বাড়ছে না বিদ্যুতের দাম : ভর্তুকি কমানোর সিদ্ধান্ত
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ মার্চ ২০২৫, ১০:১৮:১৭ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : পতিত আওয়ামী স্বৈরাচারী সরকারের আমলে দেশে বার বার বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। দেড় দশকে আওয়ামী আমলে পাইকারি পর্যায়ে ১২ বার ও খুচরা পর্যায়ে ১৪ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। এছাড়া বছরে বিদ্যুতের দাম ৪ বার করে বাড়িয়ে আগামী ৩ বছরের মধ্যে এই খাতের সব ভর্তুকি তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়।তবে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর এখনো বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়নি। এমনকি আইএমএফ-এর চাপ সত্ত্বেও বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর পথেই হাঁটছে সরকার। পাশাপাশি বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমাতে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে সাশ্রয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ, সরবরাহ ও অপ্রয়োজনীয় ব্যয় এবং বিদ্যুৎ সংস্থাগুলোর ব্যয় কমিয়ে ভর্তুকি কমানো হবে। ইতোমধ্যেই এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ এবং বিক্রয়মূল্যের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনার জন্য ৩ বছরের (২৬-২৮ সাল) পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। রোডম্যাপে শুল্ক সমন্বয় এবং প্রয়োজনে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করার ব্যবস্থাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। আগামী মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে বৈঠকের আগে একটি ভার্চুয়াল সমন্বয় সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. জিয়াউল আবেদীন বৃহস্পতিবার আইএমএফের বর্ধিত ঋণ সুবিধা (ইসিএফ) এবং স্থিতিস্থাপকতা ও টেকসই সুবিধা (আরএসএফ)-এর অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন।
বিদ্যুৎ বিভাগের মতে, সরকার বিদ্যুৎ শুল্ক সমন্বয় না করে দুই বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ ভর্তুকি বাতিল করার পরিকল্পনা করছে।বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকার ২০২৬ অর্থবছরে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শুল্ক বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে। আমাদের এলাকাভিত্তিক বিদ্যুৎ শুল্ক চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, গুলশান, বনানী এবং ধানমন্ডির মানুষদের তুলনামূলকভাবে বেশি শুল্ক দিতে হবে।
জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিভাগ ইতোমধ্যেই বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিক্রয় খরচ কমাতে আইএমএফের কারিগরি সহায়তায় (টিএ) রোডম্যাপ বাস্তবায়নের জন্য একজন আইএমএফ পরামর্শদাতা নিয়োগের চেষ্টা করছে। বিদ্যুতের শুল্ক আরও টেকসই করে তুলতে সরকার ইতিমধ্যেই খরচ ১০ শতাংশ সাশ্রয় করার জন্য নয়টি কৌশলগত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছে। আইএমএফের অনিচ্ছা সত্ত্বেও এটি রোডম্যাপে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ২৪-২৫ অর্থ বছরে আদানির কয়লা বাবদ ১১ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা সাশ্রয়ের আশা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়াতে চায় না। এখন আমাদের এমন পরিকল্পনাও নেই। আইএমএফ আমাদেরকে আগেই বলেছিলো দাম বাড়াতে, আমরা বাড়াইনি।
তিনি বলেন, আমরা বিদ্যুৎ খাতে অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা এবং খাতভিত্তিক সংস্কারের মাধ্যমে ভর্তুকির বোঝা কমিয়ে আনব। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত ব্যয়-কমানোর পদক্ষেপের মাধ্যমে ১১ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব। এই সাশ্রয় জনসাধারণের উপর আর্থিক বোঝা কমাবে। তিনি আরও বলেন, বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় কমানো, বিদ্যুৎ সংস্থাগুলোর ব্যয় কমানো ও অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানোর মাধ্যমে ভর্তুকি কমিয়ে আনা হবে।