মাগুরার শিশু ধর্ষণের বিচার ১৮০ দিনের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ মার্চ ২০২৫, ১০:০৮:৩৮ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: মাগুরায় আট বছরের শিশু ধর্ষণের বিচার ১৮০ দিনের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। নারী শিশু নির্যাতন ও দমন ট্রাইব্যুনালকে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর আগে ধর্ষণের শিকার শিশুটির সব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সরানোর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করার পর রোববার হাইকোর্টের একই বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
গত বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) রাতে মাগুরা শহরে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে আট বছরের শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়। ঘটনার পরদিন ওই শিশুকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। শুক্রবার (৭ মার্চ) তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। এরপর শনিবার ঢাকা মেডিকেল থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) নেওয়া হয় শিশুটিকে। সেখানেই তার চিকিৎসা চলছে।
এদিকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা করেছেন শিশুটির মা। মামলায় শিশুটির বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়েছে। তারা আগে থেকেই পুলিশের হেফাজতে ছিলেন। মামলার এজাহারে তিনি অভিযোগ করেন, মেয়ের স্বামীর সহায়তায় তার বাবা (শ্বশুর) শিশুটিকে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি মেয়ের শাশুড়ি ও ভাশুর জানতেন। তারা ঘটনা ধামাচাপা দিতে শিশুটিকে হত্যাচেষ্টা চালান।
ক্ষোভে ফুঁসছে সারাদেশ: এদিকে এ ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা দেশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে তীব্র প্রতিবাদ। শনিবার মধ্যরাতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গঠিত হয় ‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ। ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে এ ঘটনায় জড়িতদের প্রকাশ্যে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
শিশুটির এমন অবস্থার প্রতিবাদে মধ্যরাতে রাস্তায় নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে আলটিমেটাম দেন তারা। এসময়ের মধ্যে দাবি মানা না হলে রোববার (৯ মার্চ) রাতে ফের রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করবেন তারা। শনিবার (৮ মার্চ) দিনগত রাত আড়াইটার দিকে ছাত্রীদের পক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা এ ঘোষণা দেন। এরপর তারা দুই ঘণ্টার বেশি সময় বিক্ষোভ সমাবেশ করে রাজু ভাস্কর্য ছেড়ে আবাসিক হলে ফিরে যান।উমামা ফাতেমা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার নারীদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। পুলিশ-সেনাবাহিনীসহ কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন না। মাগুরায় আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের মতো অমানবিক ও নৃশংস ঘটনার পরও এখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধর্ষককে আদালতে উপস্থাপন করেনি। বাধ্য হয়ে আমরা মধ্যরাতে রাস্তায় নেমে এসেছি।
সিএমএইচে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা: শিশুটিকে দেখতে রোববার সকালে ঢাকা সেনানিবাসস্থ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) যান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)। উপদেষ্টা শিশুটির চিকিৎসার খোঁজখবর নেন ও সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। এসময় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, মাগুরায় আট বছরের শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় মাগুরা সদর থানায় চার জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং মামলার এজাহারভুক্ত চার আসামিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তিনি বলেন, দোষীরা যেন কোনোভাবেই ছাড় না পায় -এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোচ্চার রয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, আমি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নারী হয়রানি ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। এ যাবৎ নারীর প্রতি যত সহিংসতা হয়েছে সেগুলোর তালিকা করে দ্রুত তদন্ত সম্পন্নপূর্বক আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দিয়েছি। তিনি বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ধর্ষণের ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করা হবে এবং কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।
তিনি আরও বলেন, নারীরা নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে ঘরে-বাইরে দায়িত্ব পালন করবে। এতে যারা তাদের বাধা দিতে আসবে, সহিংসতা করতে আসবে তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবে না। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন ও সোচ্চার থাকতে হবে। পারিবারিক, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধ লালন করতে হবে।