সিলেটে আতঙ্কের নাম বজ্রপাত
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ৩:০০:১৬ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: ঝড় বৃষ্টির মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সিলেট অঞ্চলে শুরু হয়েছে বজ্রপাত। প্রচ- তাপদাহের পর বৃষ্টি প্রশান্তি না এনে যেন বজ্রপাতের আতঙ্ক নিয়ে এসেছে। মঙ্গলবার একদিনেই বজ্রপাতে সিলেটে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে, সিলেটে তীব্র বজ্রপাতসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে আগেই জানিয়েছে আবহাওয়া অধিফতর ও বিশেষজ্ঞরা। কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ মঙ্গলবার ফেসবুকের ভেরিফায়েড আইডি থেকে দেয়া এক পোস্টে জানান, হুশিয়ার সাবধান সিলেট বিভাগের মানুষরা। ঠিক এই মুহূর্তে সিলেট বিভাগের উপর দিয়ে তীব্র বজ্রপাত সহ হালকা থেকে মাঝারি মানের বৃষ্টি অতিক্রম করছে। তাই সবাইকে ঘরে অবস্থান করার পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বজ্রপাতে সারাদেশে প্রতিবছর আড়াই থেকে তিনশ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এর অন্তত ৯৩ শতাংশই গ্রামাঞ্চলে হয় এবং ৮৬ শতাংশের হয় মৃত্যু উন্মুক্ত স্থানে। সারাদেশে বজ্রপাতের যে ১৫টি ‘হটস্পট’ চিহ্নিত করা হয়েছে তার মধ্যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হবিগঞ্জ, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জের মত জেলা রয়েছে; যেখানে বিস্তৃত ও উন্মুক্ত হাওরাঞ্চল রয়েছে। ফলে বজ্রপাতে এসব অঞ্চলে মৃত্যুর সংখ্যাও দেশের অন্য জেলার তুলনায় বেশি।
বিশ্লেষকদের মতে, শহরে বেশিরভাগ ভবনে বজ্র নিরোধক দ- থাকায় বজ্রপাতে মৃত্যু তেমন হয় না। কিন্তু গ্রামে তা না থাকা ও বড় গাছপালা কমে গিয়ে খোলা মাঠের কারণে সেখানে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। তাদের কথা দেশের হাওড় এলাকায় বজ্রপাতে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। কারণ সেখানকার বেশিরভাগ ফসলি জমিতে বড় কোনো গাছ নেই।
সিলেটে কি বজ্রপাত বেশি হয়?
বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন সময় বলেছেন, সিলেটে বজ্রপাত বেশি হয়, ওই ধারণার একটি ভিত্তি আছে। প্রাকৃতিকভাবেই বৃষ্টিপাতের সঙ্গে বজ্রপাতের একটা সম্পর্ক আছে। এছাড়া মানবসৃষ্ট পরিবেশ-বিধ্বংসী কর্মকা-ও বজ্রপাতের মত দুর্যোগ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল ইসলাম সিলেট অঞ্চলের বৃষ্টিপাতকে বলেছেন, ‘সাংঘার্ষিক বৃষ্টি’। অর্থাৎ সাগর থেকে মৌসুমি বায়ু এসে সীমান্তবর্তী মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়, তাতেই বৃষ্টি ঝরে।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও মেঘালয়ের পাহাড়ের পাদদেশে যে উষ্ণ পরিবেশ, এটার সঙ্গে সাগর থেকে বাতাসের আসা আর্দ্রতার উপাদানের সংঘর্ষ বাঁধে। পরিবেশের স্বাভাবিক যে প্রক্রিয়া সেটাতে বাঁধা দেয়। এতে সাংঘর্ষিক বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আর সাংঘর্ষিক বৃষ্টিপাত হলে বজ্রপাতের পরিমাণটা বেড়ে যায়। এছাড়া মানবসৃষ্ট কারণগুলোর মধ্যে ‘স্থানীয় ফোর্সিং’ এবং ‘গ্লোবাল ফোর্সিং’ মিলে অধিক বজ্রপাতকে প্রভাবিত করছে বলে ধারণা দেন অধ্যাপক আনোয়ার।
তিনি বলেন, গবেষণায় পেয়েছি, এক দশকে সিলেটে ভূমি ব্যবহারের আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। জলাশয়ের পরিমাণ কমে গেছে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। এটা স্থানীয় ফোর্সিং। যেমন- ২০১০ সালে সিলেটে মোট জমির ৩০ শতাংশ কৃষিতে ব্যবহার হত। এখন সেটার পরিমাণ বেড়ে ৭০ শতাংশ দাঁড়িয়েছে। খাদ্যের অভাব মেটানোর জন্য এটা ভালো। কিন্তু এসব হাওরগুলো তো ছিল পানির আধার। সেটা হারিয়ে গেছে। এটা তাপমাত্রার দ্রুত পরিবর্তন, আর্দ্রতার তারতম্য সৃষ্টি ও ভূতাত্ত্বিক বৈচিত্র্য সৃষ্টি করছে।
আর ‘গ্লোবাল ফোর্সিং’ হচ্ছে, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন, উষ্ণায়নের বিষয়গুলো। স্থানীয় ফোর্সিং’ বজ্রপাতের উপযুক্ত পরিস্থিতি তৈরি করে, আর ‘গ্লোবাল ফোর্সিং’ এই ধরনের ঘটনাকে বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে, বজ্রপাতের সংখ্যা এবং তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেটাই সিলেট অঞ্চলে প্রতিফলিত হচ্ছে।
অধ্যাপক আনোয়ার বলেন, বিস্ময়কর বিষয় হল- এ সময়ের মধ্যে আবার কিছু এলাকায় হাওরের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এটা সুখকর কোনো খবর নয়। বরং এটার কারণে পানির স্থিতাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তাতে সিলেটের অবশিষ্ট এলাকায় উষ্ণায়ন বেড়ে গেছে। এদিকে, বুধবার আবহাওয়া অফিসও পূর্বাভাস দিয়েছে। অধিধফতর বলছে, সিলেটসহ দেশের ছয় বিভাগে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া বিস্তার হতে পারে তাপপ্রবাহও। সহকারী আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা জানিয়েছেন, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সকাল পর্যন্ত দেওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায়, রংপুর, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগ এবং কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলের দু/এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো/বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এদিকে রাজশাহী, পাবনা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলাগুলোর ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপামাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু/এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো/বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে দিনের এবং রাতের তাপামাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
কাল শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো/বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপামাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো/বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং রাতের তাপামাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
রোববার (২৭ এপ্রিল) সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো/বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং রাতের তাপামাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। বর্ধিত পাঁচ দিনের আবহাওয়ায় তাপমাত্রা কমতে পারে।