ঐকমত্যের ভিত্তিতেই ‘জুলাই চার্টার’
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ মার্চ ২০২৫, ১২:৩০:০২ অপরাহ্ন
‘স্প্রেড শিট’ পর্যালোচনা করছে রাজনৈতিক দলগুলো | এ মাসেই কমিশনের সঙ্গে দলগুলোর সংলাপ
জালালাবাদ রিপোর্ট : ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘জুলাই চার্টার’ ঘোষণা করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এ মাসের মাঝামাঝিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে আলোচনায় বসবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদনের লিখিত কপিও এরইমধ্যে দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এবং নিজেদের মধ্যে আলাপের পরই তারা মতামত জানাবে।
‘স্প্রেড শিট’ এর আলোকে ১৩ মার্চের মধ্যে দলগুলোকে মতামত জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে। মতামত পাওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা শুরু করবে কমিশন। ঐকমত্য কমিশন বলেছে, রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার কমিশনের যেসব সুপারিশে একমত হবে, সেগুলোর ভিত্তিতে তৈরি হবে ‘জুলাই চার্টার’ বা জুলাই সনদ।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সমন্বয়ের কাজটি করছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার। তিনি বলেন, মতামত চেয়ে বার্তাবাহক মারফত ৩২টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে ‘স্প্রেড শিট’ পাঠানো হয়েছে।
বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এখন এসব প্রতিবেদন পর্যালোচনা করছে। এরপর কমিশনের সাথে তাদের বৈঠক হবে। তখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তারা তুলে ধরবে।
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, দ্রুতই দলগুলোর সাথে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করবেন তারা। তার আশা, নির্ধারিত সময়ের আগেই এই কমিশন তাদের কাজ শেষ করতে পারবে।
আগামী মাসের মাঝামাঝি দলগুলো ও জোটের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আলাদা আলাদা বৈঠক শুরু করতে পারে বলে জানা গেছে। সংবিধান, নির্বাচনি ব্যবস্থা, বিচারবিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশ বিভাগের সংস্কারের জন্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার প্রথম দফায় যে ছয়টি কমিশন গঠন করেছে সেই কমিশনগুলোর প্রধানদের নিয়েই জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়েছে। এর প্রধান ড. ইউনূস নিজেই।
দলগুলো এখন কী করছে :
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সংস্কার কতটা হওয়া দরকার এ নিয়ে বড় দুটি দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে, যা দলটির নেতারা প্রকাশ্যেই বলে আসছেন।বিএনপি বরাবরই জরুরি সংস্কারগুলো বাস্তবায়নের পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের দাবি করে আসছে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বক্তব্য-বিবৃতিতে ‘আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন’ নীতিই উঠে এসেছে। ইতোমধ্যে সরকারের কাছেও তারা তা উপস্থাপন করেছেন।
এমন প্রেক্ষাপটে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ঐকমত্য কমিশনের সাথে দলগুলোর প্রথম বৈঠকে কয়েকটি দল বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের রিপোর্টগুলো পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনার জন্য এগুলোর ‘হার্ড কপি’ দেয়ার প্রস্তাব করেছিলো।
সে আলোকে কমিশনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই সব দলের কাছেই রিপোর্টগুলোর কপি পাঠানো হয়েছে। তারা এগুলো পর্যালোচনার কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছে কয়েকটি দল। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী সম্প্রতি বলেছেন, সরকারের কাছ থেকে পাওয়া প্রতিবেদন পর্যালোচনার পর তারা কমিশনের কাছে তাদের মতামত জানাবেন।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার জানিয়েছেন, তারাও সরকারের পাঠানো সংস্কার প্রতিবেদনগুলোর কপি পেয়েছেন। রিপোর্টগুলো রাজনৈতিক দলগুলোকে দেয়ার জন্য আমরা আগেই প্রস্তাব দিয়েছিলাম। সেটি আমরা এখন পর্যালোচনা করছি। এরপর যখন কমিশনের সাথে ওয়ান-টু-ওয়ান বৈঠক হবে তখন আমরা আমাদের অভিমত তাদের জানিয়ে দেবো।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দায়িত্ব নেয় অন্তর্র্বতী সরকার। এই সরকারের অন্যতম লক্ষ্য দেশের বিভিন্ন খাতে সংস্কার আনা। এ লক্ষ্যে সংস্কার প্রস্তাব তৈরির জন্য গত বছরের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন গঠন করে সরকার। গত ফেব্রুয়ারি মাসে এই ছয়টি কমিশন তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এসব কমিশনের প্রধানদের নিয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে সরকার। ঐকমত্য কমিশন বলেছে, রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার কমিশনের যেসব সুপারিশে একমত হবে, সেগুলোর ভিত্তিতে তৈরি হবে ‘জুলাই চার্টার’ বা জুলাই সনদ।