দুই মাসে ৯০০ যাত্রীকে বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠালো মালয়েশিয়া
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ মার্চ ২০২৫, ৯:৪৪:৫৯ অপরাহ্ন
মালয়েশিয়া প্রতিনিধি: ভিজিট ভিসার ৯০০ বাংলাদেশিকে বিমানবন্দর থেকেই ফিরিয়ে দিয়েছে মালয়েশিয়া। চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাসে সীমান্ত সুরক্ষা ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থা মোট ২ হাজার ৬৫৪ বিদেশিকে সন্দেহভাজন জিজ্ঞাসাবাদ এবং কাগজপত্র পরীক্ষার পর তাদের মধ্যে থেকে ভিজিট ভিসায় গেলেও তারা প্রকৃত পর্যটক নন বা তারা বেড়ানোর উদ্দেশ্যে মালয়েশিয়ায় যাচ্ছিলেন না এমন ৯০০ জনকে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। সন্দেহজনকদের মধ্যে শতকরা হিসেবে ৩৪ শতাংশ যাত্রীকে বিমানবন্দর থেকেই আটক অথবা ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে আর এই যাত্রীদের মধ্যে বড় সংখ্যক হচ্ছে বাংলাদেশি, যাদেরকে চাকরির কথা বলে, ভ্রমণ ভিসা বা ভিজিট ভিসায় মালয়েশিয়ায় পাঠাতে চেয়েছিল দুই দেশের চক্র।
এ বিষয়ে শ্রম অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অবৈধ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশি ও মালয়েশিয়ার অসাধু ব্যক্তি বা অপরাধ চক্র জড়িত। এক্ষেত্রে দুই দেশের বিমানবন্দরের দায়িত্বরতদের একটি গ্রুপও জড়িত বলে বিভিন্ন সময় প্রমাণও মিলেছে। বিশেষ করে মালয়েশিয়া সরকার সেদেশের বিমানবন্দরে বিভিন্ন সময় অভিযান চিলিয়ে সরকারি কর্মচারিদের জড়িত থাকার প্রমাণ পায় এবং তাদের গ্রেফতারের উদাহরণও আছে। যদিও বাংলাদেশে সেই অর্থে দায়িত্বরত অসাধুদের বিষয়ে খুব একটা পদক্ষেপ নেই।
বিশ্লেষকরা বলছেন, একই সাথে কর্মীদেরও সচেতন হতে হবে। জানতে হবে নিয়ম কানুনও। শ্রমবাজার বন্ধ নাকি খোলা আছে সেই তথ্য জানা খুব সহজ। তারপরও চক্রের খপ্পরে পড়ে কর্মীরাও অবৈধ পথে পা বাড়ান আর শেষ পর্যন্ত সরচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীরাই হন। অবৈধ উপায় বা ভুয়া পরিচয়ে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের চেষ্টা করা বাংলাদেশিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ৪৫ জনকে ফেরত পাঠায় দেশটির বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করা ৬৮ জন বিদেশিকে আটক করে মালয়েশিয়ার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা সংস্থা (একেপিএস)। এদের মধ্যে ৪৫ জন বাংলাদেশি একেপিএস বিবৃতিতে জানায়, আটককৃতরা মূলত পর্যটক হিসেবে প্রবেশের দাবি করলেও তারা ইমিগ্রেশন কাউন্টারের দিকে এগোননি বরং বিমানবন্দরের খাবারের দোকান ও অন্যান্য জায়গায় ঘোরাফেরা করছিলেন এবং বিশেষ কারো জন্য অপেক্ষা করছিলেন বলে সন্দেহ করা হয়। পাকিস্তানি ১৬ জন, বাংলাদেশি ৪৫ জন ও ভারতের ৭ জনকে কেএলআইএ ইমিগ্রেশন অপারেশন অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে তাদের মালয়েশিয়ায় প্রবেশের অনুমতি না দিয়ে ‘নোটিশ টু লিভ’ (এনটিএল) দিয়ে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
২৪ জানুয়ারি ভুয়া পরিচয়ে ভিন্ন কাজের উদ্দেশ্যে মালয়েশিয়ায় প্রবেশকালে কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক হয় ১২ বাংলাদেশি। তাদের আটক করে কেএলআইয়ের ইমিগ্রেশন পুলিশ। পুলিশ জানায়, ১২ বাংলাদেশি মালয়েশিয়ান ফিশারিজ একাডেমির প্রশিক্ষণার্থী সেজে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন। তারা একটি আমন্ত্রণপত্র প্রদর্শন করে। যাচাই করে দেখা যায় আমন্ত্রণপত্রটি ভুয়া। এরপর তাদের আটক করা হয়।
এ ব্যাপারে মালয়েশিয়ান ফিশারিজ একাডেমির পক্ষ থেকে ২৫ জানুয়ারি একটি বিবৃতি বলা হয়েছে, বাংলাদেশি কোনো ব্যক্তিকে মালয়েশিয়ান ফিশারিজ একাডেমিতে প্রশিক্ষণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তারা ইমিগ্রেশন পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে মালয়েশিয়ান ফিশারিজ একাডেমির লোগো সম্বলিত পোশাক পরিধান করেছে। ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট- কেএলআইএ টার্মিনাল-১ থেকে সন্দেহজনক অবস্থান ও ঘোরাফেরা করার সময় বাংলাদেশিসহ একদল বিদেশিকে আটক করে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়।
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বিমানবন্দর ‘কাউন্টার সেটিং’ বা ‘বিশেষ কাউন্টার লেন’ এর পদ্ধতি ব্যবহার করে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে সিন্ডিকেটের সাথে যুক্ত থাকার সন্দেহে ইমিগ্রেশন বিভাগের ৫০ জন প্রয়োগকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এছাড়া এসপিআরএম এই ‘কাউন্টার সেটিং’ এ যুক্ত থাকায় সিন্ডিকেটের আরও ১০ জন এজেন্টকেও গ্রেফতার করা হয়।