সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ভিসিকে প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের আল্টিমেটাম
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৯:৪১:৩৫ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : প্রতিষ্ঠার পর থেকে দুর্নীতি, অনিয়মিত ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগের শেষ নেই সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ১১২টি পদের বিপরীতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ২৫০ জনকে। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে চিহ্নিত দলীয় কর্মী ও মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে নিয়োগ হওয়া অবৈধ কর্মচারীদের নিয়োগ ইতোমধ্যে বাতিল হয়েছে।
সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরকে (ভিসি) ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন সেই সময়ের অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত বেতন-ভাতাবঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে নগরীর চৌহাট্টাস্থ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করে এ আল্টিমেটাম দেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫০ জন কর্মচারী থাকলেও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অর্ধশতাধিক।
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভিসি ডা: মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী ও প্রথম রেজিস্টার নাইমুল হক চৌধুরী ইউজিসি কর্তৃক অনুমোদিত ১১২ টি পোস্টের বিপরীতে দুর্নীতি ও নিয়োগ-বাণিজ্যের মাধ্যমে ২৫০ জন লোক নিয়োগ দেওয়ার কথা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে ইউজিসি ও মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি এ ব্যাপারে তদন্ত করে। তদন্তে দুর্নীতির সত্যতা পাওয়ায় ইউজিসি ও মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির সুপারিশের আলোকে সকল নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করা হয় এবং বেতন-ভাতা বন্ধ রাখা হয়।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত কলেজসমূহের পরীক্ষা গ্রহণ, ফলাফল প্রকাশ ছাত্র-ছাত্রীদের মার্কশিট, সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্ট বিতরণ ছাড়া অন্য তেমন কোন কাজ বর্তমানে নেই। পরীক্ষা দপ্তর ছাড়া অন্য কোন দপ্তরে তেমন কাজ নেই। এখানে যারা আন্দোলন করছেন তারা কোনদিন কোন কাজের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। যেখানে প্রতিষ্ঠানেরই কাজ নাই। সেখানে শুধু আসা-যাওয়া করার জন্য বেতন-ভাতা প্রদান ভিসির পক্ষে প্রায় অসম্ভব।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তারা আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে অনুমোদন বিহীন পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন। এই টাকা থেকে তৎকালিন ভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিছুদিন তাদেরকে মাসে বেতন দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। পরে সকলের চাকরি চলে যায়। সুত্রমতে এখন যারা আন্দোলন করছেন এরা প্রত্যেকে ৮-১০ লক্ষ টাকা বাণিজ্য করেছেন।
এদিকে শনিবার অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কাজী মাসুদ। তিনি বলেন- আমরা সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোপূর্বে এডহক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ, ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. এনায়েত হোসেনের আশ্বাসে বিনা বেতন-ভাতায় আমরা কাজ করে আসছি। সাবেক ভিসি একাধিকবার চাকরি স্থায়ী করার আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়া তিনি আমাদের আশ্বস্ত করতে ২০২৩ সালের ২৬ জুন শূণ্য পদের বিপরীতে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। এরপর ২০২৩ সালের ১৭ জুন আরেকটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। আজ অবধি সেই দুটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। এমতাবস্থায় আমরা চাকরি স্থায়ীকরণ ও বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে আন্দোলনে নামি। একপর্যায়ে সাবেক ভিসি ও রেজিষ্ট্রার দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে আমরা আন্দোলন স্থগিত করে কাজে যোগ দেই।
কাজী মাসুদ আরও বলেন- ২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর অনিয়মিত নিয়োগপ্রাপ্তদের চাকুরি নিয়মিতকরণের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য্য মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে দুটি পত্রিকায় কমিটির সভাপতি প্রফেসর ডা. নাজমুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। আবেদন জমা প্রদানের শেষ সময় ছিলো ১৯ ডিসেম্বর। যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে আমরা আবেদনপত্র জমা দেই। এরপর ২০ ডিসেম্বর ভিসি এনায়েত হোসেন পদত্যাগ পত্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেন। ২০২৫ সালের ৩১ জানুয়ারি ও ১ ফেব্রুয়ারী আমরা ভাইভা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। ভাইভা পরীক্ষার বোর্ড কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম ছাড়াও বিএমএন্ডডিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাইফুল ইসলাম, ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে কোষাধ্যক্ষ মো. শাহ আলম উপস্থিত ছিলেন ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়- চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি হিসেবে যোগ দেন অধ্যাপক ডা. ইসমাইল হোসেন পাটোয়ারি। তিনি যোগদানের পর গত ১৬ মার্চ উপাচার্যের কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম। অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সাথে চলতি বছরের ১৯ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত উমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরবে অবস্থান করবেন বলে লিখিত পত্রের মাধ্যমে জানানোর পরও তার অনুপস্থিতিতে ২৩ মার্চ বর্তমান ভিসি ১২তম সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করেন। তবে কমিটির সভাপতি ডা. নাজমুল ইসলাম উপস্থিত না হওয়ায় উক্ত রিপোর্টটির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি।
ভিসিকে ৪৮ ঘন্টার সময় বেঁধে দিয়ে কাজী মাসুদ বলেন- আমাদের দাবি আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করে উক্ত রিপোর্টের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুরোধ করছি । এছাড়া উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ভাইস চ্যান্সেলরকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে বিদ্যমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদানের অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় বিদ্যমান কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ দাবি আদায়ে ব্লকেড কর্মসূচীসহ অন্যান্য কঠোর কর্মসূচি প্রদান করতে বাধ্য থাকবেন।
সংবাদ সম্মেলন সিলেট মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন-ভাতাবঞ্চিত অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনের সময় কর্মচারী নামধারি ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের দোসর ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মীদের উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে।