জামালগঞ্জে নৌ-পথে ট্রলার ডুবি : নিহত ৪ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ মার্চ ২০২৫, ৮:০৯:০৪ অপরাহ্ন
তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ, জামালগঞ্জ থেকে :
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী ইউনিয়নের বৌলাই নদীতে অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহনকারী ট্রলার নৌকা ডুবির ঘটনায় ২ নারী ও ২ শিশু সহ ৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধার করে রাতেই স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় স্বজনদের কাছে হস্তার করেছে পুলিশ। এই মর্মান্তিক ঘটনায় এলাকায় আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে শোক বিরাজ করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জামালগঞ্জ উপজেলার মদনাকান্দি, হিজলা সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের আশপাশে কোন হাটবাজার নেই। এ কারনে যে কোন নিত্যপণ্য কিনতে হলে হাওর নদী পেরিয়ে পাশ্ববর্তী উপজেলা মধ্যনগর বাজারে যেতে হয়।সাপ্তাহে প্রতি শনিবার হাটে একটি ট্রলারে বাজার করতে যায় আশপাশের গ্রামের লোকজন। গত শনিবার (২৯ মার্চ) বিভিন্ন গ্রামের লোকজন নিয়ে পাশ্ববর্তী উপজেলা মধ্যনগরে হাট-বাজার করে লোকজন ফিরছিলেন নিজ বাড়িতে। কেউবা এসেছেন আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে। তাদের আশপাশে আর কোন হাটবাজার না থাকায় ওই গ্রামগুলোর লোক জন মধ্যনগর থেকেই নিত্যপণ্য সহ প্রায় সব ধরনের বাজার সদাই করে থাকেন।
ঘটনার সময় শনিবার (২৯ মার্চ) রাত আনুমানিক ৯ টায় যাত্রীবাহি ওই ট্রলার নৌকাটি মধ্যনগর থেকে অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল নিয়ে জামালগঞ্জের উদ্দেশ্য রওনা করে। বেহেলি ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে আসার পথে হেরা কান্দি নামক স্থানের বৌলাই নদীর তেগাঙ্গের মুখে বাঁক ঘুরতে গিয়ে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। ট্রলার নৌকায় প্রায় ৬০-৭০ জনের মতো যাত্রী ও তাদের মালমাল, সিমেন্টের বস্তা, টিন বাজার সওদা সহ বিভিন্ন মালামাল ছিল। এতে প্রায় লক্ষাধিক টাকার মালামাল সহ নৌকাটি ডুবে যায়। এ ঘটনার দুর্ঘটনা কবলিত লোকজনের চিৎকার শুনে আশপাশের গ্রামের লোকজন জামালগঞ্জ থানা পুলিশ কে খবর দিয়ে দুর্ঘটনা কবলিত লোকদের উদ্ধার কাজ চালিয়ে যান। এতে ২ নারী ও ২ শিশুর লাশ সহ আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয়রা।
নিহতরা হলেন, জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলি ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামের তাপস চক্রবর্তীর স্ত্রী বিউটি চক্রবতী (৫০), নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার হাতনি গ্রামের কল্পনা সরকার (৫০) একই গ্রামের নিরেশ সরকারের মেয়ে রুদ্রা সরকার (৬), একইজেলার কলমাকান্দা থানার ভাটিপাড়া গ্রামের সুজিত সরকারের মেয়ে গঙ্গা সরকার (৬), এছাড়াও হাতনি গ্রামের নিরদ সরকারের শিশু ছেলে সৌরব সরকার (১০) কে মুমূর্ষু অবস্থায় জামালগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্ররণ করেন।
অন্য উপজেলার লোকজন তাদের আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসতেছিল বলে জানান স্থানীয়রা বাসিন্ধারা। এলাকার জব্বার হোসেন নামের একজন বলেন, নদী পথে যানবাহন চলাচলে অদক্ষ চালক ও মেরিন আইনে নীতিমালা না মানার কারণে প্রায়ই এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা হয়।
বেহেলী ইউপি সদস্য দেবাশীষ সরকার জানান,
মধ্যনগর থেকে যাত্রী বোঝাই নৌকাটি বেহেলি আসার পথে হেরাকান্দি গ্রামের পাশে বৌলাই নদীর তেগাঙ্গের বাঁক ঘুরার সময় নৌকা ডুবার খবর পাই। এতে ৪ জন নিহত ও বেশ কয়েক জন আহত হয়েছে। আহতদের মাঝে ২ জনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় অবহিত করা হলে থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি রাতেই ঘটনা স্থলে এসে লাশ স্বজনদের হস্তান্তর করেন।
বেহেলী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বলেন, লাশ উদ্ধার করে আইনি প্রক্রিয়া শেষে এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে থানা পুলিশ।
জামালগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, নৌ দুর্ঘটনার খবর পেয়েই তাৎক্ষণিক ঘটনা স্থলে যাই। স্থানীয়দের সহায়তায় লাশ সনাক্ত করি। নিহত ৪ জনের মধ্যে ১ জনের বাড়ি সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে। বাকি ৩ জনের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ ও কলমাকান্দা উপজেলায় তারা আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। নিহতদের স্বজনদের সামনে আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে রাতেই এলাকাবাসীর সহযোগীতায় তাদের নিকট লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।