রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিবের বৈঠক : ঐতিহাসিক নির্বাচনের আশা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ মার্চ ২০২৫, ১০:১৮:২৮ অপরাহ্ন
মহাসচিবের সাথে কেন গোলটেবিল বুঝতে পারেননি ফখরুল | টেকসই গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐক্য চায় জামায়াত
জালালাবাদ রিপোর্ট: বাংলাদেশের সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে বিএনপি-জামায়াতসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক করেছেন সফররত জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। বৈঠকে নির্বাচন, সংস্কারসহ দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এসময় জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন পৃথিবীর মধ্যে নজির ও ইতিহাস সৃষ্টি করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটা শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সরকার আসবে।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জাতিসংঘের উদ্যোগে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিএনপির হয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতের নায়েবে আমীর ডা. আব্দুল্লাহ মো. তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এবং সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স অংশ নেন।বৈঠক শেষে বেরিয়ে সফররত জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে কেন এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে সেটা ‘বুঝতে পারেননি’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জাতিসংঘের মহাসচিব সংস্কার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেছেন কি না জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতিসংঘ মহাসচিব এই বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
তিনি বলেন, আমরা বলেছি, নির্বাচনকেন্দ্রিক যে সংস্কারগুলো আছে, তা দ্রুত শেষ করতে হবে ও নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচিত পার্লামেন্টের মাধ্যমে বাকি বিষয়গুলো (সংস্কার) শেষ হবে।
বিএনপি জাতিসংঘের মহাসচিবকে নির্বাচন বিষয়ে কোনো টাইমফ্রেম দিয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, এখানে টাইম ফ্রেমের কথা বলার কোনো প্রয়োজন নেই, নির্বাচন তো আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। টাইমফ্রেমের কথা কেন তাদেরকে বলব?
বৈঠক শেষে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, আমরা সংস্কারের ব্যাপারে কথা বলেছি। একটা ফেয়ার নির্বাচনের বিষয়ে বলেছি, টেকসই গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে কথা বলেছি। জাতিসংঘের মহাসচিব আমাদের অধিকাংশ বক্তব্য সমর্থন করেছেন। বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আশাবাদী। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আন্তর্জাতিক মানদ-ে জুলাই গণহত্যার বিচার নিশ্চিতে জাতিসংঘের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়ে ঐকমত্য নিয়ে আমাদের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে।
বৈঠক শেষে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বৈঠকে সংস্কার নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। সংস্কার ও গণহত্যার বিচারে জনগণের কাছে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সংস্কারের মৌলিক ভিত্তি এই সরকারের আমলেই তৈরি করতে হবে। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন কাজে দেবে না। এছাড়া সংবিধান ও গণপরিষদ নিয়েও আমাদের অবস্থান তুলে ধরেছি। গণপরিষদের মাধ্যমেই সংবিধান সংস্কার করতে হবে
এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, গণহত্যা নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে দেওয়া সুপারিশ বাস্তবায়নে সংস্থাটির সাহায্য প্রয়োজন। এখনও জাতিসংঘের তিনটি প্রতিষ্ঠানে শেখ হাসিনার আত্মীয়রা কাজ করছেন।
বৈঠকে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ, সদস্য ড. ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস, ইউএনএইচসিআর এর আবাসিক প্রতিনিধি সুম্বুল রিজভী, আইএলও এর কান্ট্রি ডিরেক্টার, টুমো পুটিআইনেন, ডব্লিউএফপি এর আবাসিক প্রতিনিধি ডমিনিকো স্কেলপেনি, ইউএনডিপি এর আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, ডব্লিউএইচও এর আবাসিক প্রতিনিধি বর্ধন জং রানা, ইউএনওপিএস এর আবাসিক প্রতিনিধি সুধীর মুরলীধরন, আইওএম এর মিশন প্রধান ল্যানস বনেউ, ইউনেস্কোর প্রধান নির্বাহী পরিচালক ও ইউনিসেফের আবাসিক প্রতিনিধি।
টেকসই ভবিষ্যৎ গড়তে বাংলাদেশের পাশে থাকবে জাতিসংঘ :
বাংলাদেশের শান্তি ও সংলাপ প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ সহায়তা করবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত বাংলাদেশের ন্যায়সঙ্গত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করা, কারণ এটি দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। বাংলাদেশের জনগণের পাশে থেকে একটি টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে জাতিসংঘ নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে থাকবে। শনিবার রাজধানীর এক হোটেলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
গুতেরেস বলেন, বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ও পরিবর্তনের পথে এগোচ্ছে, আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, জাতিসংঘ শান্তি, জাতীয় সংলাপ, আস্থা ও সংহতি প্রতিষ্ঠায় সর্বদা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।