শিকলে বন্দি বাবুল বৈষ্ণব: এক মানবিক করুণ আর্তনাদ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ৯:১৮:২৬ অপরাহ্ন
একটি ভাঙা, পরিত্যক্ত ঘরের মাটিতে বসে আছেন একজন মানুষ—দেহে পায়ে শিকল বাঁধা। চারপাশে ওষুধের ফাঁকা পাতা ছড়িয়ে আছে। মুখে নেই কোনো হাসি, চোখে নেই কোনো আশার রেখা। তিনি বাবুল বৈষ্ণব—হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার ঝিলুয়া গ্রামের এক অসহায় নাম।
গত ২০ দিন ধরে এই মানুষটিকে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে পরিবারিক কলহের কারণে। তাঁর অভিযোগ, স্ত্রী, ছেলে ও কাকার সঙ্গে ঝগড়ার জেরে তাকে ‘পাগল’ আখ্যা দিয়ে শিকলে বেঁধে রেখেছে স্বজনরাই। অথচ বাবুল বারবার দাবি করছেন—”আমি পুরোপুরি সুস্থ, আমার কোনো মানসিক সমস্যা নেই। শুধু একটুখানি ঝগড়ার কারণে আমাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। “তার পাশে পড়ে থাকা ওষুধগুলো আর বিবর্ণ মুখটাই যেন প্রমাণ করছে তার দুর্ভোগ। তিনি বলেন, “আমাকে ঠিকমতো খাবার দেয় না। আমার বৃদ্ধা মা মাঝেমধ্যে খাবার দেয়, তাও সহ্য হয় না ওদের। একদিন মা যখন খাবার দিতে এলেন, থালাটা কেড়ে নিয়ে ফেলে দিলো। মায়ের সাথেও রাগারাগি করল।”
বাবুল বৈষ্ণব জানালেন, মাত্র কয়েকদিন আগেও তিনি কৃষিকাজ করতেন, গ্রামে ঘুরে ঘুরে সবজি ও বীজ বিক্রি করতেন। পরিবার চালাতেন, সন্তানদের বড় করেছেন। আজ সেই পরিবারই তাকে অসহ্য যন্ত্রণার মাঝে বন্দি করে রেখেছে।
তিনি আরও বলেন, “ওরা আমাকে মারছে। চোখ, বাহু, শরীরের নানা জায়গায় ফোলা। কিন্তু কোনো ওষুধ দেয়নি। মা কষ্ট করে কিছু ওষুধ এনে দিয়েছে।” অন্যদিকে অভিযুক্ত কাকা রথীন্দ্র চৌধুরী বলছেন, “বাবুল হঠাৎ হঠাৎ আক্রমণাত্মক হয়ে পড়ে, দা নিয়ে তেড়ে আসে। তাই নিরাপত্তার জন্য তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে।” তবে স্থানীয়দের ভাষ্য একেবারেই ভিন্ন। তাদের দাবি, বাবুল কোনোভাবেই মানসিক ভারসাম্যহীন নন। বরং দীর্ঘদিন ধরেই পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছেন। কেউ কেউ বলছেন, বাবুলের সঙ্গে যারা অন্যায় করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এ প্রসঙ্গে বদলপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য দিলীপ কুমার চৌধুরী বলেন, “বিষয়টি আগে জানতাম না। এখন যেহেতু শুনলাম, খোঁজ নিয়ে দেখব। তবে বাবুলকে আমি কখনো খারাপ ব্যবহার করতে দেখিনি।”
এই ঘটনার মানবিক ও আইনি দিক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে কাউকে শিকলবন্দি করে রাখা চরম অমানবিক ও আইনবিরোধী। বাবুল বৈষ্ণবের এই করুণ পরিণতি আমাদের সমাজ ও প্রশাসনের কাছে এক বড় প্রশ্ন ছুড়ে দেয়—একজন মানুষ কতটা অসহায় হলে নিজের বাড়িতে এভাবে বন্দি হয়ে থাকতে পারে? এই ঘটনাটি আমাদের ভাবিয়ে তোলে। বাবুলের মুক্তি দরকার, দরকার তার চিকিৎসা, দরকার মানবিকতার জয়।