সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশীর দ্বিতীয় নিবাস মালয়েশিয়া
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ মার্চ ২০২৫, ৫:৫৪:০৭ অপরাহ্ন
আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া: মালয়েশিয়ায় দ্বিতীয় নিবাস গড়ায় বাংলাদেশীদের অবস্থান ওপরের দিকেই রয়েছে। মাই সেকেন্ড হোম (এমএম২এইচ) কর্মসূচির মাধ্যমে দেশটিতে দ্বিতীয় নিবাস গড়েছেন ৩ হাজার ৬০৪ বাংলাদেশী। সর্বশেষ তথ্যমতে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের ৫৮ হাজার ৪৬৮ জন নাগরিক মালয়েশিয়ায় সেকেন্ডহোম গড়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন ৩ হাজার ৬০৪ বাংলাদেশী।
রোববার দেশটির পর্যটন, শিল্প ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সেরি তিওং কিং সিন এক বিবৃতিতে বলেছেন মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম (এমএম২এইচ) প্রোগ্রামে বিশ্বের যেকোনো দেশের আবেদনকারীদের জন্য উন্মুক্ত। তিনি বলেন, এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে বিদেশীরা বিভিন্ন যোগ্যতার মানদন্ডের অধীনে বসবাসের জন্য আবেদন করতে পারবেন এবং যারা সফল হবেন তারা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একটি বসবাসের পাস পাবেন।
এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যটন, শিল্প ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সেরি তিয়ং কিং সিং সংসদে বলেছেন, মোট অনুমোদনের মধ্যে ৫৭ হাজার ৬৮৬টি অনুমোদন পূর্বের নীতির আওতায় প্রদান করা হয়েছে, যার মধ্যে ২৮ হাজার ২০৯ জন মূল আবেদনকারী এবং ২৯ হাজার ৪৭৭ জন ডিপেন্ডেন্ট রয়েছে। তবে কোন দেশের কতজন রয়েছে তা বলেননি তিনি।
গত বছরের ২৯ মার্চ পর্যটন শিল্প ও সংস্কৃতি মন্ত্রী আরেক বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন, দেশটিতে গত ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত ৫৬ হাজার ৬৬ জন এক্টিভ সেকেন্ড হোম পাস হোল্ডার রয়েছেন। এর মধ্যে ২৪ হাজার ৭৬৫ জন পাসধারী নিয়ে শীর্ষে ছিলেন চীন। এরপরে যথাক্রমে দক্ষিণ কোরিয়ার ৪ হাজার ৯৪০ জন, জাপানের ৪ হাজার ৭৩৩ জন এবং বাংলাদেশের ছিলো ৩ হাজার ৬০৪ জন।
মন্ত্রী জানিয়েছেন, নতুন নীতির আওতায় এখন পর্যন্ত ৭৮২টি অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে, যার মধ্যে ৩১৯ জন মূল আবেদনকারী এবং ৪৬৩ জন ডিপেন্ডেন্ট রয়েছে। মন্ত্রী টিয়ং আরও জানান, নতুন শর্তাবলীর অধীনে অনুমোদিত মাই সেকেন্ড হোম পাসধারীদের কাছ থেকে সরকার আনুমানিক ২৩৩.৮ মিলিয়ন রিঙ্গিত স্থায়ী আমানত এবং ২২২ মিলিয়ন রিঙ্গিত রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ এসেছে।
২০২৩ সালের জুন মাসে, মাই সেকেন্ড হোম কর্মসূচির জন্য সর্বশেষ নির্দেশিকা প্রকাশ করে, যেখানে তিনটি ক্যাটাগরি নির্ধারণ করা হয়- সিলভার, গোল্ড, এবং প্লাটিনাম। এছাড়াও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের জন্য একটি বিশেষ ক্যাটাগরি সংযোজন করা হয়। নতুন নীতির অধীনে, এই কর্মসূচি শুধুমাত্র মালয়েশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকা দেশের নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং আবেদনকারীর ন্যূনতম বয়স হতে হবে ২৫ বছর এবং প্রতি বছর অন্তত ৯০ দিন মালয়েশিয়ায় অবস্থান করতে হবে।
প্লাটিনাম ক্যাটাগরির জন্য ১০ লাখ মার্কিন ডলার, গোল্ড ক্যাটাগরির জন্য ৫ লাখ মার্কিন ডলার এবং সিলভার ক্যাটাগরির জন্য ১ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার স্থায়ী আমানত হিসেবে বাধ্যতামূলক করেছে। এছাড়া, আবেদনকারীদের মালয়েশিয়ায় ৬ লাখ রিঙ্গিত থেকে ২০ লাখ রিঙ্গিত মূল্যের সম্পত্তি কিনতে হবে যা নির্ভর করবে তাদের বেছে নেওয়া ভিসা ক্যাটাগরির উপর।
জরিপ বলছে, গত ৭ বছরে বাংলাদেশীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২৪ গুণ। দেশটিতে বাস করা বাংলাদেশী ও নানা মহলের কাছ থেকে জানা গেছে, সেকেন্ড হোম করতে যে টাকার প্রয়োজন হয়, তা বাংলাদেশ থেকে বৈধ পথে যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাংলাদেশী বলেন, মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোমের জন্য ব্যবসায়ীদের অনেক সুবিধা দেয়। কেউ দেশের ‘আনরেষ্ট’ থেকে বাঁচতে, আবার কেউ তার সম্পদ সরাতে সেকেন্ড হোমের আশ্রয় নিয়েছেন। ওখানে একজন বাংলাদেশী ব্যক্তি গড়ে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা খরচ করলেই সেকেন্ড হোমের সুবিধা পান।
প্রবাসী বাংলাদেশী বলেন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী অধ্যুষিত বেশ কয়েকটি এলাকা গড়ে উঠেছে। সেখানকার অধিবাসীরা ফ্ল্যাট কিনে থাকছেন। আর ফ্ল্যাটের দাম কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়েও কম। কেউ কেউ বাড়ি কিনেছেন, আবার কেউ কিনেছেন ফ্ল্যাট। মালয়েশিয়ার শিক্ষা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাও বাংলাদেশীদের সেকেন্ড হোম বনানোর আরেকটি কারণ।মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোমের ব্যাপারে অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন করে না। বিনিয়োগের উৎস নিয়ে প্রশ্ন করে না। বাংলাদেশে একটা ফ্ল্যাট কিনলে অর্থের উৎস জানাতে হয়। তাই বাংলাদেশে যাদের অবৈধ আয় আছে বা যারা অর্থের উৎস জানাতে অক্ষম, তারা মালয়েশিয়াকে সেকেন্ড হোম বানাচ্ছেন আর হুন্ডির মাধ্যমে এসব অর্থ পাচার করছেন। তবে কেউ কেউ আছেন যারা বৈধভাবেও এটা করছেন। কিন্তু এতে অর্থনীতির ক্ষতি হচ্ছে। দেশের টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে যা দেশে বিনিয়োগ হতে পারত, তা বিদেশে বিনিয়োগ হচ্ছে অবৈধ টাকাও দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশী বসবাস করছেন। অনেকেই বলছেন, মালয়েশিয়া টাকার উৎস নিয়ে প্রশ্ন না করায় বাংলাদেশীরা এই সুযোগ নিচ্ছেন। এদিকে, মালয়েশিয়াতে কয়েক হাজার বাংলাদেশী রেস্টুরেন্টের ব্যবসা গড়েছেন। ওই দেশে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের পাঁচতারা হোটেল ব্যবসা, গার্মেন্ট কারখানা, ওষুধশিল্পসহ নানা খাতে বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে। অনেকে রাজধানী কুয়ালালামপুরসহ বড় বড় শপিংমলে দোকানও কিনেছেন। অনেকে স্বর্ণ, খেলনা, তৈরি পোশাকের ব্যবসা করছেন। এদের কেউই বৈধভাবে অর্থ স্থানান্তর করেননি। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই তারা মালয়েশিয়াতে টাকা নিয়ে গেছেন। অনেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছেন কৃষি খাতসহ বিভিন্ন খাতে।