আবার চালু হচ্ছে শমসেরনগরসহ পরিত্যক্ত ৭ বিমানবন্দর
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ৭:৪৮:২৩ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: পর্যটন খাতের সম্ভাবনা ও যাত্রী বাড়ানোর পাশাপাশি সড়ক ও রেলপথে চাপ কমানো এবং অর্থনীতি চাঙা করতে কয়েকটি পরিত্যক্ত বিমানবন্দর আবার চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এর মধ্যে বগুড়া বিমানবন্দরের কাজ চলমান রয়েছে। পাশাপাশি লালমনিরহাট ও শমসেরনগর বিমানবন্দর চালুর বিষয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করেছে কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল।
বর্তমানে দেশে সাতটি বিমানবন্দর পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। এগুলো হলো- বগুড়া, লালমনিরহাট, শমসেরনগর, ঈশ্বরদী, ঠাকুরগাঁও, কুমিল্লা ও তেজগাঁও বিমানবন্দর। সবার আগে চলতি বছর জুলাই মাসেই বগুড়া বিমানবন্দর চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া লালমনিরহাট বিমানবন্দর ও মৌলভীবাজারের শমসেরনগর বিমানবন্দর চালু করার জন্য বেবিচকের চার সদস্যের একটি টিম সরেজমিন পরিদর্শন করেছে। তারা বিমানবন্দর দুটি চালু করার বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবেন। তারপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে বেবিচক কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া অন্য বিমানবন্দরগুলো পরিদর্শন করে দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বগুড়া বিমানবন্দর আগামী জুলাই মাসে চালু করতে সব ধরনের আয়োজন চলছে। তবে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হতে ১ থেকে দেড় বছর সময় লাগতে পারে।
জানা গেছে, ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা জাপান, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার ও ইন্দোনেশিয়াকে দখল করার উদ্দেশে একসঙ্গে বড় যে দুটি বিমানবন্দর নির্মাণ করেছিল, তার একটি হচ্ছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে শমসেরনগর বিমানবন্দর। সেই সময় বিমানবন্দরটির নামকরণ করা হয় ‘দিলজান্দ বন্দর’। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘শমসেরনগর বিমানবন্দর’। অযতœ-অবহেলায় পড়ে থাকা বিমানবন্দরে ১৯৭৫ সালে বিমান বাহিনীর একটি ইউনিট খোলা হয়। সেখানে বিমান বাহিনীর তত্ত্বাবধানে একটি প্রশিক্ষণ স্কুল চালু করা হয়। সেই থেকে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান ও হেলিকপ্টার ওঠানামা করছে এখানে। ৬০০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৭৫ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট এ বিমানবন্দরের বড় একটি অংশ পতিত থাকায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন মেয়াদে স্থানীয়দের কাছে ইজারা দিয়ে যাচ্ছেন।
পার্শ্ববর্তী সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এখন যাত্রীর চাপও বেড়ে গেছে। ফলে বিমানবন্দরটি চালু হলে এ চাপ কমে আসবে। মৌলভীবাজার জেলাসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার মানুষ উপকৃত হবেন। প্রবাসী ও পর্যটকদের যোগাযোগ সহজ হবে।
বাংলাদেশের উত্তর জনপদের প্রান্তিক জেলা লালমনিরহাটে ব্রিটিশ শাসনকালে বাংলাদেশে নির্মিত ছয়টি বিমানবন্দরের অন্যতম বৃহত্তম বিমানবন্দরটি অবস্থিত। প্রাপ্ত তথ্যমতে, ১৯৩১ সালে নির্মিত ৪ কিলোমিটার রানওয়েবিশিষ্ট এই বিমানবন্দরটি দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানবন্দর হিসেবে পরিচিত। একটি বিমানবন্দরের উল্লেখযোগ্য অবকাঠামো যেমন চার কিলোমিটার রানওয়ে, বিশাল টারমাক, হ্যাঙ্গার, ট্যাক্সিওয়ে ইত্যাদি; এসব অবকাঠামো সংবলিত লালমনিরহাট বিমানবন্দরটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। সামান্য সংস্কার করা হলেই এটি ব্যবহারোপযোগী হয়ে উঠবে। এ বিমানবন্দর চালু করতে ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সবশেষ এই বিমানবন্দরটি ব্যবহৃত হয়েছে, যা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলসহ ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্য (সেভেন সিস্টার্স), নেপাল ও ভুটানে যোগাযোগের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু ছিল। স্বাধীনতা লাভের পর বিভিন্ন সময়ে বিমানবন্দরটি চালুর দাবি ওঠে স্থানীয়দের পক্ষ থেকে।
লালমনিরহাট জেলা বাংলাদেশের প্রান্তিক ও ভারতের সীমান্তবর্তী হওয়ায় এ জেলাসহ পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম, রংপুর জেলার কিছু অংশ, গাইবান্ধা জেলা ও নীলফামারী জেলার কিছু অংশের যোগাযোগব্যবস্থা বেশ অনুন্নত। এ কারণে এ অঞ্চলের দারিদ্র্যের হার সর্বোচ্চ। শিক্ষার হার, বিদেশে কর্মরত প্রবাসীর সংখ্যা, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শিল্প কারখানার সংখ্যার বিবেচনায় দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে এ এলাকা অনেক পিছিয়ে। কুড়িগ্রামের সোনাহাট স্থলবন্দর ও লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর চালু হলেও যোগাযোগব্যবস্থার কারণে এখানে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ব্যাপক সম্ভাবনা কাজে লাগানো যায়নি। সম্প্রতি কুড়িগ্রামে ভুটানের জন্য একটি আন্তর্জাতিক ইপিজেড স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরিত্যক্ত এ বিমানবন্দর চালু হলে উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে দরিদ্র জেলা লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামসহ উত্তরাঞ্চল হয়ে উঠবে আকর্ষণীয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক ও পর্যটনকেন্দ্র। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থানের বড় ক্ষেত্র তৈরি হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের ‘চিকেন’স নেক’-এর কাছাকাছি হওয়ায় লালমনিরহাট বিমানবন্দর চালু নিয়ে ভারতের আপত্তি থাকতে পারে। এ জন্যই হয়তো বিগত সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বর্তমান সরকার উদ্যোগ নেওয়ায় ভারত আপত্তি জানিয়েও সুবিধা করতে পারবে না। উপরন্তু বাংলাদেশ ভূ-রাজনীতিতে এগিয়ে থাকবে।
বিমানের সাবেক পরিচালনা পর্ষদ সদস্য ও অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, আমাদের দেখতে হবে এই বিমানবন্দরটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। বিমানবন্দরটি ব্যবহারে নেপাল ও ভুটানও প্রস্তাব দিয়েছে। চালু হলে বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী চারটি দেশ চীন, ভারত, নেপাল ও ভুটানের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে আঞ্চলিক হাব হিসেবে গড়ে উঠবে এই বিমানবন্দর।
এ বিষয়ে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেন, পরিত্যক্ত বিমানবন্দরগুলো পর্যায়ক্রমে সচল করা হবে। তবে অবকাঠামো নির্মাণ, সংস্কার ও আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি যেটার আগে শেষ হবে, সেটা আগে সচল হবে। সেই হিসেবে সবার আগে চালু হবে বগুড়া বিমানবন্দর।