বর্ধিত সময়েও শেষ হলো না বাঁধের কাজ : দুশ্চিন্তায় কৃষক !
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ মার্চ ২০২৫, ৩:২০:৫৭ অপরাহ্ন
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কর্মসূচী আজ
এমজেএইচ জামিল : বর্ধিত ১০ দিনেও শেষ হয়নি সুনামগঞ্জের হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ। পাউবোর পক্ষ থেকে বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার দাবী জানালেও মাঠের চিত্র দিচ্ছে ভিন্ন তথ্য। এছাড়া কৃষকরা জানিয়েছেন অনেক জায়গায় কাজ এখনো বাকী। এরমধ্যে যদি বৃষ্টিপাত শুরু হলে নির্মাণাধিন বাঁধ ধসে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। ফলে এবারও ফসল তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক।
পানি উন্নয়ন বোর্ড পাউবোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। এখন শুধু দুর্বাঘাস লাগানো বাকী রয়েছে। সেগুলো এক সপ্তাহের মধ্যে সমাপ্ত হবে। তবে এর সাথে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। তারা বলেছেন, বাঁধের কাজ সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এখনো ৩০ ভাগের বেশী কাজ বাকী রয়েছে। পাউবো কর্মকর্তাবৃন্দ ঘরে বসে রিপোর্ট দিচ্ছেন। আর আমরা মাঠের খবর জেনে কৃষকদের সাথে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করেছি।
এদিকে নির্ধারিত সময়ে বাঁধ নির্মাণ না করার প্রতিবাদে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের পক্ষ থেকে প্রেস কনফারেন্স ও প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে। আজ বুধবার সুনামগঞ্জ শহরে এসব কর্মসূচী পালন করা হবে।
জানা গেছে, অকাল বন্যা ও পাহাড়ি ঢল থেকে সিলেট অঞ্চলের প্রধান ফসল বোরো রক্ষায় সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ড পাউবোর কারিগরি সহযোগিতায় চলছে ‘হাওর রক্ষা প্রকল্পে’র কাজ চলছে। প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে বাঁধ নির্মাণ, পুনর্নিমাণ ও হাওরে ক্লোজার নির্মাণ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজের নির্ধারিত সময়সীমা শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারী) শেষ হয়েছে। তবে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এরপর কাজ শেষ করতে তারা আরো ১০ দিন সময় বৃদ্ধি করেন যা সোমবার (১০ মার্চ) শেষ হয়েছে। বর্ধিত সময়ে শেষে দেখা গেছে এখনো অনেক বাঁধে মাটির কাজই শেষ হয়নি। সঠিক সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় ঢলে ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে বোরো ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।
স্থানীয় কৃষকদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার সাংহাই হাওরের উজানীগাঁওÑফতেহপুর মধ্যবর্র্তী স্থানে বাঁেধর কাজ এখনো চলছে। এটি শেষ করতে আরো ৩/৪ দিন সময় লাগবে। এরপর দুর্মুজ ও ঘাস রোপন করতে আরো ১০ থেকে ১২ দিন সময় লাগবে। এভাবে অনেক বাঁেধর কাজ এখনো বাকী রয়েছে। শীঘ্রই বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘাস লাগাতে না পারলে বাঁধ ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়বে।
জানা গেছে, দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টির পরিমাণ তুলনামূলক বেশি। এ কারণে প্রবল বৃষ্টি এবং ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে দেখা দেয় অকালবন্যা। মার্চের দিকে শুরু হওয়া এই বন্যা হাওরের বোরো ধান ভাসিয়ে নিয়ে যায়। ফলে ধান রক্ষায় প্রতিবছর সুনামগঞ্জ জেলায় হাওরে নির্মাণ করা হয় ফসল রক্ষা বাঁধ।
সুনামগঞ্জ পাউবো সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার ১২টি উপজেলার বিভিন্ন হাওরের ৫৮৮ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ শুরু হয় গত ১৫ ডিসেম্বর। বাঁধের কাজ বাস্তবায়ন করতে ৬৮৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করা হয়। এ জন্য ১২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। চার কিস্তিতে এই টাকা পরিশোধ হওয়ার কথা। এরই মধ্যে দুই কিস্তির অর্থ ছাড় দেওয়া হয়েছে। তিন নম্বর কিস্তি ছাড় দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
কিন্তু এ বছর বাঁধ নির্মাণ সরকারের বেঁধে দেওয়া বর্ধিত সময়সীমা সোমবার (১০ মার্চ) শেষ হলেও বিভিন্ন উপজেলায় বেশির ভাগ বাঁধের কাজ এখনো শেষ হয়নি। হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতা ও কৃষকদের দাবি, এখন পর্যন্ত ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়নি। একই সঙ্গে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। যদিও প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ১৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বাঁধের কাজ ইতোমধ্যে শতভাগ শেষ হয়েছে। দুর্মুজ ও ঘাস লাগানো বাকী। এটি শেষ করতে খুব বেশী সময় লাগবেনা।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, হাওর রক্ষা বাঁধ নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। পাউবো কর্মকর্তারা অফিসে বসে রিপোর্ট দিয়েই কাজ শেষ করার ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা ইতোমধ্যে মাঠের চিত্র সংগ্রহ করেছি। প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে আজ জাতির সামনে তা তুলে ধরবো। এবার যদি হাওরের ফসল পানিতে তলিয়ে যায়, তার দায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিতে হবে। তাঁদের বিরুদ্ধে আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব, প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ নেব।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, জেলার হাওরগুলোর ফসল রক্ষা বাঁধের কাজের শতভাগ শেষ হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে দুর্মুজ করা ও দুর্বাঘাস লাগানোর কাজও শেষ হবে।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোস্তফা ইকবাল আজাদ দৈনিক জালালাবাদকে জানান, সিলেট বিভাগের মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলায় সবচেয়ে বেশি বোরো ধান উৎপাদন হয়ে থাকে। ১২ উপজেলার প্রকৃতি নির্ভর মৌসুমী এ ফসল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত ফসল জাতীয় খাদ্য ভা-ারে যুক্ত হয়। এবার ২ লাখ ২৩ হাজার ৫৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। সব ঠিক থাকলে এবছর ৯ লক্ষ ৪৩ হাজার ৫২০ মেট্রিক টন ধান পাওয়া যাবে।