জগন্নাথপুরে হাওরে দুলছে কাচা ও আধাপাকা ধান, চারদিকে চলছে ধান কাটার প্রস্তুতি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০৪:০৩ অপরাহ্ন
জগন্নাথপুর প্রতিনিধি ::
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে হাওরে হাওরে দুলছে কাচা ও আধাপাকা বোরো ধান। সোনালী ধানের মৌ মৌ গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে ধান কাটার ধুম পড়ে যাবে। তাই ধান কাটা, মাড়াই করা, শুকানো ও ঘরে তোলার প্রস্তুতি চলছে চারদিকে। সবার আগে ধান কাটার ব্যবস্থা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন কৃষকেরা। এবার দেশের অন্য অঞ্চলের ধানকাটা শ্রমিকরা জগন্নাথপুরে আসার সম্ভাবনা খুবই কম। তাই হারভেস্টার মেশিন ও স্থানীয় শ্রমিকের উপর নির্ভর করতে হবে বেশি। ইতোমধ্যে ধানকাটার মেশিন ও শ্রমিকদের সংগ্রহে চারদিকে ছুটছেন কৃষকেরা।
এছাড়া ধান মাড়াইয়ের মেশিনের চালকদের সাথে কথা বলে রাখছেন। ধান শুকানোর জন্য ত্রিপাল সংগ্রহ ও খলা তৈরি করা হচ্ছে। সবশেষে ধান ঘরে তুলতে গোলা বানানো নিয়ে ব্যবস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণীরা। আর মাত্র কিছুদিন বাকি আছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই হাওরে ধান কাটার মহোৎসব চলবে। যা নিয়ে কৃষক পরিবারে চলছে নানা আয়োজন। একই সঙ্গে দাদন ব্যবসায়ীরাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন ধান কাটা শুরু হয়ে গেলে পূর্বে লাগানো ধানুয়া লগ্নির টাকার বিনিময়ে কৃষকের কষ্টার্জিত সোনার ফসল নিজের হেফাজতে নিতে এবং ধান ব্যবসায়ীরাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন সুযোগ বুঝে কমদামে ধান কিনতে হাওরে ঝাপিয়ে পড়তে।
২ এপ্রিল বুধবার সরেজমিনে জগন্নাথপুর উপজেলার সর্ববৃহত নলুয়ার হাওরে গিয়ে দেখা যায়, হাওরজুড়ে আধাপাকা ও কাচাধান বাতাসের তালেতালে দুলছে। এ যেন মনোমুগ্ধকর চিত্র। এ সময় বেশ কয়েকজন কৃষককে হাওরে জমির আইল ধরে হাটতে দেখা যায়। তারা হাওরে আসছেন তাদের উৎপাদিত জমির ধানের বর্তমান অবস্থা দেখতে। আর কতদিন পরে জমির ধান কাটা যাবে তার হিসাব-নিকাশ কষতে। এমন মন্তব্য ছিল তাদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাওর বেষ্টিত চিলাউড়া-হলদিপুর ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, আর কিছুদিন পর বোরো ধান কাটার ধুম পড়বে। তাই চারদিকে কৃষকেরা ধান কাটার প্রস্ততি নিচ্ছেন। এবার ধানের ফলন তুলনামূলক কম হলেও ভালো হয়েছে। ধানে কোন প্রকার ছিঁটা নেই। এছাড়া এবার দেশের অন্য অঞ্চল থেকে ধানকাটা শ্রমিক আসার সম্ভাবনা কম। তাই হারভেস্টার মেশিন ও স্থানীয় শ্রমিকদের উপর নির্ভর করতে হবে বেশি।
জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ জানান, গত বছরের তুলনায় এবার জগন্নাথপুরে আবাদকৃত জমির পরিমাণ বেড়েছে। তাই ফলনও বেশি হবে। এবার জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়ার হাওর সহ সকল হাওর ও বাওরে মোট ২০ হাজার ৪২৩ হেক্টর বোরো জমি আবাদ হয়েছে। তা থেকে সরকারি ভাবে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ২৮ হাজার ৪২০ মেট্রিকটন ধান। এবার সময়ে সময়ে বৃষ্টিপাত হওয়ায় ফলন ভালো হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই ধান কাটার ধুম পড়ে যাবে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ধান কাটা পর্যন্ত বাকি সময়েও যদি প্রকৃতি অনুকূলে থাকে. তাহলে কৃষক ভাইয়ের গোলায় বাম্পার ফলন উঠবে ইনশাআল্লাহ।
যদিও স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে অনেকে নাম প্রকাশ না করে সরকারি হিসাবকে প্রত্যাখান করে বলেন, জগন্নাথপুর উপজেলাজুড়ে অসংখ্য ছোট-বড় হাওর, বাওর ও খাল-বিল রয়েছে। কৃষকেরা নিজ জমির পাশাপাশি খাল-বিলেও ধান রোপন করেছেন। এতে সরকারি হিসাব থেকে আবাদকৃত জমির পরিমাণ আরো অনেক বেশি হবে এবং সেই অনুপাতে ফলনও বেশি উৎপাদিত হয়েছে। তাই আরো বেশি ধান কৃষকদের গোলায় উঠবে।