জাতীয় নির্বাচন কবে?
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ মার্চ ২০২৫, ১২:২০:৪৪ অপরাহ্ন
ডিসেম্বরে বা আগামী বছরের জুনে নির্বাচন : প্রধান উপদেষ্টা । | অস্থিরতার কারণে এ বছর নির্বাচন কঠিন হবে : নাহিদ
জালালাবাদ রিপোর্ট : বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনায় ডিসেম্বরে নির্বাচন। সরকার, ইসি, বিএনপি একইসুরে কথা বলছে। তবে ভিন্ন সুর জামায়াতের। এবার জামায়াতের সুরে সুর মেলালো নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি। তার বলছে, ডিসেম্বর নির্বাচন সম্ভব নয়। জামায়াত বলে আসছে আগে স্থানীয় নির্বাচন। ওদিকে, গতকাল প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসও দুটি সময়েরর কথা উল্লেখ করলেন-ডিসেম্বরে বা আগামী বছরের জুনে হবে জাতীয় নির্বাচন। এ নিয়ে ফের আলোচনা সর্বত্র। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে নির্বাচন আসলে কবে?
এদিকে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কিংবা যে কোনো ফৌজদারী মামলার বিচার একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। ফলে ডিসেম্বরের আগে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করা আদৌ সম্ভব কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে তবে কি শেখ হাসিনার বিচারের আগে নির্বাচন নিয়ে নতুন রাজনৈতিক দলটির আপত্তি রয়েছে? ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণপরিষদ নির্বাচন দাবি করা এই দলটি নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে?
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফাঁসির মঞ্চে না নেয়া অবধি কেউ যেন ভুলক্রমেও নির্বাচনের কথা না বলে’ অথবা ‘চলতি বছর ডিসেম্বরে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন হলে গণপরিষদ ও সংসদ নির্বাচন একসাথে করা যেতে পারে’- নির্বাচন ঘিরে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাদের এমন বক্তব্য নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. ইউনূস গতকাল বলেছেন, এ বছরের ডিসেম্বরে বা আগামী বছরের জুনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে।
তবে নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরেই নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছে। মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।সিইসি বলেছেন, সরকার প্রধান যেখানে একটি টাইম ফ্রেম ঘোষণা করেছেন, আমরা ডিসেম্বর ধরে নিয়েই প্রস্তুতি নিচ্ছি।জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, যেই সময়টুকু এই সরকারের আছে নির্বাচনের আগেই খুনী হাসিনাকে বাংলাদেশে নিয়ে এসে ফাঁসির মঞ্চে নিতে হবে। যত দিন না আমরা খুনী হাসিনাকে ওই ফাঁসির মঞ্চে না দেখছি এই বাংলাদেশে কেউ যেন ভুলক্রমেও ওই নির্বাচনের কথা না বলে।
গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল-বিশেষ করে বিএনপি-দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানিয়ে আসছে।
‘রাইট টু ফ্রিডম’-এর প্রেসিডেন্টকে প্রধান উপদেষ্টা :
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ছয়টি কমিশনের সুপারিশ করা সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে সংলাপ শেষে রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদ (জুলাই চার্টার) স্বাক্ষর করবে। অন্তর্বর্তী সরকার এই সনদের সুপারিশগুলোর কিছু অংশ বাস্তবায়ন করবে এবং বাকিগুলো বাস্তবায়ন করবে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বরে বা আগামী বছরের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ‘রাইট টু ফ্রিডম’-এর প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম বি মাইলাম বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। এ সময় ‘রাইট টু ফ্রিডম’–এর নির্বাহী পরিচালক জন ড্যানিলোউইচ উপস্থিত ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এই কথা জানানো হয়েছে।
ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস কূটনীতিকদের বলেন, ছয়টি কমিশনের সুপারিশকৃত সংস্কারের ওপর সংলাপ শেষে রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদ স্বাক্ষর করবে। ‘জুলাই চার্টার আমাদের পথ প্রদর্শন করবে’, উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই সনদের সুপারিশগুলোর কিছু অংশ বাস্তবায়ন করবে এবং বাকিগুলো বাস্তবায়ন করবে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের আগে কম সংস্কারে সম্মত হলে চলতি বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন হবে। অথবা আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাবেক দুই কূটনীতিকের সাক্ষাতে বর্তমান বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্ক, রোহিঙ্গা সংকট, আগের আমলে চুরি যাওয়া কোটি কোটি ডলার উদ্ধার, সার্ক পুনরুজ্জীবিত করার প্রধান উপদেষ্টার প্রচেষ্টাসহ নানা বিষেেয় আলোচনা হয়।
অস্থিরতার কারণে এ বছর নির্বাচন কঠিন হবে :
অন্তর্বর্তী সরকার এখনো পুরোপুরি জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি এবং এ বছর জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন হবে- রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে একথা বলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম।
শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন গণ বিক্ষোভে, যা মাঝে মাঝে সহিংস হয়ে ওঠে, তার মুখে গত আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গঠিত হওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস চলতি মাসেই বলেছেন, অস্থিরতা চলতে থাকলেও ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘গত সাত মাসে আমরা সবাই আশা করেছিলাম, স্বল্পমেয়াদি সংস্কারের মাধ্যমে পুলিশিং ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যাবে। এটা একটা মাত্রায় ঘটেছে, কিন্তু আমাদের প্রত্যাশা মতো হয়নি।’
এনসিপি প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর দেওয়া প্রথম সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও পুলিশিং ব্যবস্থায় আমি মনে করি না, একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হবে।’
গত মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ ছেড়ে ছাত্র–তরুণদের উদ্যোগে গঠিত দল জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়কের দায়িত্ব নেন নাহিদ ইসলাম। তিনিই প্রথম রাজনীতিক, যিনি নির্বাচন আয়োজন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া সময়সীমা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করলেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বাধীন দলটি বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিকে উল্লেখযোগ্যভাবে নতুন চেহারা দিতে পারে। কয়েক দশক ধরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দল আওয়ামী লীগ এবং তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এদেশের রাজনীতিতে আধিপত্য বজায় রেখে আসছে। এই দলগুলো দ্রুত নির্বাচনের দাবি করছে। এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।