নগরজুড়ে ঈদের আমেজ : নজর কাড়ছে পাকিস্তানি পোশাক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ মার্চ ২০২৫, ৩:১৪:০১ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : ঈদুল ফিতরের মাত্র আর কয়েকদিন বাকী। ইতোমধ্যে নগরজুড়ে বিরাজ করছে ঈদের আমেজ। সর্বত্র জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। নতুন পছন্দের পোশাক কেনার জন্য এক মার্কেট থেকে আরেক মার্কেটে চলছে ছুটাছুটি। তবে দীর্ঘ যানজটের ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
এবার বাজারে দেখা গেছে ব্যতিক্রমী চিত্র। কারণ বাজারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো দেশীয় পোশাকের আধিপত্য। এবার অন্যান্য বছরের ন্যায় ভারতীয় সিরিয়াল ও নায়িকাদের নামে বিভিন্ন পোশাক না থাকলেও ভারতীয় পোশাকের সরবরাহ চোখে পড়ার মতো। তবে এ বছর ভারতীয় পোশাকের পাশাপাশি ক্রেতাদের নজর কেড়েছে পাকিস্তানি পোশাক। তরুণদের পছন্দের শীর্ষে পাকিস্তানি সিকোয়েন্স পাঞ্জাবী ও তরুণীদের পছন্দের তালিকায় পাকিস্তানি ড্রেস ও থ্রি-পিস।
গেলো বছরগুলোর তুলনায় এবার পোষাক ও প্রসাধনীর কালেকশন বেশি, কেনাকাটও তাই আশাজাগানিয়া। ভিনদেশীয় পোশাকের পাশাপাশি দেশীয় ডিজাইনের পোশাকের বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ। যদিও পোশাকের দাম এবার তুলনামূলক বেশী।
এদিকে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর নারীদের ঈদ শপিংয়ে পাকিস্তানি পোশাকের চাহিদা বেশি। সিল্ক, জর্জেট ও অরগ্যাঞ্জা কাজের বিভিন্ন পোশাকের দাম ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে। পাশাপাশি পাকিস্তানি এসব পোশাকের মাস্টার কপিও পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোর দাম আড়াই থেকে ৪ হাজার টাকার মধ্যে।
সিলেটে পাঞ্জাবীর বাজারে জনপ্রিয় স্থান দখল করে রেখেছে পাকিস্তানি সিকোয়েন্স পাঞ্জাবী। সর্বনিম্ন ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে এসব পাঞ্জাবী। তবে বাজারে সিকোয়েন্সের মাষ্টারকপি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, এবার ঈদ ঘিরে মেয়েদের পছন্দের তালিকায় এক নম্বরে জায়গা করে নিয়েছে পাকিস্তানি ত্রি-পিস। সেলাই কিংবা সেলাই ছাড়া দুই ধরনের পোশাকেই আগ্রহের তালিকায় আগানূর, রাওয়াত, তায়াক্কালসহ বিভিন্ন পাকিস্তানি ব্র্যান্ড। সর্বনিম্ন ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে এসব পোশাক। তবে এসবের মাস্টার পিস বাজারে মিলছে কম দামে।
নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, আম্বরখানা, নয়াসড়ক, লামাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, জোহরের পর থেকেই বিপনী বিতানে শোক সমাগম শুরু হয়, চলতে থাকে ইফতারে আগ মূহুর্ত পর্যন্ত। তবে ইফতারের আগ মুহুর্তে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে দীর্ঘ যানজটের ফলে সময় মতো অনেকেই ইফতার করতে পারেননি।
এদিকে ফুটপাত দখল করে হকারদের ব্যবসা ও নগরীতে রাস্তার যত্রতত্র পার্কিংয়ের ফলে তৈরি হচ্ছে যানজট। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, যানজট ততই বাড়ছে। এদিকে যানজটের ফলে দৈনিক আয়ে ভাটা পড়েছে গাড়ি চালকদের যার মধ্যে সিনএজিসহ রিকশা চালকরা পড়েছেন বিপাকে।
রাশেদ মিয়া নামের এক রিকশাচালক বলেন, প্রতিদিন যে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয় এতে করে যানজটে অর্ধেক সময় চলে যায়। ফলে রোজগার কমেছে। যদি যানজট কম থাকতো তাহলে এই ঈদে আমাদের কিছু টাকা আয় করা সম্ভব হতো।
সোহাগ মিয়া নামের এক পথচারী বলেন, আম্বরখানা থেকে বন্দরবাজা যেতে এক ঘন্টার বেশী সময় লেগে যাচ্ছে। যানজটের কারণে তাই পায়ে হেটে রওয়ানা দিয়েছি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমল থেকে শুরু করে ফুটপাতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। রমজানের শেষ দশকে এসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ঈদের বাজারে এখন উৎসবের আমেজ। প্রায় প্রতিটি পরিবারের তরুণ-তরুণী, শিশুরা ঈদ বাজারে। শাড়ি, ড্রেস, গহনা, পাঞ্জাবি, পায়জামা, শিশুদের পোশাক থেকে শুরু করে সব দোকানে এখন ভিড় করছেন ক্রেতারা।
এদিকে নগরীর অভিজাত শপিংমল আল-হামরা শপিং সিটি, বন্দরবাজার ও জিন্দাবাজারের বিভিন্ন মার্কেট ও বিপনিবিতানগুলোতে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। এছাড়া নয়াসড়ক ও কুমারপাড়া অভিজাত ফ্যাশন হাউসগুলোতেও উপচে ভিড়। সকাল থেকে রাত অব্দি পছন্দের পোশাক ও ঈদ অনুষঙ্গ খুঁজে বেড়াচ্ছেন তরুণ-তরুণীরা।
ক্রেতাদের পছন্দের পোশাক দেখাতে ও সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিক্রেতাদের। এসব মার্কেটে পুরুষ ক্রেতার চেয়ে নারী ক্রেতার সংখ্যা অনেক বেশি। তারা পছন্দের পোশাক কিনতে ঘুরছেন এক মার্কেট থেকে অন্য মার্কেটে।
সরজেমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর হাসান মার্কেট ও হকার্স মার্কেটে ঈদ সামনে রেখে পা ফেলা যাচ্ছেনা। সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি চলছে কেনাকাটা। নগরীর ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নগর এলাকায় কয়েকশো কোটি টাকার ব্যবসা হবে। সব মার্কেটেই জমজমাট ব্যবসা চলছে।
হাসান মার্কেটের ব্যবসায়ী বদরুল হাসান জানান, শেষ সময়ে ব্যবসা জমে উঠেছে। আশা করছি এবার ঈদে ভালো ব্যবসা হবে।