সিলেট টু ইউরোপ কার্গো ফ্লাইট চালু কাল
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ৯:৩০:৪৭ অপরাহ্ন
উদ্বোধন করবেন বিমান ও পর্যটন উপদেষ্টা
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি ইউরোপে পণ্য পরিবহনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম আন্তর্জাতিক কার্গো ফ্লাইট চালু করতে যাচ্ছে সরকার। ভারত কর্তৃক বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায় রপ্তানি যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্য প্রথম উদ্যোগ হিসেবে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এই কার্গো সেবা চালু হচ্ছে।
আগামীকাল (রোববার) সরকারের বাণিজ্য এবং বেসামরিক বিমান ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন আনুষ্ঠানিকভাবে এই ফ্লাইট উদ্বোধন করবেন। এ দিন সন্ধ্যা ৭টায় ৬০ টন পণ্য নিয়ে সিলেট থেকে স্পেনের উদ্দেশে উড়াল দেবে বিমানের একটি কার্গো ফ্লাইট।
খুব শীঘ্রই কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকেও একই সুবিধা চালু করা হবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে। রোববার চালু হওয়া ওসমানী বিমানবন্দর ছেড়ে যাওয়া কার্গো ফ্লাইটটি সরাসরি ইউরোপে পণ্য পরিবহন করবে বলে জানিয়েছেন তারা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, সিলেট টু ইউরোপের এই ফ্লাইট- কেবল একটি নতুন আকাশপথের সূচনা নয় বরং একটি সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন। এ উদ্যোগ আঞ্চলিক উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, প্রবাসী সম্পর্ক এবং জাতীয় মর্যাদাকে একত্র করে একটি সমন্বিত সাফল্যের রূপ দেবে।
শুক্রবার সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, বহুল আকাঙ্খিত কার্গো ফ্লাইটটি চালুর ক্ষেত্রে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে কার্গো কমপ্লেক্স ও টার্মিনাল আগে থেকেই প্রস্তুত করা হয়েছে। রোববারের ফ্লাইটের জন্য বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারসহ সবধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রবেশ করছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নতুন যুগে। এক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিলেট অঞ্চলের শাক-সবজি, আনারস, লেবুজাতীয় ফল, সাতকরা, পান, হিমায়িত মাছ, সুগন্ধি চাল, বেতের আসবাবপত্র, নকশিকাঁথা এবং কুটির শিল্পের বিশাল বাজার রয়েছে ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে। গত ৬ বছর ধরে সিলেট থেকে কার্গো ফ্লাইট বন্ধ থাকায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সেসব পণ্য পাঠাতেন রপ্তানিকারকেরা। গত ৮ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায় বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বাড়তি খরচ হবে বলে জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা। ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল হওয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্য প্রথম উদ্যোগ হিসেবে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কার্গো সেবা চালুর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। প্রথম ফ্লাইটে কেবল গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি হলেও প্যাকেজিং হাউজ করা গেলে দেশের যে কোনো স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা সবজিসহ যে কোনো পণ্য সিলেটে নিয়ে সহজে কার্গো ফ্লাইটে পাঠাতে পারবেন। এতে খরচ ও ভোগান্তি দুটোই কমবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ফ্লাইটটি ইউরোপমুখী হওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিয়মাবলী (এসইসি-৩) পুরোপুরি মেনে চলা হচ্ছে। এজন্য প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেশন এবং প্রশিক্ষিত জনবল নিয়োগ করা হয়েছে। সিলেট বিমানবন্দরের বর্তমান অবকাঠামো ও সরঞ্জাম দিয়ে এই সেবা শুরু করা সম্ভব হলেও ভবিষ্যতে আরও উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
সিলেট বিমানবন্দরের কার্গো কমপ্লেক্সে ওয়ারহাউজ সুবিধা ও অন্যান্য অবকাঠামো নিয়ে সংশ্লিষ্টরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে তারা আরও বড় আকারের ওয়ারহাউজ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। বর্তমানে একটি ওয়ারহাউজ থাকলেও ভবিষ্যতে বর্ধিত চাহিদা মেটাতে প্রাইভেট সেক্টর থেকে আরও ওয়ারহাউজ নির্মাণের কাজ চলছে বলে জানা গেছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী ৬ মাসের মধ্যে এসব ওয়ারহাউজের কাজ শেষ হবে।
জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে সিলেট থেকে একটি ফ্লাইটের শিডিউল করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ বিমান মনে করছে, নিয়মিত কার্গো ফ্লাইট না থাকলে বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড সেবা নিয়মিত রাখা কঠিন হবে। তাই এই সেবাকে টেকসই করতে নিয়মিত ফ্লাইট চালুর উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।