ঈদ আনন্দে প্রকৃতি কন্যায় পর্যটকের ভিড়
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ৫:৫৯:২০ অপরাহ্ন
আব্দুর রব, বড়লেখা : ঈদের ছুটিতে প্রকৃতিকন্যা মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে এবার পর্যটকের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। দীর্ঘ ছুটি পেয়ে পর্যটকরা মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ও ইকোপার্ক ছাড়াও ছুটে গেছেন সবুজ গালিচা চা বাগান, হাকালুকি হাওর আর হাওরপারের হাল্লা পাখিবাড়িতে।
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার প্রাকৃতিক ঝর্ণা মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, সবুজ চা বাগান, হাকালুকি হাওর আর হাকালুকি হাওরপারের হাল্লা পাখিবাড়ি পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের জায়গা। সারা বছরই এ উপজেলার পর্যটন স্পটগুলোতে কমবেশি পর্যটকের পা পড়ে। আর বড় কোনো উৎসবের ছুটি হলে তো কথাই নেই! এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে টানা ৯ দিনের সরকারি ছুটি মিলেছে। তবে, এবার ঈদের উৎসবে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে। ফলে মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক ও জলপ্রপাত এলাকার পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, ইজারাদারের মুখে হাসি ফুটেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মৌলভীবাজার-বড়লেখা আঞ্চলিক মহাসড়কের কাঁঠালতলি বাজার থেকে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত পর্যটনকেন্দ্রের সড়কটি ভীষণ ব্যস্ত। বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, পিকআপ ভ্যান ও মোটরসাইকেলে হৈহুল্লোড় করে আনন্দ উপভোগকারিরা ছুটে চলেছেন মাধবকু-ের দিকে। উপচেপড়া ভিড় জমে জলপ্রপাতের প্রবেশ ফটকের সামনের টিকিট কাউন্টারে। বিভিন্ন পণ্যের দোকান, খাবার হোটেলগুলোতেও পর্যটকের সমাগম বেশ কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। পায়ে হেঁটে জলপ্রপাতের দিকে এগোতেই পর্যটকরা ইৈহুল্লোড়ে মেতে ওঠেছেন। কেউ কেউ জলপ্রপাতের ঝর্ণার পানিতে গোসল করছেন। কেউ বা ছবি তুলছেন প্রিয়জনের সাথে। কেউ জলপ্রপাতের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছেন। স্থানীয় আলোকচিত্রীরাও পর্যটকদের ছবি তুলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
বরিশালের নলছিটি উপজেলা থেকে বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে আসেন শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই প্রথম মাধকুন্ডে এসেছি। এখানকার পরিবেশ খুবই সুন্দর। অন্য এলাকার চেয়ে সিলেট ও মৌলভীবাজারে অনেক সুন্দর পর্যটন স্পট রয়েছে। প্রকৃতিপ্রেমি মানুষের সিলেট, মৌলভীবাজারের এসব পর্যটন স্পট ঘুরে দেখা দরকার। পাশাপাশি পর্যটন স্পটগুলোর প্রাকৃতিক দৃশ্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করলে এ খাত থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
শিক্ষক রকিফুল ইসলাম ঢাকা থেকে এসেছেন পরিবার নিয়ে। তিনি বলেন, মাধবকুন্ডের প্রাকৃতিক পরিবেশ তার কাছে খুবই ভাল লাগে তাই ছুটি পেলে বছরে দুই-একবার পরিবার নিয়ে এখানে ঘুরতে আসেন। প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটাই। এবার বাইরে গরম বেশি। তবে জলপ্রপাতের এ জায়গাটা বেশ শীতল লাগছে।
স্থানীয় আলোকচিত্রী তাজ উদ্দিন বলেন, মাধবকুন্ডে আমার মতো আরও ১০ থেকে ১২ জন আলোকচিত্রী আছেন। এবার পর্যটক মোটামুটি এসেছেন। রোজগার ভালোই হচ্ছে। ছবি তোলার পর পর্যটকেরা মেমোরি কার্ডে নিয়ে যাচ্ছেন।
মাধবকুণ্ড ইকোপর্কের প্রধান ফটকের কাউন্টারে থাকা জলপ্রপাত ইজারাদার কর্তৃপক্ষের কর্মচারী সাজু আহমদ বলেন, ঈদের দিন ২ হাজার ৫০০, পরদিন মঙ্গলবার আনুমানিক দেড় আর বুধবার আড়াই হাজারের মতো টিকেট বিক্রি হয়েছে। বৃহস্পতি ও শুক্রবারও মাধবকুন্ডে বিনোদনপ্রেমীদের আগমন ছিল লক্ষণীয়। তবে, ঈদের ছুটির পরেও পর্যটক সমাগম বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
বন বিভাগের সহযোগী রেঞ্জ কর্মকর্তা রবিন্দ্র কুমার সিংহ বলেন, পর্যটকদের নির্বিঘ্নে মাধবকুন্ডে আনন্দ উপভোগে তাদের নিরাপত্তায় বন বিভাগ, পর্যটক পুলিশ ও থানা পুলিশের সার্বক্ষণিক নজরদারি রয়েছে। পাশাপাশি ইজারাদারের লোকজনকেও তৎপর রাখা হয়েছে।