পর্যটকে মুখর সাদাপাথর
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ৭:১৫:৫৭ অপরাহ্ন
আব্দুল জলিল, কোম্পানীগঞ্জ: পানি পাথর আর নীল আকাশ ছোঁয়া পাহাড়ের মিতালি দেখতে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথরে ঢল নেমেছে পর্যটকের। পানিতে গা ভিজিয়ে ভ্রমণের ক্লান্তি দূর করে তারা মেতে উঠছেন আনন্দে। ঈদের ছুটিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার পর্যটকের আগমন ঘটছে সেখানে। এবারের ঈদে লম্বা ছুটি হওয়ায় প্রায় ২ লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগম ঘটবে বলে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। পর্যটকদের বরণ করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন ব্যবসায়ী, মাঝি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে উপচেপড়া ভিড় থাকায় নৌকা পেতে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে পর্যটকদের। টুরিস্ট পুলিশের স্থায়ী ক্যাম্প না থাকায় পর্যটকদের নিরাপত্তায় থানা পুলিশ ও আনসার সদস্যদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। তাছাড়া গাড়ি পার্কিং এরিয়ায় ছোট বড় গর্তে পানি জমে থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে গাড়ি চালকদের।
ঈদের দিন থেকে টানা শনিবার পর্যন্ত ছুটি হওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাদাপাথরে ঢল নেমেছে পর্যটকদের। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার পর্যটকের আগমন ঘটছে। পর্যটকদের সেবা দিতে সেখানকার ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। পর্যটন ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সফাত উল্লাহ জানিয়েছেন রেস্টুরেন্টে কসমেটিকস ও কাপড়ের দোকানগুলোতে পর্যটকদের সেবা দিতে প্রচুর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পর্যটকদের সৌজন্যতার সাথে সর্বোচ্চ সেবা দিতে সকল ব্যবসায়ীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এদিকে ঈদ উপলক্ষে সাধারণ সময়ের চেয়ে নৌকার সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। এই ঈদে ১৬০টি নৌকা ভোলাগঞ্জ ১০নম্বর থেকে সাদাপাথরে পর্যটকদের বহন করছে। তারপরেও নৌকার জন্য পর্যটকদের লম্বা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। বেলা ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে পর্যটকদের নৌকার টিকিট সংগ্রহ করতে হচ্ছে। অনেক সময় দেড় থেকে দুই ঘন্টা অপেক্ষা করে নৌকা পেতে হয়। দেশের জনপ্রিয় এই পর্যটন কেন্দ্রে নেই টুরিস্ট পুলিশের ক্যাম্প। সিলেট থেকে মাঝে মধ্যে এসে তারা ডিউটি পালন করে থাকেন। টুরিস্ট পুলিশ না থাকায় কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে পর্যটকদের নিরাপত্তায় সাদাপাথরে ডিউটি পালন করতে হচ্ছে। তাদের সাথে আনসার সদস্যরাও ডিউটি পালন করছে।
ঈদে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার গাড়ি পর্যটকদের বহন করে নিয়ে আসে। প্রতিটি গাড়ি পার্কিংয়ের টাকা দিয়ে রাস্তা থেকে পার্কিং এরিয়ায় প্রবেশ করতে হয়। আগে পার্কিং এরিয়ায় গাড়ি থেকে টাকা নেওয়া হতো। ঈদে গাড়ির চাপ বাড়ায় এখন মেইন রাস্তায় টাকা দিয়ে গাড়ি প্রবেশ করতে হচ্ছে। এসব গাড়ির আকার ভেদে ১০ থেকে ২’শ টাকা পর্যন্ত পার্কিং ফি নেওয়া হচ্ছে। পার্কিং এর জন্য গাড়ি থেকে টাকা নিলেও পার্কিং এরিয়ার উন্নয়নে কোন কাজ করা হয় না। ঈদের দিন থেকে প্রতি রাতে বৃষ্টি হওয়ায় ছোট-বড় গর্তে পানি ও কাদা জমে আছে। যার জন্য গাড়ি পার্কিং করতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে গাড়ি চালকদের। তাছাড়া পার্কিংয়ের গাড়িগুলোর নিরাপত্তার জন্য নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রায়ই বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি হচ্ছে পার্কিং এরিয়া থেকে।
নরসিংদির মাধবদী থেকে মোহাম্মদ ফয়সাল তার ১৩জন বন্ধুকে নিয়ে সাদাপাথর ঘুরতে আসেন। তিনি জানান এই প্রথম এখানে ঘুরতে আসছেন তারা। সাদাপাথরের সৌন্দর্য দেখে তারা মুগ্ধ। সময় পেলে আবারও ঘুরতে আসবেন তিনি।
তুষার দেবনাথ পরিবারের লোকজনদের নিয়ে ঢাকা থেকে ঘুরতে আসছেন সাদাপাথরে। এর আগেও তিনি আরো দু’বার সাদাপাথর ঘুরে গেছেন। পাথরের উপর দিয়ে বয়ে চলা পানি আর পাশ ঘেঁষা পাহাড়ের সৌন্দর্য্য বারবারই তাকে টানে। সাদাপাথরের পর্যটকদের জন্য আরো সুযোগসুবিধা বাড়াতে হবে বলেও তিনি জানান।
সাদাপাথর হোটেল এন্ড রিসোর্টের ম্যানেজার মোঃ জুয়েল জানান, এবারের ঈদে লম্বা ছুটি থাকায় আগে থেকেই অনেক রুম বুকিং ছিল। ঈদের পর ৩দিন আমাদের হোটেল ফুল বুকিং ছিল। তাছাড়া রেস্টুরেন্টেও ভালো রেসপন্স ছিল। পর্যটকদের বরণ করতে আমাদের হোটেলে সাজসজ্জার পাশাপাশি সার্ভিসও বাড়ানো হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুন্নাহার বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ১২জন আনসার সদস্য ডিউটি পালন করছে। তাছাড়া থানা পুলিশের একটি টিমও কাজ করছে। তবে টুরিস্ট পুলিশের স্থায়ী কোন ক্যাম্প না থাকায় তারা সিলেট থেকে এসে কাজ করছে। এর বাইরেও ইউএনও অফিস এবং এসিল্যান্ড অফিস নিয়মিত তদারকি করছে। ঈদের দিন পর্যটক কিছুটা কম হয়েছেন। এর পর থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৫-২০ হাজার পর্যটক এখানে ঘুরতে আসছেন। আর পার্কিং এরিয়ায় ড্রাইভাররা গাড়ি এলোমেলো করে রাখায় অনেকটা গেদারিং হচ্ছে। গাড়ি রাখার পর্যাপ্ত জায়গা আছে। ড্রাইভাররা যদি সুশৃঙ্খল করে গাড়ি রাখে তাহলে এমন ঝামেলা হবে না।