শান্তিগঞ্জে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড, নিঃস্ব ১০ পরিবার
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ এপ্রিল ২০২৫, ৭:৩২:২৬ অপরাহ্ন
আলাল হোসেন, শান্তিগঞ্জ : শান্তিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে ১০টি বসতঘর ও একটি দোকানের গোদাম পুড়ে ছাড়খার হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। একমাত্র মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে নিঃস্ব দশ পরিবারের স্থান হয়েছে খোলা আকাশের নিচে। পরিবারগুলোর অর্ধশতাধিক সদস্যদের নিয়ে কোথায় এবং কীভাবে বসবাস করবেন তা-ই ভেবে দিশেহারা পরিবারের জ্যেষ্ঠ ও অভিভাবক সদস্যরা। শনিবার রাত সাড়ে ১২টায় ইউনিয়নের সলফ গ্রামের পূর্বপাড়ায় মর্মান্তিক এই অগ্নিকান্ডের ঘটনাটি ঘটেছে। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। তবে ক্ষতি হয়েছে সম্পদের। ক্ষতিগ্রস্তরা হলেন- গ্রামের মৃত আবদুল মুতলিবের ছেলে মো. আবুল হাসনাত, মো. ছইফুল ইসলাম, মো. শহিদুল ইসলাম, আবদুল মান্নানের ছেলে আবুল লেইচ, আবদুল কাহারের ছেলে আবদুল বাসিত, আবদুল শফিকের ছেলে আবদুল জাহির, আবদুল জলিল, আবদুল মমিন, মৃত আস্কন্দর আলীর আবদুল রব ও আবদুল তাহিদ। ধারণা করা হচ্ছে রান্না ঘর থেকে ইলেক্ট্রিক শর্ট সার্টিট থেকে অগ্নিকা-ের সূত্রপাত হতে পারে।
শনিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দশটি বসতঘর পুড়ে একদম ছাড়খার হয়ে গেছে। মাটিতে পড়ে আছে পুড়ে যাওয়া বাঁশ, কাঠ ও টিনের ধ্বংসাবশেষ। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আগুনে ভস্মিভূত হওয়া মোরগ, ধান, চাল ও এ্যালুমিনিয়ামের হাড়িপাতিল। সবদিক থেকে আসছে পোঁড়ার গন্ধ। আম ও কাঁঠাল গাছও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দু’একটি ঘরের পাকা পিলার ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট পাওয়া যায়নি। পায়ের নিচে পড়ে ছিলো ঘরগুলোর পুড়ে যাওয়া ছাই ও বসত ঘরের স্বপ্ন। বাতাসে উড়ছিলো ক্ষতিগ্রস্তদের আহাজারি!
কান্না জড়িত কণ্ঠে আহাজারি করতে করতে ক্ষতিগ্রস্ত আবুল হাসনাত, সাফিয়া বেগম, হুসনারা বেগম, আবদুল মমিন ও নূর নেছা বলেন, আমাদের ঘর থেকে একটি কাপড়ও বের করতে পারিনি। ধারণা করছি, পেচনে থাকা রান্না ঘরে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে। আমাদের শিশু ও বৃদ্ধ মানুষকে কীভাবে বাঁচাবো তাই নিয়ে বেশি চিন্তিত ছিলাম। নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, দলিদ-দস্তাবেজ, বই, জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধন, আসবাবপত্র, ধান, চাল, হাঁস-মোরগ, কৃষি কাজে ব্যবহৃত ৩টি পানির পাম্পসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখন সরকার ও দেশের মানুষের কাছে সহযোগিতা কামনা করা ছাড়া আমাদের আর কোনো পথ খোলা নেই। আবদুল জাহির বলেন, আমার ঘরের দু’তলায় দোকানের গোডাউন ছিলো। অনেক দূর থেকে আগুন আমার ঘরে এসে সব মালামাল পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। আমার অন্তত ৭/৮ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ক্ষতির পরিমাণ হবে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। আমরা সব নিঃস্ব হয়ে গেলাম।
প্রতিবেশি ও সাবেক ইউপি সদস্য আশাদ মিয়া এবং প্রবীণ মুরব্বি আবদুল মকদুস বলেন, রাত সাড়ে ১২টায় হঠাৎ আগুন দেখতে পাই। মুহুর্তেই এক ঘর থেকে আরেক ঘরে ছড়িয়ে পরে এই আগুন। আগুনের এমন লেলিহান শিখা এর আগে কোনো দিন দেখিনি। ফায়ার সার্ভিসকে কল দেওয়া হলে রাস্তা ভালো না থাকায় তাদের আসতে দেরি হয়েছে। তবুও তারা যদি না আসতো এই আগুন আরো নানান ঘরবাড়ি পুড়াতো। তারা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
শান্তিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, খবর পাওয়া মাত্রই আমরা ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। রাত ১টা ৫ মিনিটে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করি। ৩ ঘন্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই। এর মধ্যে ১০টি বসত ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ১৫ লক্ষ টাকা হবে। আমরাও ধারণা করছি, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুকান্ত সাহা বলেন, আমরা খবর পেয়েছি। অর্তন্ত দুঃখজনক ঘটনা। বিকাল ৪টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিকভাবে সবক’টি পরিবারকে শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। সপ্তাহখানেক পর কিছু টিনের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবো। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগিতা থাকবে।
এদিকে, ঘটনা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ফারুক আহমদ। তিনি বলেন, আমাদের পার্টির পক্ষ থেকে একটি সহযোগিতা তাদেরকে করা হবে। সেই সাথে জেলা প্রশাসক সাহেবের সাথে আমাদের একটি টিম দেখা করে কথা বলবো। আমরা আহ্বান করছি জেলা প্রশাসক ও জেলা ত্রান কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তাদের বাসস্থানের একটি ব্যবস্থা করবেন। এসময় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির প্রথম যুগ্ম-আহ্বায়ক রওশন খান সাগর ও সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেনসহ আরো নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরিদর্শন শেষে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার আশ্বাস দেন ফারুক আহমদ। অপরদিকে, বিকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিদর্শন ও সহযোগিতার করার আশ্বাস প্রদান করেছেন সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রিয় যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি আনছার উদ্দিন।