বাঁচতে চায় জ্যোতি, বাঁচানোর আকুতি পিতার
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১:৫০:২৩ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: ফাইজা আনজুম জ্যোতি। ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বয়স ২০ পেরিয়ে সবেমাত্র ২১-এ পড়েছে। জীবনের সোনালী সময়ে যখন উচ্ছল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, সম্ভাবনার সুতোয় গাঁথছে মালা-তখনই শরীরে বাসা বেঁধেছে মরণব্যধী ক্যান্সার। ‘হজকিন লিম্ফোমা ক্যান্সার’ নামক এই জটিল ব্যাধিতে হঠাৎ থমকে গেছে তাঁর জীবন। হাসপাতালে বিছানায় মুহূর্ত পার করছে বিষাদের কালো ছায়ায়। কিন্তু সে বাঁচতে চায় প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা এই সুন্দর পৃথিবীতে…।
তবে জ্যোতিকে বাঁচানোর চেষ্টায় কোন কমতি রাখেনি পরিবার। সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে প্রাণের কন্যার জন্য এ পর্যন্ত ২২ লক্ষ টাকা খরচ করেছেন শিক্ষক পিতা মো: আব্দুল মুহিত। সিলেটের একটি বেসরকারী হাসপাতালে প্রায় ৬ মাস চিকিৎসা করিয়েছেন। এ সময়ে কিছুটা উন্নতি হলেও সম্প্রতি আবারও দু:সংবাদ দিয়েছেন চিকিৎসক। এবার ধরা পড়েছে ‘লিভার ও লান্সে’ ক্যান্সার। এ যেন ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’।
এই দু:সংবাদ পেয়ে পরিবারে আবারো ভর করেছে হতাশার কালো মেঘ। চোখেমুখে অন্ধকার দেখছেন সিলেটের জৈন্তাপুরস্থ হযরত শাহজালাল (রহ.) ডিগ্রি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আব্দুল মুহিত। কিভাবে করাবেন মেয়ের এই জটিল রোগের ব্যয়বহুল চিকিৎসা-এ চিন্তায় এখন তিনি পার করছেন একেকটি নির্ঘুম রাত। কোন উপায়ান্তর না দেখে তিনি স্বরণাপন্ন হলেন দৈনিক জালালাবাদের। সকল সংকুচতাকে পেছনে রেখে চাইলেন সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা। জ্যোতির চিকিৎসায় প্রয়োজন অন্তত: ৪০ লাখ টাকা।
জ্যোতির অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন, জরুরী ভিত্তিতে ঢাকার সিএমএইচ অথবা ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে জ্যোতির ‘বোন মেরো ট্রান্সপ্লান্টেশন’ করাতে হবে। তবেই হয়তো বেঁচে যাবে জ্যোতি।
তাঁর পিতা অধ্যাপক আব্দুল মুহিত দৈনিক জালালাবাদকে জানালেন, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে জ্যোতির রোগটি ধরা পড়ে। এরপর ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হয়। চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকা মহাখালী ক্যান্সার হাসপাতালেও মেয়েকে নিয়ে তিনি চিকিৎসা করান। সেখানে প্রায় দীর্ঘ দুই মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর মেয়েকে নিয়ে সিলেটে চলে আসেন তিনি। এরপর আবারো সিলেটের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে প্রায় ছয় মাস চিকিৎসার পর কিছুটা উন্নতি হয়। কিন্তু সম্প্রতি আবারও লিভার ও লান্সে ক্যান্সার ধরা পড়েছে। এ অবস্থায় জ্যোতিকে নগরীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ইতোপূর্বে তাঁর চিকিৎসার পেছনে প্রায় ২২ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনুমানিক ৪০ লক্ষ টাকার প্রয়োজন।
মেয়ের জটিল রোগে হতভম্ব পিতা বললেন, হাসপাতালের বিছানায় শুয়েও সেই স্বাভাবিক ছন্দময় জীবনে ফেরার স্বপ্নে বিভোর জ্যোতি। আবারো সে প্রিয় ক্যাম্পাসে যেতে চায়, জীবনের বিস্তৃতির পথে হাঁটতে চায়। তাই তিনি শুভাকাঙ্খী ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে দোয়া ও সহযোগিতা চান। স্বপ্ন দেখেন মেয়েটি আবার হাসি-খুশিতে ভরিয়ে তুলবে ঘর।
শুধু কি পিতা, জ্যোতির ফেরার আশায় পথ চেয়ে আছে তাঁর বোন ও ভাই, অপেক্ষার প্রহর ফুরাচ্ছেনা জন্মদাত্রী মায়ের ও অসংখ্য সহপাঠী-শিক্ষকের। তাদের সবার স্বপ্নকে সত্যি করতে প্রয়োজন দোয়া, ভালোবাসা ও সহযোগিতা। তাতে হয়তো দুরোরোগ্য ক্যান্সারকে পরাজিত করে আবারো জ্যোতির আলোতে আলোকিত হবে একটি পরিবার।