রক্তের শপথ, আওয়ামীলীগকে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না: আখতার হোসেন
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ মার্চ ২০২৫, ১০:২৫:৫৫ অপরাহ্ন
জালালাবাদা ডেস্ক: আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত না হলে, সারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকা শহর অবরোধ করার ঘোষণা দিয়েছে “ওয়ারিয়র্স অফ জুলাই” সংগঠন। শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে এক বিক্ষোভ মিছিল এবং অবস্থান কর্মসূচি শেষে সংগঠনটির নেতারা এই ঘোষণা দেন। এ সময় তারা বলেন, “আমাদের পঙ্গুত্ব থেকে মুক্তি না দিয়ে, শহীদদের জীবন ফিরিয়ে না এনে, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন কখনো এই দেশে হতে দেয়া হবে না।”
রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক করে তারা বলেন, “সতর্ক হন, নতুবা আরেকটি জুলাই আন্দোলন দেখতে হবে। যদি আপনাদের আচরণ না বদলান, তবে আপনারাও আওয়ামী লীগের মতোই পরিণতি ভোগ করবেন।”
তারা আরও বলেন, “আমরা বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করেছি, তাই আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করবেন না। খুনি হাসিনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না। জুলাই আন্দোলন শুধু নির্বাচনের জন্য হয়নি, এটি মানুষের বাকস্বাধীনতা, সমতা, সাম্য এবং মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য ছিল- যা স্বাধীনতার এত বছর পরেও বাংলাদেশে পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি।”
শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকতেও আওয়ামী লীগকে আসতে দেবো না : এদিকে শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকতেও আওয়ামী লীগকে আসতে দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, কোনো হত্যাকা-ের জন্যই আওয়ামী লীগ দায় স্বীকার বা দুঃখ প্রকাশ করেনি। সেই আওয়ামী লীগের পক্ষে যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দাঁড়ান, তাহলে বাংলাদেশের জনগণ তার বিপক্ষে দাঁড়াবে। শনিবার বিকেলে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে এনসিপি-ঢাকা মহানগর আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, এই ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার জন্য আমাদের ভাইয়েরা জীবন দেয়নি। আমাদের শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকতেও আওয়ামী লীগকে আসতে দেবো না। মুজিববাদী আওয়ামী লীগের রাজনীতি বাংলাদেশে আর পুনর্বাসন করতে দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, ৭ মাস হয়ে গেলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের কার্যক্রম শুরু করেনি। সরকারের প্রতি আহ্বান, দ্রুত দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের কার্যক্রম শুরু করুন। রাজনৈতিকভাবে জুলাই সনদে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কথা থাকতে হবে।
আখতার হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের নামে কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম চলতে দেওয়া যাবে না। অল্প সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। নিবন্ধন বাতিল না করলে ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে নিবন্ধন বাতিল করিয়ে ছাড়বে।
এসময় নির্বাহী আদেশে নয়, বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিস্ট, গণহত্যাকারী দল আখ্যায়িত করে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চাই না। আওয়ামী লীগ যে গুম-খুন করেছে তার বিচারের মাধ্যমে নিষিদ্ধ চাই। সরকারকে বলতে চাই- আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
যারা আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনতে চায় তাদের সমালোচনা করে জুলাই বিপ্লবের অন্যতম এই নেতা বলেন, যারা আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনতে চায়, তাদের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই- ২০১৮ সালে যখন মিডনাইট ইলেকশন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তখন আপনাদের ইনক্লুসিভ ইলেকশন কোথায় ছিল! ২০২৩ সালে যখন ডামি নির্বাচন হলো তখন ইনক্লুসিভ ইলেকশন কোথায় ছিল!
হাসনাত বলেন, যে বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত গুম-খুন হত্যাকা-, পিলখানা হত্যাকা-, ভারতবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকা-, জুলাই গণহত্যার বিচার হয়নি, সেই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে নিয়ে কোনো ইনক্লুসিভ ইলেকশন হবে না। ৫ আগস্টই সিদ্ধান্ত হয়েছে আওয়ামী লীগের নাম, মার্কা, রাজনীতি এ দেশে নিষিদ্ধ হয়েছে।এনসিপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, পরবর্তী বাংলাদেশ হবে উইদাউট আওয়ামী লীগ। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে আওয়ামী লীগ আর ফিরতে পারবে না। জুলুম ভুলে গিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপস করলে মজলুমের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে। এসময় ভারতীয় আধিপত্যবাদকে বাংলাদেশে আর কখনো ঢুকতে দেওয়া হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ক্যান্টনমেন্ট থেকে রাজনৈতিক পরিম-লে হস্তক্ষেপ ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতি মেনে নেবে না বলেও মন্তব্য করেন হাসনাত। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা ও সমর্থন আছে। যাদের কাজ সেনানিবাসে, তারা সেখানেই থাকুন। সমাবেশে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে গিয়ে শেষ হয়।