ছাত্রলীগ নেতাকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় মামলা : বড়লেখায় গ্রেফতার আতঙ্কে ৩ গ্রাম পুরুষশূন্য
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ৬:১২:৪৫ অপরাহ্ন
বড়লেখা প্রতিনিধি:
বড়লেখা উপজেলার কলাজুরা বাজারে গ্রেফতারের পর এক ছাত্রলীগ নেতাকে তার স্বজন ও সহযোগিরা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে পুলিশ বাদি হয়ে থানায় মামলা হয়েছে। ওই মামলার আসামিদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশ উপজেলার কলাজুরা, পূর্ব-হাতলিয়া ও কাশেমনগর গ্রামে অভিযান চালাচ্ছে। ঘটনার রাতেই (১২ এপ্রিল শনিবার) পুলিশ কলাজুরা বাজারের একজন ফার্মাসিস্ট ও দুই ব্যবসায়ীসহ চারজনকে গ্রেফতার করে পরদিন আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে।
এরপর পুলিশের গ্রেফতার অভিযানে কলাজুরা, পূর্ব-হাতলিয়াসহ আশপাশের গ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত তিনদিন ধরে এই গ্রামগুলো প্রায় পুরুষশূন্য। ভয়ে স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা দোকানপাটও বন্ধ রেখেছেন। সোমবার রাতে এক প্রতিবাদ সভায় কলাজুরা বাজারের ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী এমন অভিযোগ করেন। মূলত গ্রেফতার এক ফার্মাসিস্ট ও দুই ব্যবসায়ীর মুক্তির দাবিতে এবং নিরীহ মানুষের বাড়িতে পুলিশের অভিযানের প্রতিবাদে এই সভার আয়োজন করা হয়।
জানা গেছে, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আজির উদ্দিনের ছেলে দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাসুম আহমদ হাসানের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা রয়েছে। শনিবার (১২ এপ্রিল) রাতে বড়লেখা থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই তৌহিদুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ কলাজুরা বাজারে অভিযান চালিয়ে ছাত্রলীগ নেতা মাসুম আহমদ হাসানকে গ্রেফতার করে গাড়িতে উঠাতে গেলে তার স্বজন ও সহযোগিরা তাকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়। ঘটনার পরই পুলিশ অভিযান চালিয়ে কলাজুরা বাজারের ফার্মাসিস্ট গৌরধন সিংহ, ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম, জামিল আহমদ ও মুরাদ আহমদকে গ্রেফতার করে। ঘটনার রাতেই এসআই দেবল চন্দ্র সরকার ছাত্রলীগ নেতা মাসুমসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ ও আরও ৫০-৬০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় মামলা করেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রকৃত কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার সময় একজন ফার্মাসিস্ট ও ব্যবসায়ীসহ চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ব্যবসায়িদের দাবি গ্রেফতারকৃতরা কেউ আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নয় এবং পালিয়ে যাওয়া ছাত্রলীগ নেতার কোনো আত্মীয়-স্বজনও নয়। শুধুমাত্র হয়রানির উদ্দেশ্যে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেছে। তবে, পুলিশের দাবি, গ্রেফতারকৃতরা ঘটনায় জড়িত।
এদিকে, ঘটনার পর পুলিশ আসামিদের গ্রেফতারের জন্য কলাজুরাসহ আশপাশের গ্রামে অভিযান চালাচ্ছে। রোববার রাতে কলজুরা বাজারের ব্যবসায়ী স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য আজম ইসলামের বাড়িসহ অনেক বাড়িতে পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে। এতে ওই গ্রামবাসির মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভয়ে অনেকে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র থাকছেন। এমনকি ভয়ে স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরাও দোকানপাটও বন্ধ রাখছেন। এদিকে এই ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার রাতে কলাজুরা বাজারের ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী পুলিশি হয়রানীর বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদ সভা করেছেন।
সভায় দক্ষিণভাগ ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক বেলাল মিশরীর সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) ইমরান আহমেদ, দক্ষিণভাগ ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক এবি সিদ্দিকী দুলাল, ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য সচিব ইউপি সদস্য আমিনুল হক, উপজেলা যুবদলের সদস্য জুবেল আহমদ, জামায়াত নেতা এমদাদুর রহমান স্বপন, গ্রেফতার ব্যবসায়ী তাজুল ইসলামের বড়ভাই নজরুল ইসলাম, কলাজুরা শাহী ঈদগাহ কমিটির সভাপতি মাওলানা লুৎফুর রহমান প্রমুখ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সুব্রত চন্দ্র দাস জানান, প্রকৃত আসামিদের শনাক্ত করে তাদের বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে। এরই মধ্যে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিরীহ কোনো মানুষের বাড়িতে পুলিশ অভিযান করেনি। তাদের ভয় পাওয়ার কারণ নেই।