এ নিয়ে বেশ আপত্তি জানিয়ে ২৬ জানুয়ারি সিইসি বলেছেন, ‘ভোটার এনআইডি কার্ড, ভোটার রেজিস্ট্রেশন যেটা উনারা বলেছেন পরবর্তী পর্যায়ে একটা আবার স্বাধীন অধিদপ্তর/পরিদপ্তরে হ্যান্ডওভার করার জন্য সাজেস্ট করছেন। …আরেকটা কর্তৃক্ষকে দিলে আমার কি তার ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে? ইটস ইমপসিবল।’