১ যুগ পর হচ্ছে বাংলাদেশ-পাকিস্তান রাজনৈতিক সংলাপ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ৯:৫৯:৩৩ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : এক যুগ পর আবার মুখোমুখি হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার দুই গুরুত্বপূর্ণ দেশ- বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। ২০১২ সালের পর এই প্রথম রাজনৈতিক আলোচনায় বসছে তারা। এতদিন ধরে যে নিঃশব্দ দূরত্ব ছিল, তা এবার সংলাপের মাধ্যমে কমিয়ে আনার উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। এটি শুধু দুই দেশের নয়, গোটা অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।দীর্ঘ বিরতির পর আলোচনার টেবিলে বসা মানেই সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে ভাবার সুযোগ। উভয় পক্ষই ভবিষ্যতের রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণে আগ্রহী। একে শুধু সৌজন্য সাক্ষাৎ বললে কম বলা হবে। এটি একটি কৌশলগত মোড় নেয়ার সম্ভাবনা তৈরি করছে।
যারা আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের ভূমিকাও তাৎপর্যপূর্ণ। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ এই আলোচনায় প্রতিনিধিত্ব করবেন। এতে বোঝা যায়, পাকিস্তান আলোচনা নিয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। সম্পর্ক জোরদারের প্রস্তাব এবং যৌথ উদ্যোগের পরিকল্পনা তুলে ধরা হবে।
বিশেষ করে একটি যৌথ মন্ত্রী পর্যায়ের কমিশন পুনর্বহালের প্রস্তাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি সম্পর্ককে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারে। শুধু আনুষ্ঠানিক সৌজন্য নয়, বাস্তব ক্ষেত্রেও সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার পথ খুলে দিতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রীর সফর তাৎপর্য বহন করে। ২২ থেকে ২৪ এপ্রিলের এই সফর কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে বড় এক সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এমন সফর কেবল প্রতীকী নয়, বরং বাস্তব সহযোগিতার পথ প্রশস্ত করার মাধ্যম।
দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক পুনর্গঠনের এই উদ্যোগ শুধু তাদের মধ্যকার নয়, বৃহত্তর আঞ্চলিক রাজনীতির সাথেও জড়িত। আলোচনার ফলাফল যদি ইতিবাচক হয়, তাহলে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্কব্যবস্থা তৈরি হতে পারে।
সম্প্রতি দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তনের আভাস মিলছে। অতীতে ভারতের সাথে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এই প্রক্রিয়ায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেই ধারা কিছুটা বদলেছে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারতের প্রভাব হ্রাস করে বিকল্প কূটনৈতিক পথ খুঁজছে। এর ফলে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক জোরদারের একটি বাস্তব সুযোগ তৈরি হয়েছে। এতে সামরিক সহযোগিতা এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির দিকেও মনোযোগ দেয়া হচ্ছে।
এদিকে, বাংলাদেশ চীনের সাথেও ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে। বিশেষ করে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে অংশগ্রহণ এই প্রক্রিয়াকে আরো ত্বরান্বিত করছে। পাকিস্তান ও চীন আগে থেকেই কৌশলগত অংশীদার। বাংলাদেশ সেখানে যুক্ত হলে একটি নতুন ত্রিপক্ষীয় কাঠামো গড়ে উঠতে পারে।
এই পরিস্থিতি একদিকে দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক ভারসাম্য পুনর্গঠনের ইঙ্গিত দেয়, অন্যদিকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পারস্পরিক সম্পর্কেও এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটাতে পারে। সবকিছু নির্ভর করছে এই আলোচনার গতিপথ ও বাস্তবায়নের ওপর।