মায়ানমারে মানবিক বিপর্যয়, মৃত্যু ১৬০০ ছাড়ালো
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ মার্চ ২০২৫, ৯:৪০:৩০ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আট দেশে শুক্রবার আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মিয়ানমারে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ১৬০০ ছাড়িয়েছে। মিয়ানমার ছাড়াও প্রতিবেশী থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে মারা গেছেন অন্তত ১০ জন। দেশ দুটিতে হতাহত ব্যক্তিদের প্রকৃত সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ, বিশেষত মিয়ানমার থেকে তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার জানা যায়নি। কেননা মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ চলছে ও সেখান থেকে তথ্য পাওয়া কঠিন।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্যমতে, শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এর কেন্দ্র ছিল মিয়ানমারের দ্বিতীয় বড় শহর মান্দালয় থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে। ভূমিকম্পের ১২ মিনিট পর ৬ দশমিক ৪ মাত্রার একটি পরাঘাত (আফটার শক) হয়।
বিশ্বে ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত দেশগুলোর একটি মিয়ানমার। দেশটিতে বিভিন্ন সময় ভূমিকম্পে জনবহুল এলাকাগুলো কেঁপে উঠলেও সেদিন শহরগুলো যেভাবে আক্রান্ত হয়েছে, তা আগে দেখা যায়নি। ইউএসজিএসের অনুমান, দেশটিতে নিহত ব্যক্তিদের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং বলেছেন, ‘হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে।’ আজ শনিবার সরকারি কর্তৃপক্ষ বলেছে, শনিবার রাত ৯টা পর্যন্ত ভূমিকম্পে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৬৪৪। আহত হয়েছেন ৩ হাজার ৪০৮ জন।
ভূমিকম্পে মিয়ানমারের পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে থাইল্যান্ডে। দক্ষিণ-পশ্চিম চীন, ভারত, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া ও বাংলাদেশেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। থাইল্যান্ডে ভূমিকম্পে ১০ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে রাজধানী ব্যাংককের কর্তৃপক্ষ। একটি বহুতল ভবনসহ তিনটি নির্মাণাধীন স্থাপনায় নিখোঁজ আছেন অন্তত ১০১ জন। বিভিন্ন ভবনের ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া ব্যক্তিদের অনেকেই বেঁচে আছেন বলে আজ ধারণা প্রকাশ করেছেন ব্যাংককের গভর্নর চাদচার্ট সিত্তিপান্ত।
মিয়ানমার সরকার বলেছে, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোয় আহত ব্যক্তিদের জন্য রক্তের বিশেষ প্রয়োজন। মিন অং হ্লাইং বলেছেন, মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সহায়তা গ্রহণ করতে প্রস্তুত।চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানায়, ইতিমধ্যে শনিবার সকালে ইয়াঙ্গুনে পৌঁছেছে দেশটির ৩৭ সদস্যের একটি উদ্ধারকারী দল। আর রাশিয়া ১২০ সদস্যের একটি উদ্ধারকারী দল মিয়ামারে পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছে রুশ সরকারি সংবাদমাধ্যম তাস।
এদিকে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণসহায়তা হিসেবে ৫০ লাখ ডলার বরাদ্দ করেছে জাতিসংঘ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তাঁর দেশ ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করবে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি যেভাবে আন্তর্জাতিক সহায়তা কাটছাঁট করেছে তাতে তাঁর এ আশ্বাস নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন কিছু বিশেষজ্ঞ। মিয়ানমারের ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির কর্মকর্তা মোহাম্মদ রিয়াজ বলেন, ধ্বংস ও ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তথ্য পেতে কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে বলে আমাদের আশঙ্কা।
ভূমিকম্পের পর নেপিডো, মান্দালয়, সাইগাইংসহ ছয়টি অঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারি করেছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, শক্তিশালী কম্পনে নেপিডো, সাইগাইং, মান্দালয়সহ পাঁচটি শহরে অনেক ভবন ধসে পড়েছে। এ ছাড়া একটি সেতু ও একটি রেলসেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, ইরাবতী নদীর ওপর আভা সেতু ধসে পড়েছে।