‘খরচ’ শহর-গ্রামের একই খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১১ মাসের সর্বনিম্ন
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ মার্চ ২০২৫, ১০:১৪:০৫ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : সদ্য শেষ হওয়া ফেব্রুয়ারি মাসে শহর ও গ্রামীণ পর্যায়ে খাদ্য খাতে ‘খরচ কমার’ তথ্য দিয়ে সরকার বলছে, এ সময়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ; যা গত ১১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। সবশেষ ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। এরপর থেকেই চড়তে থাকা মূল্যস্ফীতি আন্দোলনের মাস গত জুলাইয়ে দাঁড়িয়েছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে।
এক মাস আগেও, অর্থাৎ জানুয়ারিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ; সে হিসাবে মাসের ব্যবধানে কমল শূন্য দশমিক ৬২ শতাংশ পয়েন্ট।বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হালনাগাদ তথ্য বলছে, বছরের শুরুর মাস জানুয়ারিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার চার মাস পর এক অঙ্কের ঘরে নেমে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ হয়েছিল; ফেব্রুয়ারিতে এসে তা আরও কমে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ।
এর মানে হল, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় মিলেছে, তা ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে কিনতে ব্যয় করতে হয়েছে ১০৯ টাকা ৩২ পয়সা।পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, সার্বিক মূল্যস্ফীতি মাসের ব্যবধানে এতটা কমে যাওয়ার কারণ নিম্ন মুখী খাদ্য মূল্যস্ফীতি। শহর ও গ্রামে একই চিত্র মিলেছে।ফেব্রুয়ারিতে এসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১ দশমিক ৪৮ শতাংশ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে; যা জানুয়ারিতেও ছিল ১০ দশমিক ৭২ শতাংশ।
উল্টো খাদ্য বহির্ভূত খাতে ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি সামান্য বেড়ে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ; এক মাস আগেও যা ছিল ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। খাদ্যের দাম বড় রকমের কমার তথ্য মেলে শহরের খাদ্য খাতের মূল্যস্ফীতিতে।এতে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারিতে শহরের খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশে; জানুয়ারিতে যা ছিল ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসে মূল্যস্ফীতি কমল ১ দশমিক ৪৮ শতাংশ পয়েন্ট।
অন্যদিকে গ্রামের খাদ্য মূল্যস্ফীতি ফেব্রুয়ারিতে ১ দশমিক ৪৬ শতাংশ পয়েন্ট কমে ৯ দশমিক ১৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে; জানুয়ারিতে যা ছিল ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ।গ্রামে এর মধ্যে দশমিক ১২ শতাংশ পয়েন্ট খাদ্য বহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ফেব্রুয়ারিতে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ; জানুয়ারিতে যা ছিল ৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ।শহরে খাদ্য বহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে দশমিক ২ শতাংশ পয়েন্ট। ফেব্রুয়ারিতে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৭ শতাংশ; বছরের প্রথম মাসে যা ছিল ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ।নানা কারণে বাড়তে থাকা মূল্যস্ফীতি চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাইয়ে গিয়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে ঠেকে, যা অগাস্টে ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশে নেমেছিল। সেপ্টেম্বরে তা আরও কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে দাঁড়ায়।এরপর ২ দশমিক ০৭ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে অক্টোবরে দাঁড়ায় ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশে। পরের মাসে দশমিক ৫১ শতাংশ পয়েন্ট আরও বেড়ে যাওয়ায় কষ্ট বেড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষের।নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে সামান্য কমলেও দুই অঙ্কের মূল্যস্ফীতি নিয়েই ২০২৪ শেষ করেছিল বাংলাদেশ; ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে এই সূচক আরও কিছুটা কমেছে, তবে আগের বছরের জানুয়ারির চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেশিই রয়ে যায়।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করার পর দেশ হাল ধরে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই মুহাম্মদ ইউনূস মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন। মুদ্রা সরবরাহে লাগাম দিতে বারবার সুদের হার বাড়ানো হয়। কিন্তু সরকার মূল্যস্ফীতির নি¤œমুখিতার তথ্য দিলও নিত্যপণ্যের বাজারে সে অর্থে এখনও সুফল মেলেনি।