সম্পর্কের নতুন উচ্চতায় বাংলাদেশ-চীন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ মার্চ ২০২৫, ৯:০৬:৩৮ অপরাহ্ন
৯ চুক্তি ও ১ সমঝোতা, ২.১ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি
জালালাবাদ রিপোর্ট : সম্পর্ক আরও গভীর করার বিষয়ে একমত হয়েছে বাংলাদেশ ও চীন। অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সমর্থন দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন। একইসাথে চীন সরকার ও চীনা কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে বাংলাদেশ ২.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে। দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তিতে উভয় দেশ বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক এবং জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বিনিময় বাড়ানোর বিষয়েও একমত হয়েছে।
বাংলাদেশ ও চীন সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিতে ১টি চুক্তি এবং ৮টি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে দুই দেশ। এর মধ্যে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্য নিয়ে।
আর চিরায়ত সাহিত্যের অনুবাদ ও প্রকাশনা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে বিনিময় ও সহযোগিতা, সংবাদ বিনিময়সহ গণমাধ্যম, ক্রীড়া এবং স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা বাড়াতে ৮টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরের মধ্যে শুক্রবার বেইজিংয়ে এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয় বলে সরকারপ্রধানের দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে। চীনের কাছ থেকে বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদান হিসেবে দুই দশমিক এক বিলিয়ন বা দুইশো দশ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতিও পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এক বার্তায় এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদারের বরাত দিয়ে বাসস জানায়, চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের পাশাপাশি বিনিয়োগ সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরুর জন্য পাঁচটি ঘোষণাও এসেছে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক থেকে। বাংলাদেশে চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি নথি স্বাক্ষর হয়েছে। পাশাপাশি মোংলা বন্দরের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের জন্য একটি বাণিজ্যিক চুক্তি করেছে দুই দেশ।
চীন বাংলাদেশে একটি রোবট ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা দেবে। পাশাপাশি অনুদান হিসেবে একটি কার্ডিয়াক সার্জারি ভেহিকেল দেবে। এ বিষয়েও দুই দেশের মধ্যে নথি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এদিন বেইজিংয়ের গ্রেট হল অফ দ্য পিপলে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আশ্বস্ত করেছেন, বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ উৎসাহিত করা হবে এবং চীনের শিল্প কারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তরে সমর্থন দেওয়া হবে।
বৈঠকের এ ফলাফলকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ‘বড় ধরনের সাফল্য’ হিসেবে বর্ণনা করে শফিকুল আলম বলেন, আলোচনা ছিল খুবই ফলপ্রসূ ও গঠনমূলক; সেখানে উষ্ণতা ও সৌহার্দ্যের ছাপ ছিল। প্রেস সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এবং তার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে চীনের সমর্থনের কথা বৈঠকে আবারো তুলে ধরেছেন প্রেসিডেন্ট শি। এটা অধ্যাপক ইউনূসের প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর এবং এখন পর্যন্ত সফর অত্যন্ত সফল, বলেন শফিকুল আলম। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বৈঠকে তুলে ধরেছে, সেগুলো ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছে চীন। চীনা ঋণের সুদ হার কমানো এবং পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতার মত বিষয়ও রয়েছে এর মধ্যে।
শফিকুল আলম বলেন, প্রেসিডেন্ট শি তার বাংলাদেশ সফরের অভিজ্ঞতা বৈঠকে স্মরণ করেছেন। শি বলেছেন, ফুজিয়ান প্রদেশের গভর্নর থাকাকালে তিনি ক্ষুদ্রঋণ সম্পর্কে পড়েছেন। তিনি বাংলাদেশি আম ও কাঁঠাল খেয়েছেন এবং সেগুলো অত্যন্ত সুস্বাদু লেগেছে তার। আগামীতে বাংলাদেশ বড় পরিসরে এ দুটি ফল চীনে রপ্তানি করার পরিকল্পনা করছে বলে প্রেস সচিব জানান।
এদিকে, শুক্রবার বেইজিংয়ের ‘দ্য প্রেসিডেন্সিয়াল’ এ চীনা ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে এক বিনিয়োগ সংলাপে বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টা। সংলাপে বাংলাদেশের সরকারের প্রধান বলেছেন, বাংলাদেশ চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী দেশ। এছাড়া, বাংলাদেশ এমন একটি চমৎকার ভৌগোলিক অবস্থানে রয়েছে যেখানে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রসহ বড় বড় নদীগুলো প্রবাহিত হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের কথা উল্লেখ করে তিনি বাণিজ্য ও ব্যবসা সম্প্রসারণে সমুদ্রের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, নেপাল ও ভুটান স্থলবেষ্টিত দেশ, যাদের কোনো সমুদ্র নেই। ভারতের সাতটি উত্তর-পূর্ব রাজ্যও স্থলবেষ্টিত। তিনি এসব দেশের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের ওপর জোর দেন, যা বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। বাংলাদেশের মানব সম্পদের সম্ভাবনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ এবং প্রতি বছর আরো ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে উঠছে। বাংলাদেশে প্রায় ১৭ কোটি মানুষ বাস করে। যাদের বেশিরভাগই যুবক। যারা উদ্যম, সৃজনশীলতা ও উচ্চাকাঙ্খায় পরিপূর্ণ।