‘একই ব্যক্তি সরকার ও দলের প্রধান নয়’ প্রস্তাবে দ্বিমত বিএনপির
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩০:১৭ অপরাহ্ন
রাষ্ট্রের সাংবিধানিক নাম পরিবর্তনেও দ্বিমত | কেয়ারটেকার সরকার রাখার পক্ষে মত
জালালাবাদ রিপোর্ট : একই ব্যক্তি সরকারপ্রধান, দলের প্রধান ও সংসদ নেতা হতে পারবেন না- ঐকমত্য কমিশনের এই প্রস্তাবের সঙ্গে একমত নয় বিএনপি। বিষয়টি উন্মুক্ত রাখতে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। একইসাথে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক নাম পরিবর্তনেও দ্বিমত জানিয়েছে দলটি। এছাড়া আস্থা বিল, অর্থবিল, জাতীয় নিরাপত্তা ও সংবিধান সংশ্লিষ্ট বিষয় ছাড়া সংসদ সদস্যরা (এমপি) স্বাধীনভাবে তাদের মতামত দিতে পারবে- এমন সুপারিশ করেছে বিএনপি।
রোবববার ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় দিনের মতো বৈঠক শেষে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি উন্মুক্ত রাখতে প্রস্তাব দিয়েছি।বিএনপি বলছে, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যমান ক্ষমতা বহাল রেখে রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতায়ন করার সুপারিশে একমত বিএনপি। দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়ার বিষয় বাধ্যতামূলক না রেখে উন্মুক্ত রাখতে সুপারিশ করা হয়েছে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, একই ব্যক্তি সরকার প্রধান ও দলীয় প্রধান হতে পারবে না- এমন চর্চা আমরা দেখি না। যুক্তরাজ্যেও আমরা দেখি, পার্টি প্রধানই সরকার প্রধান। এটি গণতান্ত্রিক চর্চা। যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রচলন হয় এবং নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রচলন করা যায়, তাহলে সেই ভোটে যারা ক্ষমতায় আসবে, মনে করতে হবে জনগণ তাদেরকে সেই ক্ষমতা দিয়েছে।
বিএনপি বলছে, ‘লিডার অব দ্য হাউজ কে হবে তা রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্ত নেবে। এ বিষয়েও কমিশনের সঙ্গে দ্বিমত রয়েছে তাদের। উচ্চকক্ষ ও নি¤œকক্ষ সদস্য সংখ্যা নিয়ে একমত বিএনপি, কিন্তু কোন প্রক্রিয়ায় তারা নির্বাচিত হবে তা নিয়ে আলোচনা চলমান আছে।
নতুন আইন প্রনয়ণ করে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স করার পক্ষে মত দিয়েছে বিএনপি। এনসিসি বিষয়ে একমত নয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে রাষ্ট্র পরিচালনা দায় হয়ে যাবে। কেয়ারটেকার ছাড়া নির্বাচন ফ্রি ফেয়ার হয় না, ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’র জন্যই দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত কেয়ার টেকার রাখা প্রয়োজন বলছে দলটি। সংসদে নারীর আসন ১০০ করার বিষয়ে একমত বিএনপি। তবে পরবর্তী সংসদের পর, অর্থাৎ ত্রয়োদশ সংসদে কীভাবে নারীরা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করবেন তা সংসদে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে বিএনপি।
এদিকে, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার প্রস্তাব করেছে বিএনপি। সেখানে ধর্মনিরপেক্ষ বা বহুত্ববাদ কোনোটাই নেই। তবে কমিশন তাদের প্রস্তাবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে থাকা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের কথা যুক্ত করতে বলেছেন। সেখানে একমত হয়েছে বিএনপি।
জনগণের মৌলিক অধিকার হিসেবে ইন্টারনেট প্রাপ্তির বিষয়ে বিএনপি একমত জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হয় রাষ্ট্রকে। মৌলিক অধিকার বাড়ানোর ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থার বিষয়টিও দেখতে হবে। তাই আমরা বলেছি, সংবিধানে অনেকগুলো বিষয় যুক্ত না করে, যা রাষ্ট্রের বাস্তবায়নের সক্ষমতা রয়েছে তাই করতে।এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বেশ কিছু বিষয়ে আমরা কাছাকাছি এসেছি। কিছু কিছু বিষয়ে তাদের সঙ্গে দ্বিমত জানিয়েছি। গণতন্ত্রে মত-দ্বিমত থাকাই স্বাভাবিক। কারণ আমরা বাকশালে বিশ্বাস করি না। যেখানে এমন কিছু করা হয়, যাতে সবাই একমত হতে হয়।
বিএনপি সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার প্রস্তাব করেছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে ধর্মনিরপেক্ষ বা বহুত্ববাদ কোনোটাই নেই। তবে, কমিশন তাদের প্রস্তাবে- স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রে থাকা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামজিক সুবিচারের কথা যুক্ত করতে বলেছেন। আমরা সেখানে একমত হয়েছি। নজরুল ইসলাম খান বলেন, সংবিধান জনগণের মৌলিক অধিকার হিসেবে ইন্টারনেট প্রাপ্তির বিষয়ে একমত বিএনপি। তবে, মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হয় রাষ্ট্রকে। মৌলিক অধিকারের বাড়ানোর ক্ষেত্র রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থার বিষয়টিও দেখতে হবে। তাই আমরা বলেছি, সংবিধানের অনেকগুলো বিষয় যুক্ত না করে যা রাষ্ট্র বাস্তবায়নের সক্ষমতা রয়েছে তাই করতে।
এর আগে সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে পাঁচটি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় বসে বিএনপি। আলোচনায় বিএনপির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়।
বিএনপির এই প্রতিনিধিদলের সদস্যরা হলেন- দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমদ, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাঈল জবিউল্লাহ, আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল ও সাবেক সচিব মনিরুজ্জামান খান।