সিলেটে বাংলাদেশের হতাশা, ৪ বছর পর জিম্বাবুয়ের জয়
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ৯:৫৮:১৩ অপরাহ্ন
স্পোর্টস ডেস্ক : জিম্বাবুয়ে সর্বশেষ টেস্ট জিতেছিল কবে? রেকর্ড ঘাটতে গিয়ে অনেকটা পেছনে যেতে হয়েছে। ২০২১ সালের মার্চে আবুধাবিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তারা সর্বশেষ টেস্ট জিতেছিল! এরপর কেটে গেছে ৪ বছর। এতদিন পর বাংলাদেশের মাটিতে, সিলেটের মাঠে এসেই তারা টেস্ট জয়ের স্বাদ পেল। বলতে গেলে ‘বন্ধুদের’ জয় উপহার দিল বাংলাদেশ। সিলেট টেস্ট চার দিনেই ৩ উইকেটে জিতে নিয়েছে জিম্বাবুয়ে। এর আগে ১০টি টেস্টে তারা জয়হীন ছিল, যার ৮টিতে পরাজয় এবং দুটি ড্র হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে জিম্বাবুয়ে টেস্ট খেলেছে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আফগানিস্তান আর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। এর মাঝে ২০২১ সালে হারারেতে বাংলাদেশের কাছে তারা ২২০ রানে হেরেছিল।
সেই জিম্বাবুয়ে এবার বাংলাদেশের মাটিতে এসে বাংলাদেশকেই হারিয়ে দিল! বরং বলা ভালো, বাংলাদেশ তাদের পুরনো বন্ধুদের জয় উপহার দিল। বাজে ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনীতে প্রথম ইনিংসে ১৯১ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫৫ রানে অল-আউট হয় স্বাগতিকরা। জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং যে খুব ভালো হয়েছে তা নয়- কিন্তু দিনশেষ জয়টা তারাই পেয়েছে। আর বাংলাদেশের হয়ে লড়াই করেছেন কেবল বোলাররাই।
দ্বিতীয় ইনিংসেও ৫ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সেই মিরাজকে রিভার্স সুইপে বাউন্ডারি মেরে জিম্বাবুয়েকে জিতিয়ে দেন ওয়েসলি মাধেভেরে। ২০২১ সালের পর এটিই জিম্বাবুয়ের প্রথম টেস্ট জয়।
বাংলাদেশের দেওয়া ১৭৪ রানের লক্ষ্যে জিম্বাবুয়ে ছুঁয়েছে ৭ উইকেট হারিয়ে। যা জিম্বাবুয়ের টেস্ট ইতিহাসে রেকর্ড রান তাড়া করে জয়। আগের রেকর্ডটা ১৬২। ১৯৯৮ সালে পেশোয়ার পাকিস্তানের দেওয়া ১৬২ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ৭ উইকেটে জিতেছিল দলটি।
চতুর্থ ইনিংস হলেও সিলেটের উইকেটে ১৭৪ রান ছোঁয়া খুব কঠিন কিছু ছিল না। সেটা টেস্টের চতুর্থ দিন হলেও। তবে জিম্বাবুয়ের এত রান করে জেতার অতীত রেকর্ড না থাকায় বাংলাদেশের অনেক সমর্থকই আশা খুঁজে পেয়েছিলেন।
কিন্তু ওপেনিং জুটিতে জিম্বাবুয়ে ৯৫ রান তুলে ফেলায় শেষদিকে বাংলাদেশ ভালো করলেও ম্যাচ জেতা সম্ভব হয়নি। এই ইনিংসেও ফিফটি পেয়েছেন জিম্বাবুয়ের ওপেনার ব্রায়ান বেনেট। আরেক ওপেনার বেন কারেন করেছেন ৪৪ রান। দুজনকেই ফিরিয়েছেন মিরাজ। ওপেনিং জুটিতে ভাঙার পর মিরাজ-তাইজুল নিয়মিত বিরতিতে উইকেট নিয়েছেন। তবে দলকে জয় এনে দিতে পারলেন না তাঁরা। টেস্ট ক্যারিয়ারে তৃতীয়বার ১০ উইকেট নেওয়াটাই হয়ে রইল মিরাজের সান্তনা। তবে হাতে আর কিছু রান বেশি থাকলে কী হতো কে জানে! দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের স্কোরে যে আরও কিছু রান যোগ হলো না, তার দায় ব্যাটসম্যানদের।
সিলেটে আজ বাংলাদেশ দিন শুরু করে অধিনায়ক নাজমুলের ভুলে। ব্লেসিং মুজারাবানির পাতা ফাঁদে পা দিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। চতুর্থ দিনের প্রথম বলটা ইয়র্কার দিয়ে নাজমুলকে অপ্রস্তুত করে ফেলেন মুজারাবানি। অপ্রস্তুত নাজমুলকে পরের বলটিতে মুজারাবানি দেন বাউন্সার। ব্যাস! উইকেটে এসেই পুল খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন নাজমুল। গতকাল ধৈর্যের পরীক্ষায় পাস করে ৬০ রানে অপরাজিত থাকা নাজমুলের ইনিংস শেষ তাতে।
বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংসের বাকি সময়েও ছিল ভুলের প্রাধান্য। মিরাজ এদিনও ছিলেন ব্যর্থ। এক চার ও এক ছক্কায় ইনিংস শুরু করা মিরাজ ফেরেন মুজারাবানির বলে গালিতে ক্যাচ দিয়ে।
ভুল খুঁজলে ফিফটি করা জাকের আলীর ব্যাটিংয়েও পাওয়া যাবে। ২১৩ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর যেভাবে বোলার হাসান মাহমুদকে ওভারের পর ওভার স্ট্রাইক দিয়েছেন, সেটাও দৃষ্টিকটুই লেগেছে। হ্যাঁ, হাসান ৫৮ বল খেলেছেন। জাকেরের সঙ্গে ৩৫ রানের জুটিতে তাঁর অবদান ছিল ১২ রানের। তবুও, হাসানের মতো টেলএন্ডারের ব্যাটসম্যানদের ভুল করার সম্ভাবনা বেশিই থাকে। সেটাই হয়েছে শেষ পর্যন্ত। ওয়েলিংটন মাসাকাদজার বলে ছক্কা মারতে গিয়েই ফিরেছেন তিনি। আরেক পেসার খালেদ আহমেদ ফিরেছেন প্রথম বলেই। তাতে ৭ উইকেটে ২৪৮ থেকে মুহূর্তেই ৯ উইকেটে ২৪৮ হয়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর বাংলাদেশ যোগ করতে পারে আর ৭ রান।
মরিয়া জাকের লিড বাড়াতে গিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হয়ে যান ব্যক্তিহত ৫৮ রানে। এ নিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম ৪ টেস্টেই ফিফটি পেয়েছেন জাকের। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এই কীর্তি গড়লেন উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। তবে এটি নিশ্চিত সান্তনা হতে পারছে না জাকেরের।
জাকেরকে ফিরিয়ে ইনিংসে ষষ্ঠ উইকেট পেয়ে যান জিম্বাবুইয়ান পেসার মুজারাবানি। টেস্ট ক্যারিয়ারে তৃতীয়বার ইনিংসে ৬ উইকেট পেলেন দীর্ঘদেহী এই পেসার। ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরাও হয়েছেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ : ১৯১ ও ২৫৫ (নাজমুল ৬০, জাকের ৫৮, মুমিনুল ৪৭, মাহমুদুল ৩৩; মুজারাবানি ৬/৭২, মাসাকাদজা ২/২০)। জিম্বাবুয়ে : ২৭৩ ও ৫০.১ ওভারে ১৭৪/৭ (বেনেট ৫৪, কারেন ৪৪, মাধেভেরে ১৯*; মিরাজ ৫/৫০, তাইজুল ২/৭০)।
ফল: জিম্বাবুয়ে ৩ উইকেটে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ : ব্লেসিং মুজারাবানি। সিরিজ: দুই ম্যাচের সিরিজে জিম্বাবুয়ে ১-০-তে এগিয়ে।