নিত্যপণ্যের দামে ফের উর্ধ্বগতি, পেঁয়াজ তেল সবজিতে অস্বস্তি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১০:১৯ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : রমজান ও ঈদুল ফিতরের পর বাজারে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দামে ফের উর্ধ্বগতি শুরু হয়েছে। পেঁয়াজের ভরা মৌসুম এখন। এরপরও কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। গত মঙ্গলবার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৮৯ টাকা করা হয়েছে। যদিও বাজারে এখনো ২০০ টাকা লিটারে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। একই সময়ে সয়াবিনের বিকল্প পামতেলের দাম বেড়েছে লিটারে ১২ টাকা। সবজির সরবরাহ কমায় প্রায় সবধরণের সবজি বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। বোরো মওসুম শুরু হলেও এখনো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল। তবে কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে আলু, ডিম ও মুরগিসহ কয়েকটি পণ্যের দাম।
এদিকে বাজারে নির্ধারিত নতুন দরের তেল না এলেও দাম বাড়ার ঘোষণায় খুচরা ব্যবসায়ী অনেকে বোতলজাত পুরনো সয়াবিন তেল নতুন দামেই বিক্রি করছেন। আবার কেউ কেউ বিক্রি করছেন বেশী দামে। ক্রেতারা বলছেন, বাজারে তদারকি না থাকায় ব্যসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করছেন। এখনই লাগাম টেনে ধরতে না পারলে বাজারে অস্থিরতা বাড়বে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আড়তে পেঁয়াজের সরবরাহ কমে যাওয়ায় হঠাৎ পাইকারিতে দাম বেড়েছে। শুক্রবার নগরীর কালিঘাট, বন্দরবাজার, আম্বরখানা, রিকাবীবাজার, সুবিদবাজার ও মদীনামার্কেটসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরায় প্রতি কেজি ভালো মানের পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। বাজারে নির্ধারিত নতুন দরের সয়াবিন তেল এখনো আসেনি। বাজারে বোতলজাত তেলের সংকট থাকায় অনেকে এই সুযোগ নিচ্ছেন। পুরনো বোতলজাত তেল বিক্রি করছেন নতুন দামে।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তথ্য বলছে, বৃহস্পতিবার খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়। গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৪৬ টাকায়। বন্দরবাজারের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা রশিদ বলেন, এখন পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ নেই। কৃষকরা পেঁয়াজ উৎপাদন করে বাজারে ছেড়ে দিয়েছেন। এই সুযোগে মুনাফালোভী কিছু বড় ব্যবসায়ীরা মজুদ বাড়িয়ে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছেন।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে সরবরাহ কমেছে ঠিকই, তবে দাম বাড়ার হার অস্বাভাবিক। সিন্ডিকেটও সক্রিয় রয়েছে, যারা কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে মুনাফা লুটছে। এদিকে পুরনো বোতলজাত তেল নতুন দামে বিক্রির অভিযোগের বিষয়ে একাধিক খুচরা ব্যবসায়ী বলছেন, দাম বাড়ানোর ঘোষণার কয়েকদিন আগে থেকে ভোজ্য তেল সরবরাহকারী কম্পানির ডিলাররা আগের দামে আর তাঁদের কমিশন দিচ্ছিলেন না। ডিলাররা কমিশন ছাড়াই বোতলের গায়ের দামেই খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে তেল বিক্রি করছেন। ফলে খুচরা ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে বোতলের গায়ের আগের দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন।
বাজারে নতুন করে পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা। রিকাবীবাজারে বাজার করতে এসে নেসারুল হক নামের এক ক্রেতা বলেন, নতুন করে কারসাজি শুরু। একদিকে কৃষক পেঁয়াজের দাম পাচ্ছেন না, অন্যদিকে ভোক্তাদের বাড়তি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। লাভ চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে। পাইকারি, মোকাম ও আড়তে এখন থেকে নজরদারি না বাড়ালে পেঁয়াজের দাম আরো বেড়ে যাবে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে এখন ঝিঙা ও লাউ দামি সবজি। ঝিঙা প্রতি কেজি মানভেদে ৯০ থেকে ১০০ টাকা, প্রতি পিস লাউ ৮০-১০০ টাকা। বেগুন মানভেদে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, পটল ৮০ থেকে ৯০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, সজিনা ১০০ থেকে ১২০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০-৮০ টাকা, টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বরবটি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, গাজর ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ থেকে ১০০ টাকা, পেঁপে ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও দেশি শসা ৬০-৮০ টাকা। প্রতি পিস চালকুমড়া ৬০ টাকা।
নগরীর সুবিদবাজারের শাহীন স্টোরের সত্তাধিকারী শাহীন আহমদ বলেন, দুয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে সয়াবিন তেল ও পেঁয়াজের দামই একটু বেশী। পাইকারী বাজারের দিকে নজর দিতে হবে। আমরা সামান্য লাভে পণ্য বিক্রি করি। পাইকারী বাজারে সংকট সৃষ্টি না হলে খুচরা বাজারের স্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকবে।
বন্দরবাজারের চাল ব্যবসায়ী আব্দুর রকিব বলেন, চালের দাম না কমলেও গত এক সপ্তাহে কিন্তু চালের দাম বাড়েনি। বোরো মওসুম শুরু হলেও এখনো বাজারে নতুন ধানের চাল আসা শুরু হয়নি। বাজারে নতুন ধানের চাল আসলে দাম কমতে পারে।
নিত্যপণ্যের মূলবৃদ্ধির ব্যাপারে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সিলেটের কৃষি বিপণন কর্মকর্তা আবু সালেহ মোঃ হুমায়ুন কবির দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, নতুন করে দাম বৃদ্ধির পর বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট থাকার কথা নয় এবং বেশী মূল্যে বিক্রির কোন সুযোগ নয়। এই ধরণের অভিযোগের সত্যতা পেলে আমরা কার্যকর ব্যবস্থা নিবো। কৃষকের পেঁয়াজ তোলা শেষ। বর্তমানে মজুত করা হচ্ছে। পেঁয়াজ সংরক্ষণে কিছু খরচ রয়েছে। তাই দাম বাড়তির দিকে। তবে সেটা আর বৃদ্ধির সুযোগ নেই। বাজারের উপর আমাদের মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে।