কুশিয়ারায় বিলীন গ্রাম : ক্ষতির পরিমাণ ২০ কোটি টাকা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ৫:৪৮:৫৮ অপরাহ্ন
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: নদী ভাঙ্গনে মৌলভীবাজারের কুশিয়ারা নদীগর্ভে চলে গেছে একটি গ্রাম। এতে গ্রামের প্রায় দেড়শ দিনমজুর নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছেন। অধিকাংশ মানুষ খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছেন। ঘর হারিয়ে নির্ঘুম রাত পার করা প্রত্যেক মানুষের চোখে বেদনার ছাপ। এছাড়াও নদীপাড়ের অন্যান্য এলাকা মিলে নদী ভাঙ্গনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হবে প্রায় ২০ কোটি টাকার।
সরেজমিন কুশিয়ারা পাড়ে দেখা যায়, জেলার রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের ছিক্কাগাঁও গ্রামের প্রায় সিংহভাগ নদীতে ধসে পড়েছে। কিছু ঘরবাড়ি মাটির নিচে চাপা পড়ে আছে। গাছ-গাছালি উপড়ে গিয়ে পড়েছে নদীর মধ্যভাগে। গ্রামের ১৫টি ঘর বিলীন হয়ে প্রায় দেড়শো মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
যারা ক্ষতিগ্রস্ত তারা সবাই দিনমজুরের কাজ করেন পাশের কালারবাজারে। ঘর হারিয়ে পাশের খোলা আকাশের নিচে খড়কুটো দিয়ে বসবাস করছেন তারা। ক্ষতিগ্রস্তরা জানিয়েছেন, তারা দিন আনেন দিন খান। বাড়তি জমি কিনে ঘর বানিয়ে বসবাস করার মত তাদের সম্বল নেই। ছিক্কাগাঁও গ্রামের জমিসহ তলিয়ে যাওয়া ঘরবাড়ির ক্ষতির পরিমাণ হবে প্রায় ১ কোটি টাকা।
নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্তরা হলেন- এনামুল হক, নূর মিয়া, আরকান আলী, আছমা বেগম, আব্দুল জলিল, সুহেল মিয়া, তকবির মিয়া, সেলিনা বেগম, জুসনা বেগম, আকিল মিয়া ও সাজু মিয়াসহ আরও অনেকে।
এদিকে, নদী ভাঙ্গনের ঘটনায় দেড়মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসন কিংবা বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সরেজমিন পরিদর্শন ও বাড়িহারা নিঃস্ব পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়নি বলে জানিছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। জেলার শেরপুরসহ অন্যান্য এলাকায় নদী ভাঙ্গন দেখা দিলে তড়িঘড়ি করে পাউবো জিও ব্যাগ কিংবা ব্লকের আওতায় এনে ক্ষতিগ্রস্তদের দুশ্চিন্তামুক্ত করেন। ছিক্কাগাও ভাঙ্গনের ৪৫ দিন অতিবাহিত হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড এগিয়ে না আসায় স্থানীয়রা ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
ভাঙ্গন কবলিত ছিক্কাগাঁও গ্রামের এনামুল হক, আরকান আলী, তকবির মিয়া, সেলিনা বেগম ও আছমা বেগম বলেন, মাথা গোঁজার একমাত্র সম্বল হারিয়ে খোলা আকাশের নীচে বাস করছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কারও সহযোগিতা পাইনি। আমরা গরীব হয়ে কি অপরাধ করেছি।
ছিক্কাগাঁও ইবতেদায়ী মাদ্রাসার সভাপতি মোঃ ফারুক মিয়া বলেন, যতটুকু ভেঙ্গেছে ওই জায়গাসহ যদি এখনি পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্লকের আওতায় নিয়ে না আসে তবে গ্রামের আরও বেশ ক’টি জায়গা ভেঙ্গে নদীতে তলিয়ে যাবে। এছাড়াও নদীর উত্তরভাগ ইউনিয়নের জুগিকোনা, কেশরপাড়া, সুনামপুর, উমরপুর, বেড়কুড়ি ও শাহাপুর গ্রামের পাড় ভেঙ্গে আরও ৫০টির মত ঘর তলিয়ে গেছে। তলিয়ে যাওয়া জমি বাড়ি-ঘরসহ সবমিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০ কোটি টাকা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয়রা।
মৌলভীবাাজর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ খালেদ বিন অলীদ বলেন, কালারবাজারসহ ওই জায়গা ভেঙ্গে যাবার বিষয়টি জেনেছি। নদী ভাঙ্গন কবলিত জায়গা ব্লকের আওতায় নিয়ে আসতে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে কাজ আসতে দেরি হবে।