পাহাড়, টিলায় অন্যরকম ঈদ আড্ডা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০:১১:৪৫ অপরাহ্ন
জসীমউদ্দিন, সুনামগঞ্জ:
দুচোখ জুড়ে কেবল পাহাড়, পাহাড়ি ঠিলা আর সবুজ অরণ্যের অপার সৌন্দর্য। সুনামগঞ্জের শুভ ঠিলা এক নয়নজুড়ানো স্থান, যেখানে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে জড়ো হয়েছেন শহরের সৃজনশীল ব্যক্তিরা। নানাবয়সী এই দলটিকে একত্র করেছে তাদের সৃজনশীল পাঠ ও গভীর বন্ধুত্ব। ঈদের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে তারা বেছে নিয়েছেন শুভ ঠিলাকে, যা সীমান্তের খুব কাছাকাছি অবস্থিত। চারপাশে সবুজের সমারোহ আর ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের মেঘে ঢাকা পাহাড়, সব মিলিয়ে এক মায়াবী পরিবেশ।
সকাল থেকেই শুভ ঠিলার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন তারা। শহর থেকে শুভ ঠিলায় পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র এক ঘণ্টা। সিএনজি, মোটরসাইকেল কিংবা অটোরিকশায় সহজেই যাওয়া যায় সেখানে। পাহাড়ের কোলঘেঁষা আঁকাবাঁকা পথ ধরে যেতে যেতে প্রকৃতির সৌন্দর্যে সবাই মুগ্ধ হন। পথের দু’ধারে ছড়িয়ে থাকা গ্রামীণ জনপদ, বৈশাখী ধান ক্ষেত- সব মিলিয়ে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের অবতারণা হয়।
শুভ ঠিলায় পৌঁছানোর পর শুরু হয় নানা আয়োজন। সকালের আলোয় পাহাড়ের চূড়ায় উঠে সবাই উপভোগ করেন মুক্ত বাতাস আর দূরের মেঘালয় রাজ্যের সৌন্দর্য। কারও হাতে ক্যামেরা, কেউ বা মোবাইল ফোনে বন্দি করছেন অপার প্রকৃতির সৌন্দর্য। কেউ পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে আকাশ দেখছেন, কেউ বা পাহাড়ের চূড়ায় উঠে সীমান্তের ওপারে দৃষ্টি ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাসুম হেলাল জানান, “আমরা ২৫ জনের একটি টিম নিয়ে এখানে এসেছি। সারাদিন পাহাড় আর টিলা ঘুরে কাটাবো। ঈদের আনন্দ প্রকৃতির মাঝে ছড়িয়ে দিতে পেরে সত্যিই ভালো লাগছে। একবার এখানে না এলে প্রকৃতির মায়াবী সৌন্দর্যের আদর অনুভব করা সম্ভব নয়।”
শুভ ঠিলার মালিক শুভ বলেন, “বন্ধুদের নিয়ে ঈদ আড্ডায় যোগ দিতে এই টিলায় এসেছি। এটি আমার কেনা টিলা। মূলত পর্যটকদের আকর্ষণ করতেই এটি কিনেছি। এখান থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্য দেখা যায়। চারপাশে শুধু সবুজ আর সবুজ, এক অনন্য রূপ মেলে এখানে। সবাইকে নিয়ে দিনটি দারুণ উপভোগ করছি।
পাহাড়ি পরিবেশে খাবারের আয়োজন ছিল বেশ জমকালো। নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেওয়া নানা ধরনের খাবার, স্থানীয় পাহাড়ি ফল, গ্রিল করা মাংস—সব মিলিয়ে খাবারের আয়োজনেও ছিল বৈচিত্র্য।
বৈশাখী টেলিভিশনের প্রতিনিধি কর্নবাবু দাস জানান, “ঈদ আড্ডার জন্য সীমান্ত পাহাড়ে এসেছি। এখানে এসে নিজেদের জন্য একটি খাসি জবেহ করেছি এবং সবাই মিলে আনন্দের সঙ্গে খেয়েছি। এছাড়া নানা ইভেন্ট আয়োজন করেছি। কেউ পাহাড়ের চূড়ায় বসে বাউলের সুর তুলছেন, কেউ বা কবিতার পংক্তি লিখছেন। প্রকৃতির মায়ায় হারিয়ে আমরা এক অনন্য ঈদ উদযাপন করছি।”
জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোদাচ্ছির আলম আনন্দভরে বলেন, “অনেক দিন পর এমন একটি মনোরম পাহাড়ি জায়গা পেলাম, যেখানে প্রাণ খুলে প্রকৃতির শ্বাস নেওয়া যায়। পাহাড় আর আকাশের মিলনে মনটা যেন একদম বিশুদ্ধ হয়ে যায়। ইচ্ছে হয়, শুধু দিন নয়, রাতটাও পাহাড়ের ঠিলায় হেলান দিয়ে কাটাই।”
সারাদিন আড্ডা, গল্প, গান, কবিতা আর প্রকৃতির সৌন্দর্যে হারিয়ে যাওয়া। বিকেলের পড়ন্ত রোদে সবাই মিলে ক্যাম্পফায়ার করেন। পাহাড়ের শীতল বাতাসে গিটার বাজে, গানে মেতে ওঠেন সবাই। ঈদের দিনের এই আনন্দ যেন স্মৃতির পাতায় চিরস্থায়ী হয়ে থাকে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন,পাহাড়, ঠিলা, আকাশ আর সবুজের এই মেলবন্ধনে ঈদ উদযাপন যেন এক অনন্য অনুভূতি। প্রকৃতির সঙ্গে মিশে, সৃজনশীলতায় ভেসে, সবাই মিলে উপভোগ করছি এক অন্যরকম ঈদের আনন্দ।
যারা শহরের কোলাহল থেকে দূরে গিয়ে প্রকৃতির মাঝে সময় কাটাতে চান, তাদের জন্য শুভ ঠিলা হতে পারে এক দারুণ গন্তব্য। পাহাড়ের টিলায় বসে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি এখানে কাটানো মুহূর্তগুলো স্মরণীয় হয়ে থাকবে দীর্ঘদিন। ঈদ হোক প্রকৃতির মাঝে, আনন্দে ভরপুর।