লন্ডনে অননুমোদিত স্থানে অবৈধভাবে বর্জ্য ফেললে ১,০০০ পাউন্ড জরিমানা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ২:৪৩:৫৮ অপরাহ্ন
মারুফ হাসান ::
লন্ডনের বিভিন্ন কাউন্সিল শহরের সর্বত্র বেড়ে চলা অবৈধ আবর্জনা ফেলার (ফ্লাই-টিপিং) ঘটনা প্রতিরোধে জরিমানা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এখন থেকে ফ্লাই-টিপিংয়ের জন্য সর্বোচ্চ ১,০০০ পাউন্ড জরিমানা করা হবে, যা আগে ছিল ৪০০ পাউন্ড।
বিভিন্ন কাউন্সিল শুধুমাত্র জরিমানাই বাড়ায়নি বরং অপরাধ দমনে পরিবেশ কর্মকর্তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। ব্রিটেনের পরিবেশ, খাদ্য ও গ্রামীণ বিষয়ক দফতরের (DEFRA) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, লন্ডনে ফ্লাই-টিপিং সমস্যা সবচেয়ে বেশি এবং এটি দিন দিন বেড়ে চলেছে।
পরিবেশবাদীদের মতে, জরিমানা বাড়ানো ভালো পদক্ষেপ হলেও এটি একমাত্র সমাধান নয়। ফ্লাই-টিপিং পরিবেশ সুরক্ষা আইন, ১৯৯০ অনুযায়ী একটি অপরাধ। ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থা “কিপ ব্রিটেন টিডি” জানিয়েছে, অননুমোদিত জমিতে যেকোনো আবর্জনা ফেলা অবৈধ এবং এটি পরিষ্কারের জন্য প্রতি বছর স্থানীয় কাউন্সিলগুলোকে মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করতে হয়।
বিবিসি লন্ডনের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় অর্ধেক লন্ডন কাউন্সিল ইতিমধ্যে ফ্লাই-টিপিং জরিমানা সর্বোচ্চ ১,০০০ পাউন্ডে উন্নীত করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে: বেক্সলি, ব্রেন্ট, ব্রোমলি, ক্যামডেন, ইলিং, এনফিল্ড, হ্যামারস্মিথ অ্যান্ড ফুলহ্যাম, হ্যারো, হিলিংডন, কেনসিংটন অ্যান্ড চেলসি, লুইসহ্যাম, রেডব্রিজ, রিচমন্ড, সাউথওয়ার্ক, টাওয়ার হ্যামলেটস এবং ওয়ান্ডসওয়ার্থ।
DEFRA-এর তথ্য অনুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ইংল্যান্ডে ১১.৫ মিলিয়ন ফ্লাই-টিপিং ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে, যা ২০২২-২৩ সালের তুলনায় ৬% বেশি।
৩১% ঘটনা ছিল ছোট ভ্যানের সমপরিমাণ আবর্জনা
২৮% ঘটনা ছিল একটি গাড়ির বুটের সমান বা তার চেয়েও কম
প্রায় ৪৭,০০০ ঘটনা ছিল বড় লরি বোঝাই আবর্জনা, যা আগের বছরের তুলনায় ১১% বৃদ্ধি পেয়েছে
এ ধরনের বড় আকারের ফ্লাই-টিপিং পরিষ্কারের জন্য ২০২৩-২৪ সালে ইংল্যান্ডের স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে ১৩.১ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করতে হয়েছে।
নটিং হিলের এক বাসিন্দা বিবিসি লন্ডনকে জানান, তার এলাকায় ফ্লাই-টিপিং বেড়ে যাওয়ায় তিনি হতাশ। তিনি বলেন, “এটি আমাদের এলাকার গর্ব নষ্ট করে দেয়। যেখানে আবর্জনা ফেলা হয়, সেখানে ইঁদুরসহ অন্যান্য ক্ষতিকর প্রাণীর উপদ্রব বাড়ে।”
অন্য এক বাসিন্দার মতে, “লন্ডন একটি সুন্দর শহর। কিন্তু যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে শহরের সৌন্দর্য ও পরিচ্ছন্নতা নষ্ট হচ্ছে।”
কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ লন্ডনবাসীদের অবৈধভাবে আবর্জনা ফেলার ঘটনা দেখলেই রিপোর্ট করার আহ্বান জানিয়েছে।
কিপ ব্রিটেন টিডি সংস্থার প্রধান অ্যালিসন ওগডেন-নিউটন বলেন, “ফ্লাই-টিপিং পুরো ব্রিটেনে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে, লন্ডনও এর ব্যতিক্রম নয়।”
তিনি আরও বলেন, “জরিমানা বাড়ানো ভালো উদ্যোগ, তবে অপরাধীদের ধরা জরুরি। বর্তমানে আদালত ফ্লাই-টিপিংকে তেমন গুরুতর অপরাধ হিসেবে দেখে না, ফলে অপরাধীরা কঠিন শাস্তি পাচ্ছে না। অথচ এটি কোনো ‘ভিকটিমলেস ক্রাইম’ নয়।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, কঠোর নজরদারি, অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তি, এবং জনসচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে ফ্লাই-টিপিং সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
সূত্র : বিবিসি লন্ডন