সমুদ্রপথে ফেরি চলাচলের যুগে বাংলাদেশ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ মার্চ ২০২৫, ৯:০১:০৫ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: সমুদ্রপথে প্রথম ফেরি চলাচলের যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। ট্রলার ও স্পিডবোটের ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রার অবসান ঘটিয়ে সোমবার সকাল থেকে চালু হলো চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ ফেরি সার্ভিস। এর মাধ্যমে যোগাযোগ ও জীবনযাত্রায় নতুন দিগন্তের সূচনা হলো দ্বীপবাসীর জন্য।
নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ঘাটে এই ফেরি সার্ভিস উদ্বোধন করেন। এরপর সকাল ৯টায় বাঁশবাড়িয়া ঘাট থেকে ২০টি যানবাহন ও উপদেষ্টাদের নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম ফেরি ছেড়ে যায় সন্দ্বীপের গুপ্তছড়ার উদ্দেশে। প্রায় এক ঘণ্টা ১৬ মিনিট যাত্রার পর ফেরিটি গুপ্তছড়া ঘাটে পৌঁছে।
উপদেষ্টাদের মধ্যে ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং সন্দ্বীপের সন্তান মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বক্স চৌধুরী ও অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমানও তাদের সঙ্গে ছিলেন।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সন্দ্বীপ দেশের অন্যতম উপকূলীয় দ্বীপ। কিন্তু ৫০ বছরের মধ্যে কেন নিরাপদ যোগাযোগ গড়ে ওঠেনি, কী লজ্জার কথা! সন্দ্বীপের মানুষ এতদিন কাদা মাড়িয়ে ডিঙি নৌকা আর বোটে করে সমুদ্র পারাপার করতে হয়েছে। সন্দ্বীপের সাথে আজ নিরাপদ যোগাযোগ স্থাপিত হলো। কেন এতদিন হয়নি, সেটা লজ্জার। এ লজ্জা থেকে বাঁচলাম। কলঙ্ক থেকে আজ মুক্ত হলাম। এই ফেরি সার্ভিস সমুদ্রপথে দেশে প্রথম এবং সন্দ্বীপবাসীর স্বপ্নপূরণ বলে আখ্যায়িত করছেন চট্টগ্রামের বিআইডব্লিউটিএ এর উপ-পরিচালক মো. কামরুজ্জামান। তিনি জানান, চট্টগ্রাম শহরের প্রায় নিকটবর্তী হলেও উত্তাল সমুদ্রের কারণে সন্দ্বীপ উপজেলাটি ছিল বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ। প্রতিদিন এই দ্বীপের হাজার হাজার মানুষ সমুদ্রপথে চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতেন।
বৈরী আবহাওয়ায় দ্বীপটি প্রায়ই মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত, যার ফলে অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম শহরে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ত। প্রায় চার লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত সন্দ্বীপ উপজেলার মানুষের শত বছরের বড় দুর্ভোগের অবসান ঘটল ফেরি সার্ভিসের মাধ্যমে।
তিনি জানান, অন্তত ৩৫টি যানবাহন নিয়ে চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপের মধ্যে বিশেষ এই ফেরিটি চলাচল করতে সক্ষম। উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে মাত্র এক ঘণ্টা ১০ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপে ফেরি পৌঁছাবে। জোয়ার-ভাটার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিদিন মোট চারবার ফেরিটি আসা-যাওয়া করবে। ফেরিটি যানবাহনের পাশাপাশি অন্তত ৬০০ জন মানুষ পরিবহন করতে পারবে। এই সার্ভিস চালুর পাশাপাশি ঢাকা-সন্দ্বীপ রুটে বিআরটিসির বাস সার্ভিসও চালু করা হয়েছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট-সি বিচ-নিমতলা-বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাট-সন্দ্বীপ এনাম নাহার মোড় রুটে এসি বাস পরিষেবা শুরু হয়েছে। ফলে সন্দ্বীপের মানুষ সহজেই রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারবে। স্থানীয়রা জানান, বঙ্গোপসাগরের বুকে অবস্থিত সন্দ্বীপের সঙ্গে মূল ভূখ-ের যোগাযোগ বরাবরই ছিল কষ্টসাধ্য। বর্ষাকালে উত্তাল সাগর পাড়ি দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠত। এ পর্যন্ত বহু প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ২০১৭ সালে সন্দ্বীপ ট্র্যাজেডি নামে পরিচিত দুর্ঘটনায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়। ২০২২ সালে স্পিডবোট ডুবে প্রাণ হারান চারজন।