৫৫ বছরে বাংলাদেশ, নতুন স্বপ্ন নতুন আশা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ মার্চ ২০২৫, ২:০০:২৩ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : আজ মহান স্বাধীনতা দিবস। আজ স্বাধীন বাংলাদেশ পা দিবে গৌরবের ৫৫ বছরে। স্বাধীনতা দিবস ইতিহাসে একটি গৌরবময় অধ্যায়। প্রতি বছর ২৬ মার্চ দিনটি বাঙালি জাতি গভীর শ্রদ্ধা ও গর্বের সঙ্গে পালন করে।
গত বছরের ৫ আগস্ট রক্তঝরা এক গণঅভ্যূত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নয়া আঙ্গিকে এবার উদ্যাপন হতে যাচ্ছে মহান স্বাধীনতা দিবস। মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে ২৪ এর আন্দোলনে সকল শহীদদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার প্রত্যাশায় পালিত হবে দিবসটি।
একাত্তরের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী জনতা দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তদানীন্তন শাসককোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল আকাঙ্খা ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার। ক্ষুধা-দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও দুঃশাসন মুক্ত একটি দেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সর্বস্তরের জনতা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীনতা লাভ করেছিল।
কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে গণতন্ত্রবিনাশী শক্তির চক্রান্তে বার বার হোঁচট খেয়েছে প্রিয় বাংলাদেশ। বারবার ফ্যাসিবাদী, স্বৈরাচারী ও অবৈধ শক্তি আমাদের স্বাধীনতার লক্ষ্য পূরণ করতে দেয়নি। গণতন্ত্রের সাথে অর্থনৈতিক অগ্রগতিও হোঁচট খেয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছিলো দেশ। এই সময়ে যেসব ব্যর্থতা রয়েছে, তার মধ্যে নীতি নৈতিকতা ও আদর্শের দৈন্যতা অন্যতম।
অধিকার ফিরে পেতে তাই চব্বিশে আবারো জেগে উঠলো আপমার ছাত্র-জনতা। তাতে তাসের ঘরের মতো ধসে পড়লো একটি চেপে বসা শাসন। বলা হচ্ছে, দেশের মানুষ পেয়েছে দ্বিতীয় স্বাধীনতার স্বাদ।
নতুন স্বাধীনতা লাভের পর এখন সুযোগ এসেছে বাংলাদেশের সকল দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি এবং জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথচলা নিশ্চিত করা এবং দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে সংহত করা। এটিই হচ্ছে স্বাধীনতার মূল চেতনা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল ১৯৭১ সালে সংঘটিত তৎকালীন পশ্চিম পাস্তিানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের সশস্ত্র সংগ্রাম যার মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে পৃথিবীর বুকে আত্মপ্রকাশ করে।
একটি নতুন পতাকা, একটি ভয়াবহ কালরাত-সবমিলিয়ে ১৯৭১ সালের মার্চকে ধরা হয় বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্বের সূচনা হিসেবে। এ মাসেই বাঙালি প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। একাত্তরে পুরো মার্চ মাস ছিল উত্তাল। বাংলা ছিল অগ্নিগর্ভ। দেশ জুড়েই স্লোগান আর স্লোগান। ৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণে মানুষ পেয়েছিলো মুক্তির প্রেরণা।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা হলেও চূড়ান্ত আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল ১ মার্চ। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এদিন বেতার ভাষণে ৩ মার্চের গণপরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে বাংলার মানুষ ক্ষোভে-বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ঢাকা যেন আগ্নেয়গিরি। বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ থেকে ছাত্ররা বের হয়ে আসে। জনতা ছুটে আসে রাজপথে, পল্টন ময়দান যেন জনসমুদ্র। চারদিকে জনস্রোত।
এ সময় ঢাকা স্টেডিয়ামে পাকিস্তান বনাম বিশ্ব একাদশের ক্রিকেট খেলা চলছিল। ইয়াহিয়া খানের ওই ঘোষণার সাথে সাথে দর্শক খেলা ছেড়ে বেরিয়ে আসে। ততক্ষণে হাজারো মানুষ পল্টন-গুলিস্তানে বিক্ষোভ শুরু করে দিয়েছে। সেই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নেয়। ২৭ মার্চ কালুঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান। এরপর দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী জনযুদ্ধের পর বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশ নামে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের।
বাংলাদেশের বয়স আজ ২৬ মার্চ ৫৫ বছরে পদার্পণ করবে। মানুষের জীবনের হিসাবে ধরলে প্রৌঢ়ত্ব এসে গেছে। যেহেতু এটি দেশের হিসাব, তাই প্রৌঢ় বলা যাবে না, নবীনই বলতে হবে। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্রের গতিপথ বারংবার পাল্টে যায় বলে সরলরেখায় চলে না। সে কারণে একে জন্ম থেকে অদ্যাবধি প্রকৃত বয়স নির্ধারণ করা কঠিন। রাষ্ট্র মাঝেমধ্যে স্থবির হয়ে পড়ে। সে অগ্রসর হয় না; বরং অনেক সময় পেছন দিকে ধাবিত হয়।
তবে এবার নতুন আশায় বুক বেঁেধছে জাতি। গত ১৫ বছর ধরে নির্বাচন ও গণতন্ত্র অনেকটা প্রহসনে রূপ নিয়েছিলো। সেই আক্ষেপ ঘুচানোর সময় এখন। একটি অবাধ ও নিরপক্ষে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা শুরুর অপেক্ষায় জাতি।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এ বছর ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। আগামী নির্বাচনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচাইতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। এজন্য নির্বাচন কমিশন সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোও ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনায় নির্বাচনের জন্য তৈরি হতে শুরু করেছে।
প্রতিটি রাজনৈতিক দল আংশিক কিংবা বৃহৎ সংস্কারের পক্ষে মত দিচ্ছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে তাদের মতামত তুলে ধরছেন। কোন রাজনৈতিক দল কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবে একমত হয়েছে, কোনটিতে দ্বিমত হয়েছে-সেসব তারা জানাচ্ছেন। গণতন্ত্রের নবযাত্রা দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। স্বাধীনতার ৫৫ বছরের এই গৌরবোজ্জ্বল মুহূর্তে এখন গণতন্ত্রের পূর্ণতার জন্যই কেবল অপেক্ষায় জাতি।