কূটনীতিকদের সম্মানে জামায়াতের ইফতার পার্টি সম্পন্ন
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ মার্চ ২০২৫, ১০:১৭:৫০ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : জামায়াতের উদ্যোগে কুটনীতিকদের সম্মানে ইফতার পার্টি সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার বিকাল ৫টায় রাজধানী ঢাকার গুলশানস্থ হোটেল ওয়েস্টিন-এ বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, চ্যার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্সসহ কূটনীতিকদের স্বাগত জানান জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান।
ইফতার পার্টিতে বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার মিস. সারাহ কুক, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মিসেস মেরি মাসদুপি, চীনের রাষ্ট্রদূত মি. ইয়ো ওয়েন, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার গিরি গোরিওভিস কোজিন, অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশনার মিস. সুসান রেলি, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মিকায়েল মিলার, ইরানের রাষ্ট্রদূত মি. মানসুর চাভোশি, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মি. রমিস সেন, পাকিস্তানের হাইকমিশনার কামরান ধাংগল, দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পলিটিক্যাল এ্যাফেয়ার্স জেমস এ. স্টুয়ার্ট এবং মরক্কো, নেদারল্যাস, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, ভারত, ভুটান, সিঙ্গাপুর, ব্রুনেই, ডেনমার্ক, মালয়েশিয়া, ইরাক, ভ্যাটিকান সিটি, কানাডা, ব্রাজিল, আলজেরিয়া, কসোভো, জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার প্রতিনিধি, আইআরআই এবং এনডিপি’র আবাসিক প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকবৃন্দ শরীক হন।
এছাড়া ইফতার পার্টিতে জামায়াতের নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের ও মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আজাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, এডভোকেট মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, এড. এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, আবদুর রব ও অধ্যক্ষ মোঃ ইজ্জত উল্লাহ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এড. মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোঃ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও অফিস সেক্রেটারি মাওলানা আফম আব্দুস সাত্তার, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম প্রমুখ।
ইফতারির পূর্ব মুহূর্তে ডা. শফিকুর রহমান ইফতার পার্টিতে উপস্থিত কূটনীতিকগণকে মুবারকবাদ জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, আমরা সর্বপ্রথম মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, যিনি আমাদের দীর্ঘ ১১ বছর পর এই ইফতার পার্টি আয়োজন করার সুযোগ করে দিয়েছেন। জামায়াতে ইসলামী দীর্ঘদিন ধরে আমাদের বিদেশি বন্ধুদের সম্মানে ইফতার পার্টির ঐতিহ্য ধরে রেখেছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের ইফতার পার্টি আয়োজন করতে দেয়নি। এমনকি কিছু অনুষ্ঠানের জন্য ভেন্যু বুকিং ও অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও, শেষ পর্যন্ত সরকারের বাধার কারণে আমাদের সেইসব আয়োজন বাতিল করতে হয়েছে। আজ আমরা আবারও আপনাদের এই মর্যাদাপূর্ণ ইফতার মাহফিলে স্বাগত জানাচ্ছি। একইসঙ্গে আমরা জুলাই বিপ্লবের সকল শহীদ ও নির্যাতিতদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি, যাঁদের আত্মত্যাগের ফলে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো স্বৈরশাসন থেকে মুক্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা এমন এক সময়ে একত্রিত হয়েছি, যখন সমগ্র মুসলিম বিশ্ব পবিত্র রমজানের মাহাত্ম্য উপভোগ করছে। রমজান শুধুমাত্র সিয়াম সাধনার মাস নয়, এটি আত্মশুদ্ধি, আত্মসংযম ও আত্মনিবেদন করার মাস। রোজা রাখার মাধ্যমে আমরা নিঃস্ব ও অভাবগ্রস্ত মানুষের কষ্ট অনুধাবন করি যাতে আমাদের হৃদয়ে সহমর্মিতার বীজ বপন হয়। সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকা শুধু শারীরিক অনুশীলন নয়; বরং এটি আত্মার পরিশুদ্ধি, আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করা এবং ন্যায়পরায়ণতার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আমাদেরকে সাহায্য করে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি, যাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে সহনশীলতা ও পারস্পরিক সম্প্রীতি বজায় থাকে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই জামায়াত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ৯০-এর দশকের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে জামায়াত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। জামায়াত অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রস্তাব দেয় এবং এর পক্ষে জনমত তৈরি করেছে। কিন্তু গত ১৫ বছরের আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতকে দমন করার সবধরনের অপচেষ্টা চালিয়েছে। জামায়াতের পাঁচজন শীর্ষ নেতাকে ফাঁসি দিয়েছে। ৬ জন নেতাকে কারাগারে ও পুলিশের হেফাজতে নির্মমভাবে হত্যা করাসহ হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। অনেকে গুমের শিকার হয়েছেন এবং অনেকেই স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে গেছেন। এই নিষ্ঠুরতা সত্ত্বেও জামায়াত এবং এর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির জুলাই বিপ্লবে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোর নিরাপত্তা এবং সাধারণ মানুষের জানমালের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
বাংলাদেশ যেন আর কখনো পথ হারিয়ে না ফেলে সে জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। জামায়াত এই সংস্কার উদ্যোগকে স্বাগত জানায় এবং ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পরামর্শ ও সুপারিশ প্রদান করেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বশীল (পিআর) নির্বাচনব্যবস্থা চালুর পক্ষে আমরা জোরালো মতামত ব্যক্ত করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, এই ব্যবস্থায় জনগণের মতামত সঠিকভাবে প্রতিফলিত হবে এবং ফ্যাসিবাদী শাসন পুনরায় ফিরে আসার পথও রুদ্ধ হবে। এ ছাড়া লক্ষ লক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির দাবিও আমরা তুলে ধরেছি। আমরা আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার আমাদের এই আহ্বানে সাড়া দেবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
আমরা মনে করি, একটি সুষ্ঠু রাজনৈতিক ব্যবস্থা টেকসই শান্তি ও উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। আমাদের দায়িত্ব হলো প্রত্যেক নাগরিকের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া, প্রতিটি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা এবং দেশ গঠনে সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়া। জামায়াতে ইসলামী দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, বাংলাদেশে সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু বলে কিছু নেই। এদেশের প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার রয়েছে।
আপনাদের ইফতার পার্টিতে উপস্থিত হওয়ার জন্য আমি আপনাদের প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জাানাচ্ছি। আপনাদের এই ইফতার পার্টিতে অংশগ্রহণে আমরা উৎসাহিত হয়েছি। আসুন, আমরা আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করি এবং সারাবিশ্বে শান্তি, ন্যায়বিচার ও সাম্য প্রতিষ্ঠা করি।