শ্রীমঙ্গলে সংঘর্ষ, সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে : আটক ১৪
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ মার্চ ২০২৫, ৮:৫০:৩২ অপরাহ্ন
শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি ::
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে টমটম পার্কিংকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে চৌমুহনা ও আশপাশের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ সংঘর্ষ থামাতে ৫৬ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। রবিবার রাত ১১টা থেকে সোমবার রাত ২টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সংঘর্ষ চলাকালে মার্কেট করতে আসা লোকজন ও পথচারীসহ প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। সংঘর্ষে ১৫টি টমটম ও একটি প্রাইভেট কার ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সাবেক মেয়র মহসিন মিয়া মধুসহ ১৪ জনকে আটক করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শহরের হবিগঞ্জ সড়কের গদার বাজার এলাকায় সরকারী একটি খাস জমিতে সাবেক মেয়র মহসিন মিয়া মধু বিনা লাভের বাজার খোলেন, যেখানে আগে টমটম চালকদের রিকশা স্ট্যান্ড ছিল। রোববার রাত সাড়ে ১০টায় মধু মিয়া বাজার পরিদর্শনে এসে টমটম পার্কিং করা দেখে চালকদের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এ সময় সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আনার মেম্বার গরীব টমটম চালকদের পক্ষ নিয়ে কথা বললে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
একপর্যায়ে মধু মিয়ার লোকজন প্রায় ১৫টি টমটম ভাঙচুর করে। এরপর পরিবহন শ্রমিক নেতা সাগরের একটি প্রাইভেট কার ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে পশ্চিম ভাড়াউড়া গ্রামের কয়েকশ’ গ্রামবাসী মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে লাঠিসোঁটা হাতে মিছিল করে মেয়রের বাসার দিকে রওনা হয়।
শহরের চৌমুহনাতে পুলিশ সংঘর্ষ ঠেকাতে ফাঁকা গুলি ছুড়লেও মেয়রের লোকজন স্টেশন রোড থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে উভয় পক্ষ মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে উভয় পক্ষের ৩৯ জন আহত হন, যাদের মধ্যে জয় চৌধুরী নামে এক পথচারী গুরুতর আহত হয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনীকে খবর দেওয়া হলে তারা এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। এ সময় মেয়রের বাসায় অভিযান চালিয়ে দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে মহসিন মিয়া মধু, তার ছেলে মুরাদ হোসেন সুমন, চাচাতো ভাই সেলিম আহমদ, সাবেক কাউন্সিলর আলকাছ মিয়াসহ ১৪ জনকে আটক করে শ্রীমঙ্গল থানায় হস্তান্তর করে। পরে পশ্চিম ভাড়াউড়ায় অভিযান চালিয়ে আনার মেম্বারের ছেলেকেও আটক করা হয়।
শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম জানান, আটক ১৪ জনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, “সংঘর্ষে বহু প্রাণহানি ঘটতে পারত। পুলিশ যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়, তখন সেনাবাহিনী ডাকা হয়, যার ফলে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হয়।” বর্তমানে শহরে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।