বোরো ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর দাবী
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৭:৪৩:০২ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জে চলতি মৌসুমে সরকারিভাবে বোরো ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধির দাবি জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে পুরাতন বাস স্টেশনের দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানায় জেলা বিএনপি ও কৃষকদলের নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সদস্য এডভোকেট আব্দুল হক বলেন, সুনামগঞ্জ জেলায় মোট কার্ডধারী কৃষকের সংখ্যা ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৭৭ জন। এবার সুনামগঞ্জে কৃষকপর্যায় থেকে মাত্র ১৪ হাজার ৬০০ মেট্রিকটন ধান সরকারিভাবে সংগ্রহ করা হবে, যা বিগত বছরের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। এই হিসেবে পৌণে চার লাখ কার্ডধারী কৃষকের মধ্য থেকে মাত্র সাড়ে ১৪ হাজার কৃষক সরকারি গোদামে ধান সরবরাহের সুযোগ পাবেন। বছর বছর এই জেলায় ধানের উৎপাদনের পরিমাণ বেড়েই চলছে। এই হিসেবে সাড়ে তিন লাখেরও বেশি কৃষকের মধ্যে একেবারে স্বল্প সংখ্যক কৃষক সরকারিভাবে ধান সরবরাহের আওতায় আসবেন, যা পিছিয়ে পড়া একটি জেলার জন্য কিছুতেই কাম্য হতে পারে না। সেইসাথে এমন উদ্যোগে বোরো ধান আবাদে কৃষকদের মাঝে অনিহা সৃষ্টি হবে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জ জেলা একটি বোরোপ্রধান এলাকা। ২৬ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত এখানকার প্রায় ৭০ ভাগ মানুষ প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে বোরো চাষের ওপর নির্ভরশীল। নিম্নাঞ্চল হওয়ায় বছরে একবার মাত্র ধান আবাদের সুযোগ পান কৃষকের এবং এই বোরো ধানকে কেন্দ্র করে তাদের জীবনের যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয়। ২০২৫ সালে বোরো মৌসুমে প্রায় সোয়া ২ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এ বছর ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিকটন। অভ্যন্তরীন চাহিদা মিটিয়ে এই জেলা থেকে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তায় বিপুল পরিমাণ যোগান দিয়ে থাকে। একইভাবে বিগত বছর মিলারদের কাছ থেকে ২৫ হাজার মেট্রিকটন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। এবারের সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। তবে এই অঞ্চলের মিলগুলোর বেশিরভাগ আতপ চাল উৎপাদন করায় চাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিষয়টি নজরে রাখা প্রয়োজন। যাতে সুযোগ সুবিধা এখানকার কৃষকরা পান।
কৃষক পর্যায় থেকে বোরো ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রে চার দফা দাবি তোলে বিএনপি ও কৃষক দল। সেগুলো হচ্ছে, হাওরাঞ্চলের প্রান্তিক কৃষকের স্বার্থে চলতি বোরো ধান সংগ্রহ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা কয়েকগুণ বাড়িয়ে সরকারিভাবে ধান বেশি করে ক্রয়ের উদ্যোগ নেওয়া। অতিরিক্ত ধান গোদামজাত করতে প্রয়োজনে অন্য জেলার গোদামে পাঠানোর ব্যবস্থা করা। ফ্যাসিবাদ আমলে তৈরি কৃষিকার্ডগুলো পুনঃ যাচাইয়ের উদ্যোগ নিতে হবে, যেগুলো অনেক ক্ষেত্রেই অকৃষক দলীয় কর্মীদের প্রদান করা হয়েছে। ধান-চাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে হাওরের প্রকৃত প্রান্তিক কৃষদের অর্ন্তভুক্ত করা এবং ধান-চাল সরকারিভাবে সংগ্রহের ক্ষেত্রে কোনও সিন্ডিকেট যেন সুবিধা নিতে না পারে, সেই ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে সজাগ থাকা।
জেলা কৃষক দলের আহবায়ক আনিসুল হকের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আব্দুল ওয়াদুদের সঞ্চালনায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপি নেতা মল্লিক মঈন উদ্দিন সোহেল, মাসুক আলম, শেরেনূর আলী, নূরুল ইসলাম নূরুল, মোনাজ্জির হোসেন সুজন, সাইফুল্লাহ হাসান জুনেদ, নজরুল ইসলাম, রাকাব উদ্দিন, আ ত ম মিসবাহ, মোর্শেদ আলম জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মুনাজ্জির হোসেন, সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম, কৃষক দল নেতা সিরাজুল ইসলাম পলাশ প্রমুখ।